খেলাধুলা

১২ মিনিটের ভিডিও বার্তায় যা বললেন তামিম 

বিশ্বকাপ দল থেকে বাদ পড়ার একদিন পর মুখ খুলেছেন সাবেক ওয়ানডে অধিনায়ক তামিম ইকবাল। তার দলে অন্তর্ভুক্তি নিয়ে গত দুই দিন ধরে চলা নানা বিতর্কের জবাব দিয়ে নিজের অবস্থান পরিস্কার করেছেন তিনি।

বুধবার (২৭ সেপ্টেম্বর) বিকেলে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ১২.০৯ মিনিটের এক ভিডিও বার্তা দিয়েছেন তামিম।  রাইজিংবিডির পাঠকদের জন্য সেই বার্তা হুবহু তুলে ধরা হলো।

‘শেষ দুই তিনে বিভিন্ন মিডিয়াতে যা লেখা হয়েছে আসলে যা ঘটেছে তা সম্পূর্ণ ভিন্ন। যে জিনিসটা ঘটেছে তার পুরোটাই আপনাদের স্টেপ বাই স্টেপ জানাই। কারণ আমার কাছে মনে হয়, এই জিনিসটা আমার ভক্ত এবং যারা ক্রিকেট ভক্ত তাদের জানার প্রয়োজন।’

‘বেসিক্যালি, আমি অবসর নিয়েছিলাম। এবং অবসর নেওয়ারও একটা কারণ ছিল। অবসর থেকে যখন আমি প্রধানমন্ত্রীর অনুরোধেরে ফেরত আসি। আমার হাতে দুই মাস ছিল। আমি ফেরার জন্য প্রচণ্ড পরিমাণে কষ্ট করি। আমি নিজেকে ফিট করার জন্য…যারা আমার সঙ্গে ছিলেন ফিজিও ট্রেনার তারা একমত হবেন এমন কোনো সেশন নেই, এরকম কোনো এক্সারসাইজ নেই যে আমি করিনি যেটা ওনারা চেয়েছেন নিজেকে ফিট করার জন্য।’ 

‘অবশ্যই যখন খেলা শুরু হলো, কাছাকাছি আসল। আমি মানসিক দিকে আমি আনন্দিত ছিলাম না…যেগুলো শেষ চার-পাঁচ মাসে হচ্ছিল সেগুলো নিজের লাইফের সঙ্গে রিলেট করে তাহলে বুঝতে পারবেন এগুলো আসলে সহজ জিনিস না। কিন্তু প্রথম ম্যাচে ৩০-৩৫ ওভার ফিল্ডিং করলাম কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত ব্যাটিংয়ের সুযোগ পাইনি। আমার জন্য বেস্ট পসিবল আউটকাম দরকার ছিল, যদিও আমরা ম্যাচটা হেরে গিয়েছিলাম। আমরা সব সময়ই বলি, রানের কোনো মূল্য নেই যদি আপনি ম্যাচ না জেতেন।  কিন্তু ওই মুহূর্তে আমার জন্য প্রয়োজন ছিল কিছু রান করা এবং ব্যাটিং কেমন হচ্ছে সেটা অনুভব করা। কিন্তু আমি ব্যাটিং করে খুব মজা পেয়েছিলাম। যদিও ৪৪ রান করেছি কিন্তু আমি আত্মবিশ্বাস ছিলাম এবং ভালো করছিলাম বড় কিছুর জন্য। কিন্তু সেটা কাজে আসেনি।’

‘ওই ম্যাচের পর আমি মানসিকভাবে বেশ ফুরফুরে ছিলাম। যা শেষ চার-পাঁচ মাস হয়েছে…আমি আবারও খেলতে মুখিয়ে ছিলাম। বিশ্বকাপের জন্য তাকিয়ে ছিলাম। ন্যাচারেলি আপনি যখন এতদিন পর ক্রিকেট খেলবেন এবং একটা ইনজুরি থেকে উঠে এসেছেন আপনার শরীরে অস্বস্তি থাকবে, ব্যথা থাকবেই। আমিও ভিন্ন কেউ নয়। আসলে প্রথম ম্যাচের পরও ব্যথা অনুভব করেছি। পরের ম্যাচেও হয়েছে। খেলা শেষ হওয়ার পর আমি আমার অবস্থান ফিজিওকে বলেছি আমি এখন এমন অনুভব করছি। ঠিক ওই মুহূর্তে তিন নির্বাচক ড্রেসিংরুমে আসেন।’ 

‘একটা বিষয় পরিস্কার করতে চাই, আমি কোনো সময় কোনো মুহূর্তে কাউকেই বলিনি যে আমি পাঁচটা ম্যাচের বেশি খেলতে পারব না। এই কথাটা কোনো সময় হয়নি। কালকে নান্নু ভাইও এই কথাটা পরিস্কার করেছেন। এই একটা মিথ্যা কথা, ভুল কথা কেমনে মিডিয়াকে ফিড করা হয়েছে। বা কে করছে। কিন্তু এই জিনিসটা সম্পূর্ণ মিথ্যা।’

‘যে জিনিসটা আমি নির্বাচকদের বলেছিলাম, দেখুন আমার শরীররা এরকমই থাকবে। আমার যে অবস্থা আছে আমার একটু ব্যথা থাকবেই। আপনারা যখন দল নির্বাচন করবেন তখন এই জিনিসটা মাথায় রেখেই করবেন। তারও একটা কারণ আছে, আপনারা যদি কিছুদিন আগের কথা চিন্তা করেন, যখন আমি অধিনায়ক ছিলাম, যে ম্যাচ খেলে আমি অবসর নিয়েছিলাম সেখানে একটা ইনজুরির শঙ্কা ছিল…সেখানে আমি কোচের সঙ্গে আমি কথা বলেছিলাম। ওখানে তিনজন উপস্থিতও ছিল। তারা তিনজন অ্যাগ্রিও করেছিল যে আমার প্রথম ম্যাচ খেলা উচিত হবে। তার আপনারা জানেন না, কেমন কেমন কথা বলা হয়েছে মিডিয়ায়। যদি ফিট না থাকে খেলা উচিত না। আমার কাছে খুব অবাক লেগেছে এই কারণে যে আমরা ওই রুমে সবাই এটা অ্যাগ্রি করেছিলাম। কেউ আরেটি বিতর্কের সৃষ্টি করতে চাননি। এই কারণেই আমি আমার তরফ থেকে পুরোপুরি সৎ থেকে তাদেরকে এটাই বলেছি, আপনারা জিনিসটা মাথায় রেখে আমাকে সিলেক্ট করিয়েন। কারণ হলো, আমি যদি বিশ্বকাপে যাই এবং নয় ম্যাচ খেলি কোনো সমস্যা ছাড়া…কারণ বিশ্বকাপের ফিক্সচার এমন ছিল যে ম্যাচের পর তিন চারদিনের পর গ্যাপ আছে। এপার্ট ফ্রম প্রথম দুইটি ম্যাচ। এটা নিয়ে যেন কোনো কিছু না হয়।’ 

‘এমনও হতে পারে যেকোনো সুস্থ মানুসের সঙ্গেও এমন হতে পারে যে কোনো দুই ম্যাচের পর ইনজুরিতে পড়ে গেল। তাকে দেশে পাঠিয়ে রিপ্লেসমেন্ট নিয়ে যেতে হলো। রিপ্লেসমেন্ট তো আপনি নিতে পারবেন যদি ইনজুর্ড হয়ে থাকে। এই কারণে এ জিনিসটা ক্লিয়ারলি বলি।’ 

‘বলার পর আমরা হোটেলে ফিরি। আমাকে পর্যবেক্ষণ করা হয়। আমার যে পেইগুলো ছিল সেগুলো পরের তিনও অ্যাসাইন করেন। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ যে ব্যাপারটা…ফিজিওর রিপোর্টে কি এসেছে। আমি কাল দেখেছি অনেকে বলেছে, ফিজিওর রিপোর্টে কি ছিল। ফিজিও রিপোর্ট, ফিজিও রিপোর্ট।’

‘ফিজিওর রিপোর্টে এক্সাটলি কি ছিল সেটা আমি শেয়ার করি।  আর কেউ যদি জিনিসটার জন্য চ্যালেঞ্জড করতে চান তাহলে মোস্ট ওয়েলকাম। ফিজিওর রিপোর্টে যেটা ছিল, আমার কন্ডিশনটা বলা হয়েছিল। প্রথম ম্যাচের পর এমন পেইন হয়েছিল। দ্বিতীয় ম্যাচের পর এমন পেইন হয়েছে। আজকের দিনের হিসেবে হি ইজ অ্যাভেইলেভেল ফর সিলেকশন ফর দ্য টোয়েন্টি সিক্সথ (২৬ তারিখ) গেম। কিন্তু মেডিকেল বিভাগ মনে করে যদি আমি বিশ্রাম নেই ২৬ তারিখে, কারণ ২৭ তারিখ আমাদের ট্রাভেলিং ডে। ২৯ তারিখ আমাদের অনুশীলন ম্যাচ এরপর ১-২ তারিখে আরেকটি প্রস্তুতি ম্যাচ। আমি যদি এখন বিশ্রাম নেই এবং দ্বিতীয় প্রস্তুতি ম্যাচটা খেলি বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচের আগে তাহলে আমার হাতে পর্যাপ্ত সময় থাকবে। এই দুই সপ্তাহে আমার রিহ্যাব হয়ে যাবে। ওভারঅল দশ সপ্তাহের রিহ্যাব হয়ে যাবে। তাহলে আমি প্রথম ম্যাচ খেলার জন্য খুব ভালো অবস্থায় চলে যাবো।’ 

‘এটা রিপোর্টে ছিল। কোনো জায়গায় বলা হয়নি, পাঁচ ম্যাচ, দুই ম্যাচ। এই ইনজুরি ওই ইনজুরি বা খেলতে পারব না। এসব কিছু বলা হয়নি। হ্যাঁ আমার বডিতে পেইন ছিল অস্বীকার করছি না। আশা করি প্রেস কনফারেন্সেও বলেছি। বেসিক্যালি এই জিনিসটাই হয়েছে।’

‘তারপর যে ঘটনাটা হয়, আমার কাছে মনে হয় মিডিয়াতে যে ইনজুরি বা পাঁচ ম্যাচ…আমি বিশ্বকাপে না যাওয়ার জন্য এটার কোনো বড় অবদান ছিল। কারণ আমি যেহেতু ইনজুরড হয়নি এখনো, ব্যথা থাকতে পারে। কিন্তু ইনজুরড হইনি এখনো। তার এক দুইদিন পর আমাকে বোর্ডের টপ লেভেল থেকে একজন ফোন করলেন। উনি বেশ ইনভলভ আমাদের ক্রিকেটের সাথে। উনি আমাকে ফোন করে বললেন যে, তুমি তো বিশ্বকাপে যাবা, তোমাকে তো ম্যানেজ করে খেলাতে হবে। তুমি এক কাজ করো, তুমি প্রথম ম্যাচ খেলবা না আফগানিস্তানের সাথে।’

‘আমি বললাম, ভাই এটা তো এখনো ১২-১৩ দিনের কথা। ১২-১৩ দিনে তো আমি আরো ভালো কন্ডিশনে থাকবো। কি কারণে খেলবে না। তখন বললো যে, তুমি যদি খেলো আমরা এরকম একটা পরিকল্পনা করছি, আলোচনা করছি তুমি যদি খেলো তোমাকে আমরা নিচে ব্যাটিং করাব। ন্যাচারেলি ভাই আপনারা একটা জিনিস মনে রাখতে হবে আমি কোন মাইন্ডসেট থেকে আসছিলাম। হঠাৎ করে একটা ভালো ইনিংস খেলেছি, আমি হ্যাপি ছিলাম। হঠাৎ করে আবার এসব কথা। আমার পক্ষে নেওয়া আসলে সম্ভব না। আমি সতের বছর ধরে এক পজিশনে ব্যাটিং করেছি। জীবনে কোনোদিন তিন চারে ব্যাটিং-ই করিনি। যদি এরকম হতো আমি তিনে ব্যার্টিং করে চারে ব্যাটিং করি তারপরে যদি উপরে-নিচে করা হয় দ্যাট ক্যান বি অ্যাডজস্টাবেল। কিন্তু আমার তিন, চার ও পাঁচে ব্যাটিং করার কোনো অভিজ্ঞতা নেই।’ 

‘ন্যাচারেলি আমি কথাটা কোনোভাবেই ভালোভাবে নেইনি। আমি উত্তেজিতও হয়ে গিয়েছিলাম। কারণ আমার এটা পছন্দ হয়নি। আমার কাছে মনে হচ্ছে আমাকে জোর করে করে অনেক জায়গায় বাধা দেওয়া হচ্ছে। ইচ্ছা করে করে। এটা ঠিক হলো, আচ্ছা এখন আরেকটা নতুন জিনিস বলি। যেটা আমি অনুভব করেছি। তখন আমি বললাম যে দেখেন, আপনারা একটা জিনিস করেন আপনাদের যদি এরকম চিন্তা থাকে তাহলে আমাকে পাঠায়েন না। আমি এই নোংরামির মধ্যে থাকতে চাই না। আপনারা আমাকে প্রতিদিন একটা নতুন জিনিস ফেস করাবেন। এখানে আমি থাকতে চাই না।’ 

‘তারপরও ইনডিভিজুয়ালের সঙ্গে আমার অনেক কথা বার্তা হয় যেটা আমার কাছে মনে হয় এই প্ল্যাটফর্মে বলা উচিত না। আমার আর ওনার মধ্যে থাক। আমি এই জিনিসটা স্ট্রংলি বলেছি, এই নোংরামি যদি হয় আমি এখানে থাকতে চাই না। দরকার হলে আমাকে নির্বাচন করবেন না। আমি এগুলো মানতে পারব না।’

‘আমি ব্যক্তিগতভাবে যেই জিনিসটা ফিল করেছি। মিডিয়াকে নিউজগুলো ফিড করা এগুলো ঠিক হয়েছে কিনা। আমাদের অনেকেরই অভ্যাস আছে একটা বড় জিনিসকে ঢাকার জন্য আরেকটা জিনিস ফিড করে দেওয়া। সে পাঁচ ম্যাচ খেলবে। তাকে কিভাবে সিলেক্ট করবো। আমি মনে এরকম কোনো কথা হয়নি, ওই দিন নির্বাচকরাও ছিলেন। ফিজিও, ট্রেনার ছিলেন। সবাই ছিল ওখানে। আমি আপনাদের সঙ্গে ক্লিয়ার করেছি। ওভারঅল আমার কাছে মনে হয় যে, আপনার যদি আসলেও আমাকে চাইতেন তাহলে আমাকে মানসিকভাবে চাঙা ও ফুরফুরে অনুভব করাতেন। কারণ আমি তিন-চার মাস পর খারাপ সময় কাটিয়ে ফিরছি। আমার জন্য খুব কঠিন ছিল তিন-চার মাস। এসে একেকটা নতুন নতুন জিনিস বলা..হয়তো বা সাথে আমি এটাও বলি, এই কথাটাও যদি আমাকে ভিন্নভাবে উপস্থাপন করা হতো, মেবি আমি জিনিসটাকে অন্যভাবে রিঅ্যাক্ট করতাম, মেবি আমি জিনিসটা মেনে নিতাম হয়তো। কিন্তু হঠাৎ করে কোনো কারণ ছাড়া ফোন করে যদি বলে যে তুমি খেলবা না, আবার যদি খেলো আলোচনা হচ্ছে নিচে ব্যাটিং করাবে। আমি ঠিক নিশ্চিত নই এটা কতটুকু ফেয়ার।’

‘এটাই আসলে হয়েছে। এরচেয়ে বেশি কিছু আমার বলার নেই। আমি এতটুকু বলবো। আমি আমার তরফ থেকে যতটুকু, আমার কাছে যেই জিনিসগুলো আমি ফিল করেছি, বা আমার সঙ্গে ঘটেছে সেগুলো আপনাদের সঙ্গে শেয়ার করা। অ্যান্ড অব দ্য ডে আমি এটাই চাইবো, বিশ্বকাপে যে ১৫ জন গেছে তাদের জন্য শুভকামনা। আশা করছি তারা যতটুকু সম্ভব বাংলাদেশের জন্য সাফল্য নিয়ে আসবে। সাথে অনেক কিছু ঘটেছে সেগুলো আপনারা দেখছেন। এগুলো একটা ঘটনা অনাকাঙ্খিত হতে পারে। দুইটা ঘটনা ভুল বোঝাবুঝি হতে পারে। কিন্তু একজনের সঙ্গে শেষ তিন-চার মাসে সাত-আটটা ঘটনা যদি হয় তাহলে এটা উদ্দেশ্যমূলক হয়। এটা আমি অনুভব করি। এর চেয়ে আমার বেশি কিছু বলার নেই। আপনারা ভালো থাকবেন। আমার জন্য দোয়া করবেন। একটা অনুরোধ করবো, সবাই আমাকে মনে রাখবেন। ভুলে যাবেন না। ভালো থাকবেন। থ্যাংক ইউ। ’