ধারাভাষ্যে রাসেল আরনোল্ড বললেন, ‘আমার জীবনে প্রথমবার এমন কিছু দেখছি।’ শুধু আরনোল্ডই নন, ক্রিকেট বিশ্ব প্রথমবার এমন কিছু দেখলো। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে প্রথম টাইমড আউট দেখলো ক্রিকেট বিশ্ব। বাংলাদেশের আবেদনে সাড়া দিয়ে অ্যাঞ্জেলো ম্যাথুজকে টাইমড আউট দিলেন আম্পায়াররা।
দিল্লির অরুণ জেটলি ক্রিকেট স্টেডিয়ামে বিশ্বকাপের ৩৮তম ম্যাচ অন্যরকম এক ঘটনার সাক্ষী হলো। যেখানে বাংলাদেশ ও শ্রীলঙ্কা মুখোমুখি হয়েছে কেবল নিয়মরক্ষার ম্যাচে। কারণ, দুই দল এরই মধ্যে সেমিফাইনালের লড়াই থেকে ছিটকে গেছে। চ্যাম্পিয়নস ট্রফির টিকিট নিশ্চিতে কেবল দুই দল লড়াইয়ে বেশ মনোযোগী।
নিরুত্তাপ ম্যাচে উত্তাপ ছড়ালো শ্রীলঙ্কার সাবেক অধিনায়ক ম্যাথুজের আউটকে কেন্দ্র করে। কোনো বল না খেলেই টাইমড আউট হয়েছেন তিনি। সাকিবের বলে সামারাবিক্রমা ৩টা ৪৯ মিনিটে আউট হয়েছিলেন। পরের ২ মিনিটে নতুন ব্যাটসম্যান ম্যাথুজকে পরের বল খেলতে হতো। কিন্তু হেলমেটের উটকো ঝামেলায় খেলতে পারেননি। বাংলাদেশ সেই সুযোগটি নিয়ে ম্যাথুজের আউটের আবেদন করেন। তাতেই মেলে সাফল্য।
ক্রিকেটীয় আইনে আম্পায়াররা ম্যাথুজকে আউট দিলেও, বাংলাদেশের আবেদন এবং আম্পায়ারের ভূমিকা নিয়ে প্রবল সমালোচনা হচ্ছে। কেননা ম্যাথুজ সময় মতোই ক্রিজে পৌঁছে গিয়েছিলেন। ব্যাটিংয়ের জন্য প্রস্তুতও ছিলেন। ক্রিজে প্রণাম করে বল খেলার জন্য প্রস্তুত ছিলেন। কিন্তু মাথার হেলমেট ঠিক করতে গিয়ে স্ট্রিপে টান দিলে তা ছিঁড়ে যায়। ম্যাথুজ নতুন হেলমেট আনার জন্য ড্রেসিংরুমে ইঙ্গিত করেন।
বাংলাদেশের অধিনায়ক সাকিব সময় নষ্টের জন্য ম্যাথুউজের আউটের আবেদন করেন। পাশেই ছিলেন সহ-অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত। শুরুতে আম্পায়ার ইরাসমাসের সঙ্গে সাকিবের আলোচনা দেখে মনে হচ্ছিল, টাইমড আউট নিয়ে দুজন কেবল কথা বলছেন। কিন্তু সাকিবের সিরিয়াস আবেদনে ইরাসমাস সঙ্গে থাকা আরেক আম্পায়ার রিচার্ড ইলিংওয়ার্থের সঙ্গে কথা বলতে এগিয়ে যান। এ সময়ে বলও দিয়ে দেন আম্পায়ারকে।
তাতেই বোঝা যাচ্ছিল, ম্যাথুজের আউট নিয়ে বাংলাদেশ সিরিয়াস। নতুন হেলমেট নিয়ে ম্যাথুজ ব্যাটিংয়ের জন্য প্রস্তুত হলেও আম্পায়ার তাকে আউটের সিদ্ধান্ত জানান। তখন ম্যাথুজ বাংলাদেশের অধিনায়কের সঙ্গে কথা বলতে এগিয়ে যান। নিজের প্রতিক্রিয়াও দেখান। কিন্তু সাকিব হাসি দিয়ে তাকে ক্রিকেটের নিয়মের কথা মনে করিয়ে দেন। তাদের আলোচনায় বোঝা যাচ্ছিল, হেলমেটের স্ট্রিপ ছিঁড়ে যাওয়ার দুর্ঘটনার কথাই বলা হচ্ছে। কিন্তু বাংলাদেশ নিজেদের আবেদনে ছিল স্থির। ক্রিকেটের নিয়মে এই আউট থাকায় ম্যাথুজ ‘টাইমড আউট’ হন।
টাইমড আউট নিয়ে এমসিসি’র আইন যা বলছে, ‘উইকেটের পতন বা একজন ব্যাটসম্যান রিটায়ার্ড হওয়ার পর, নতুন ব্যাটসম্যানকে, সময় না বলা পর্যন্ত, বল খেলার জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে। বা অন্য ব্যাটসম্যানকে আউট হওয়ার ২ মিনিটের মধ্যে পরবর্তী বল গ্রহণের জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে। এই প্রয়োজনীয়তা পূরণ না হলে, নতুন ব্যাটসম্যান আউট হবেন, টাইমড আউট।’
ম্যাথুজ মাঠ থেকে বের হওয়ার সময় তার চোখে-মুখে ক্ষোভ প্রকাশ পায়। ড্রেসিংরুমের কাছে গিয়ে হেলমেট ছুঁড়ে মারেন। তাকে সান্ত্বনা দিতে এগিয়ে আসেন কোচ সিলভারউড। সেখানে হাত নাড়িয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করতে থাকেন। ড্রেসিংরুম থেকে বেরিয়ে নিচে নেমে আসেন অধিনায়ক কুশল মেন্ডিস।
মেন্ডিসকে দেখা যায় বাংলাদেশের কোচ চন্ডিকা হাথুরুসিংহের সঙ্গেও কথা বলতে। সেখানে চতুর্থ আম্পায়ার তাদের আলোচনায় যোগ দেন। তবে এই আলোচনায় কারও কিছু করার আছে সামান্য। সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশ ও শ্রীলঙ্কার মুখোমুখি লড়াই যে উন্মাদনা ছড়ায়, রোমাঞ্চ তৈরি হয়, ম্যাথুজের টাইমড আউট তা ভিন্ন মাত্রায় নিয়ে গেল।