বিশ্বকাপ খেলতে যাওয়ার সময় এক কথা। বিশ্বকাপের মাঝপথে আরেক কথা। অধিনায়ক সাকিব আল হাসানের এমন পরিবর্তনে রীতিমতো বিরক্ত বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)।
ভারতে বিশ্বকাপ খেলতে যাওয়ার আগে সেমিফাইনাল খেলার কথা বলেছিলেন অধিনায়ক। শুধু তা-ই নয়, বিশ্বকাপ জেতার স্বপ্নও দেখিয়েছিলেন। বলেছেন, ‘আমরা যে রকম দল তাতে সেমিফাইনাল খেলা উচিত। ভালো খেললে ফাইনালও সম্ভব।’
শুধু তাই নয়, লিটন ও শান্ত বিশ্বকাপের টপ পারফর্মার হবে বলে বিশ্বাস ছিল তার।
অথচ বিশ্বকাপ মঞ্চে টানা ব্যর্থতার পর সুর পাল্টে গেল সাকিবের। অধিনায়ক প্রস্তুতির ঘাটতির কথা বলছেন, ‘আমার মনে হচ্ছে প্রস্তুতি ঠিকঠাক হয়নি।’
শুধু সাকিবই নয়, কোচ চণ্ডিকা হাথুরুসিংহে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ম্যাচের আগের দিন বলেছিলেন, ‘সাত মাস যথেষ্ট সময় নয় প্রস্তুতি ও পরিকল্পনা নেওয়ার। বিশ্বকাপের পর শুরু হবে আসল কাজ।’
বিশ্বকাপের ভরাডুবির পর অধিনায়ক ও কোচের ‘অজুহাত’ আমলেই নিচ্ছে না বোর্ড। ক্রিকেট পরিচালনা বিভাগের চেয়ারম্যান জালাল ইউনুস সরাসরি বলেছেন, ‘সাকিবের আগের স্টেটমেন্ট কি ছিল? সেমিফাইনাল খেলতে চায় বা বিশ্বকাপ জেতার মতো দল, এসব তো বলেছিল…।’
বিশ্বকাপের পর কোচ ও অধিনায়কের কথায় যে অসন্তোষ রয়েছে বোর্ডের তা জালাল ইউনুসের কথায় স্পষ্ট, ‘যে যতই বলুক, আমরা কোনো কিছু দিতে বাদ রাখিনি। সব ধরনের সাপোর্ট, লজিস্টিক সাপোর্ট, কোচদের যত ধরনের চাহিদা ছিল, সব পূরণ করেছি। এখন যে যেভাবেই বলুক যে প্রস্তুতি ছিল না বা এটা-ওটা ছিল না, আমি তাতে একমত নই। কোনোমতেই একমত নই।’
জাতীয় দলের সব চাহিদা পূরণের কথাও বললেন জালাল ইউনুস, ‘টিম ম্যানেজমেন্ট যা চেয়েছে, আমরা পূরণ করেছি। মানসিক প্রস্তুতির জন্য বিশেষজ্ঞ আনা, শারীরিক প্রস্তুতির জন্য জিপিএস ভেস্ট আনা, যা কিছু তারা চেয়েছে, সব দিয়েছি। এখন অন্য কিছু বললে তো হবে না।’
শুধু তাই নয়, খেলোয়াড়দের দেশের বাইরে খেলতে অনুমতি দিয়ে তাদের এক্সপোজার ও চাঙ্গা রাখতে সব পরিকল্পনাই করেছে বিসিবি, ‘সবাই খেলার মধ্যেই ছিল। এমনকি কোচদের প্রেসক্রিপশন অনুযায়ীই আমরা ক্রিকেটারদের খুব বেশি ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগে খেলতে দিতাম না। কিন্তু বিশ্বকাপের আগে বিদেশের লিগে এক্সপোজারের জন্যই আমরা সবাইকে অনুমতি দিয়েছি, যে যেভাবে চেয়েছে। ওরা কানাডায় খেলেছে, শ্রীলঙ্কায় খেলেছে… যারা চেয়েছে, সবাইকেই দিয়েছি যাতে এই অভিজ্ঞতা তারা কাজে লাগাতে পারে।’
নয় ম্যাচে সাত হার। বিশ্বকাপের হারগুলো কাঁটার মতো বিঁধছে বোর্ড কর্তাদের। প্রত্যাশার কাছাকাছিও যেতে না পারায় বোর্ড যারপরনাই হতাশ, ‘যেভাবে আমরা নরম্যালি এগোচ্ছিলাম, সেসব বাধাগ্রস্থ তো হয়েছেই। এগুলো কাম্য ছিল না। প্রত্যাশিত ছিল না। সবাই যেরকম অনুভব করছে, আমাদেরও তেমনই লাগছে। আমরা কেউ তো খুব শান্তিতে নেই। সবারই হতাশা আছে। সেমিফাইনালের লক্ষ্য পূরণ না হলেও অন্তত ৪-৫টি ম্যাচ তো জিততে পারতাম। পাঁচ-ছয়ে থাকতে পারতাম। অন্তত আরও দুটি ম্যাচ জিততে পারতাম।’
কলকাতায় নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে হারটা বেশি পোড়াচ্ছে বোর্ডকে, ‘বিশেষ করে, নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে ম্যাচ অনেক শকিং ছিল। যতই ক্রিকেটীয় অনিশ্চয়তার কথা হোক, কিন্তু ওদের থেকে আমরা অনেক ভালো দল। সেখানে যেভাবে হেরেছে, এটা মেনে নেওয়া কঠিন।’
বিশ্বকাপের পর একদিনও অধিনায়কত্ব না করার কথা সাকিব দেশ থেকে বলে গিয়েছিলেন। ফলে নতুন ওয়ানডে অধিনায়ক খোঁজার কাজটাও করতে হচ্ছে বোর্ডের, ‘নতুন অধিনায়ক ঠিক তো করতে হবেই। সময় আছে, আমরা তাড়াতাড়ি করে ফেলব।’