খেলাধুলা

খরুচে বোলিংয়ে পুড়লো কপাল 

ছোট-ছোট জুটি গড়ে ভালোভাবেই এগোচ্ছিল বাংলাদেশ। পাঁচ উইকেট পতনের পর আফিফ হোসেন-তাওহীদ হৃদয়ের আগ্রাসী ব্যাটিং দেখাচ্ছিল সম্ভাবনা। পরপর দুই ওভারে দুইজন ফেরায় ঘটে আশার সলিল সমাধি। শেষ দিকে মেহেদী হাসান মিরাজের ক্যামিওতে শুধু হারের ব্যবধানটাই কমেছে। 

ডানেডিনে শরিফুল ইসলামের দারুণ শুরুর পর দফায় দফায় বৃষ্টির বাধায় বাংলাদেশের কপাল পুড়ে খরুচে বোলিংয়ে। রোববার (১৭ ডিসেম্বর) ভোরে টস হেরে ব্যাটিং করতে নেমে ৩০ ওভারে ৭ উইকেটে ২৩৯ রান করে নিউ জিল্যান্ড। বৃষ্টি আইনে বাংলাদেশের সামনে লক্ষ্য দাঁড়ায় ২৪৫। তাড়া করতে নেমে ৯ উইকেটে ২০০ রানে থামে লাল সবুজের দল। হার দিয়ে সিরিজ শুরু হলো সফরকারীদের।

সৌম্য সরকারের শূন্যতে বাংলাদেশের ব্যাটিং ইনিংস শুরু হলেও দ্রুত সামলে পাল্টা আক্রমণে যান এনামুল হক বিজয়-নাজমুল হোসেন শান্ত। দুজনের ৩৬ বলে ৪৬ রানের জুটি ভাঙে শান্তর আউটে। ১৩ বলে ১৫ রান করেন বাংলাদেশ অধিনায়ক। ক্রিজে এসে এনামুলের সঙ্গী হন আরেক উইকেটরক্ষক ব্যাটার লিটন দাস। 

থিতু হওয়া এনামুলের সঙ্গে লিটনকেও দেখাচ্ছিল সাবলীল। দুজনে ২৮ বলে ৩৩ রান যোগ করে এগোচ্ছিলেন। ৪৩ রানে এনামুলের আউটে ঘটে ছন্দপতন। তার আউটের পরই লিটন ও নতুন ব্যাটার মুশফিকুর রহিমের আউটে বিপাকে পড়ে বাংলাদেশ। লিটন ২২ ও মুশফিক ৪ রানে ফেরেন। 

দুজনের আউট যেন শাপে বর হয় হয়ে আসে বাংলাদেশ শিবিরের জন্য। দুই তরুণ আফিফ-হৃদয় খেলছিলেন দুর্দান্ত। প্রায় প্রতি ওভারেই আসছিল বাউন্ডারি। মাত্র ৩১ বলে ৫০ রানের জুটি পূর্ণ করেন দুজনে। কিন্তু সোধীকে ছক্কা মারতে গিয়ে হৃদয়ের আউটে জয়ের আশা নিভে যায়। হৃদয় ২৭ বলে ৩৩ রান করেন। হৃদয়ের ধাক্কা সামলে না উঠতেই ফেরেন আফিফও। তার ব্যাট থেকে আসে ২৮ বলে ৩৮ রান। 

এই দুজন ফেরার পর ২১ বলে ২৮ রান করে হারের ব্যবধান কমান মিরাজ। তিনি শেষ পর্যন্ত অপরাজিত থাকেন। ইনিংসের শেষ বলে বোল্ড হন হাসান মাহমুদ। কিউইদের হয়ে ২ উইকেট নেন অ্যাডাম মিলনে, ইশ সোধী ও জস ক্লার্কসন। 

এর আগে নির্ধারিত সময়ে টস হলেও বৃষ্টির বাগড়ায় ম্যাচ শুরু হতে হয় বিলম্ব। ওভার কমে ম্যাচ শুরু হলেও দফায় দফায় সেই বৃষ্টি বাধা হয়ে দাঁড়ায়। ওভার কমে খেলা এসে দাঁড়ায় ৩০ ওভারে। বারবার খেলা বন্ধ হলেও নিউ জিল্যান্ডের রানের চাকার গতি যেন পাল্লা দিয়ে আরও বেড়েছে। 

ঝড়ো ব্যাটিংয়ে উইল ইয়ংয়ের সেঞ্চুরি আর টম লাথামের নাইন্টিনে রানের পাহাড় গড়েই থেমেছে স্বাগতিক শিবির। সর্বোচ্চ ১০৫ রান করে দলকে বড় সংগ্রহ এনে দেন ইয়ং। প্রথম ওভারেই ২ উইকেট হারানোর পর ইয়ং আর টম লাথামের জুটি বাংলাদেশকে ব্যাকফুটে ঠেলে দেয়। লাথাম ৭৭ বলে ৯২ রান করে ফেরেন সাজঘরে। মাত্র ৮ রানের জন্য পাননি সেঞ্চুরির দেখা। 

লাথাম তিন অঙ্কের ম্যাজিক ফিগার স্পর্শ না করতে পারলেও ইয়ং ঠিকই ক্যারিয়ারের তৃতীয় শতক হাঁকিয়ে প্যাভিলিয়নে ফেরেন। দুজনের অনবদ্য জুটি থেকে আসে ১৪৫ বলে ১৭২ রান। শুরুতে ধীরে খেলে থিতু হন ইয়ং-লাথাম। এরপর ম্যাচের আয়ূ কমার সঙ্গে সঙ্গে দুজনের ব্যাটে যেন ঝড় ওঠে। লাথাম কৃতিত্ব দিতে পারেন তানজীম হাসান সাকিবকে। ১৮ রানে স্লিপে তার ক্যাচ ফেলেন এই পেসার। 

অথচ বাংলাদেশের শুরুটা হয়েছে কী দুর্দান্ত। প্রথম ওভারেই নেই নিউ জিল্যান্ডের ২ উইকেট। এমন শুরুর পরও ম্যাচের নাটাই নিজেদের হাতে রাখতে পারেনি নাজমুল হোসেন শান্তর দল। ইয়ং-লাথাম ছাড়া ২ অঙ্কের ঘরে পৌঁছেছেন মার্ক চাপম্যান (২০)। 

বল হাতে সবচেয়ে খরুচে ছিলেন সৌম্য সরকার-মেহেদী হাসান মিরাজ। সৌম্য ৬ ওভারে ৬৩ রান দিয়ে কোনো উইকেট না পেলেও মিরাজ ৫ ওভারে ৫৩ রান দিয়ে নেন ১ উইকেট। সর্বোচ্চ ২ উইকেট নেন শরিফুল। মোস্তাফিজুর রহমান ৬ ওভারে ৪৭ রান দিয়ে থাকেন উইকেট শূন্য। আফিফ হোসেন ১ ওভার করে দেন ১৭ রান! কিউইদের চার ব্যাটার সাজঘরে ফেরেন রানআউট হয়ে।