খেলাধুলা

বৃষ্টি আইনে হেরে সিরিজ জেতা হলো না বাংলাদেশের

লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে ৪৯ রানেই নেই নিউ জিল্যান্ডের ৫ উইকেট। সবাই তখন জয়ের হিসেব মেলাতে ব্যস্ত। কিন্তু সব ওলটপালট করে দিলেন জিমি নিশাম ও মিচেল স্যান্টনার। এই দুজনের ব্যাটে ভর করে তৃতীয় ও শেষ টি-টোয়েন্টিতে বাংলাদেশকে বৃষ্টি আইনে ১৭ রানে হারিয়েছে নিউ জিল্যান্ড। আর তাতে প্রথম ম্যাচ জিতেও সিরিজ জেতা হলো না বাংলাদেশের। 

রোববার (৩১ ডিসেম্বর) বাংলাদেশ সময় ভোরে মাউন্ট মঙ্গানুইয়ের বে ওভালে টস হেরে ব্যাট করতে নেমে ব্যাটিং বিপর্যয়ে পড়ে ১৯.৩ ওভারে ১১০ রানেই গুটিয়ে যায় বাংলাদেশ। জবাব দিতে নেমে ১৪.৪ ওভারে নিউ জিল্যান্ড ৯৫ রান তুলতেই শুরু হয় বৃষ্টি। খেলা আর মাঠ না গড়ানোয় বৃষ্টি আইনে ১৭ রানে এগিয়ে থাকা নিউ জিল্যান্ডকে জয়ী ঘোষণা করা হয়। ১-১ ব্যবধানের সমতায় শেষ হলো সিরিজ।

পুঁজি মাত্র ১১০। তবে এই দলটা ভিন্ন বলেই হাল ছাড়লো না। ফলাফলও আসলো হাতেনাতে। নিজের প্রথম ওভারেই টিম সেইফার্টকে ফেরান শেখ মেহেদি হাসান। রিভার্স সুইপ করতে গিয়ে স্টাম্পড হন কিউই কিপার-ব্যাটার। আগের ম্যাচে ঝড় তোলা সেইফার্ট এবার থামলেন ৩ বলে ১ রানে। 

সেইফার্টের বিদায়েই কিনা আত্মবিশ্বাস ঝেঁকে বসে বাংলাদেশ শিবিরে। পরের ওভারে এসে আবারও আক্রমণ করেন মেহেদি। এবার তার স্পিনের ঘুর্ণিতে বন্দি হলেন তিন নম্বরে নামা ড্যারিল মিচেল। অফ স্টাম্পের বাইরে হালকা ঝুলিয়ে দেওয়া বলে শট খেলতে গিয়ে মিড অফে বল তুলে দেন। সহজ ক্যাচ তালুবন্দি করেন নাজমুল হোসেন শান্ত।

স্পিনের আঘাত হজমের আগেই কিউই শিবিরে গতির আক্রমণ। গ্লেন ফিলিপসকে বোল্ড করে ফেরাম্ন শরিফুল। সিমে পড়ে একটু ভেতরে ঢোকা বল মিস করে গেছেন ফিলিপস। তাতেই পাওয়ারপ্লে’তে ৩ উইকেট হারিয়ে বসে নিউ জিল্যান্ড। এরপরই মার্ক চ্যাপম্যানের রানআউটে চালকের আসনে বসে যায় বাংলাদেশ। নিজের পরের ওভারে শরিফুল ফিল অ্যালেনকে ফেরালে ৪৯ রানেই ৫ উইকেট হারিয়ে বসে নিউ জিল্যান্ড।

এরপরই জুটি বাঁধেন জিমি নিশাম ও অধিনায়ক স্যান্টেনার। দুজন মিলে এগিয়ে নিতে থাকেন দলকে। স্ট্রাইক রোটেট করে খেলে ৩৭ বলে গড়ে ফেলেন ৪৬ রানের জুটি। আর কোনো উইকেট না হারিয়ে নিউ জিল্যান্ড যখন জয়ের দিকে, তখনি বৃষ্টির বাগড়া। তাতেও অবশ্য সমস্যা হয়নি কিউইদের। তখনো বৃষ্টি আইনে ১৭ রানে এগিয়ে ছিল স্যান্টেনারের দল। 

এর আগে ব্যাট করতে নেমে শুরুতেই উইকেট হারায় বাংলাদেশ। ইনিংস সূচনা করতে নেমে শুরুতেই ফিরে যান সৌম্য সরকার। টিম সাউদির করা ওভারে তৃতীয় বলে বাউন্ডারি মেরে দারুণ কিছুর আভাস দিলেও পরের বলেই ধরা পড়েন এই বাঁহাতি। মিডল স্টাম্পে পিচ করে ভেতরে ঢোকা ফুল লেংথ ডেলিভারি মিস করেন সৌম্য। বল প্যাডে লাগতেই আবেদন, আঙ্গুল তুলে দেন আম্পায়ার। রিভিউ নিয়েও লাভ হয়নি। ৪ বলে ৪ রান করেছেন সৌম্য। 

তিনে নামেন অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত। প্রথম বলে চার মেরে শুরু করা শান্ত পরের ওভারে অ্যাডাম মিলনেকে মারেন আরও দুটি বাউন্ডারি। তৃতীয় ওভারে বেন সিয়ার্সকেও চার হাঁকিয়ে ভালো কিছুর ইঙ্গিত দেন বাংলাদেশ অধিনায়ক। কিন্তু পঞ্চম ওভারেই মিলনেকে ক্রিজ ছেড়ে বেরিয়ে মারতে গিয়ে ফিন অ্যালেনের হাতে ধরা পড়ে শেষ হয় ১৫ বলে ১৭ রানের ইনিংস।

শুরুতেই দুই ব্যাটারকে হারিয়ে বাংলাদেশের রানের চাকা কিছুটা ঝিমিয়ে পড়ে। পাঁচ ওভারে সংগ্রহ দাঁড়ায় ২ উইকেটে ৩৬ রান। এক প্রান্তে আগলে পড়ে ছিলেন রনি তালুকদার। তবে পাওয়ার প্লের শেষ ওভারে তিনিও উইকেট হারানোর মিছিলে যোগ দেন।  রনির বিদায়ে তাওহীদ হৃদয়ের সঙ্গে জুটি বাঁধেন আফিফ হোসেন। নিরাপদেই দলীয় পঞ্চাশের ঘর পার করে বাংলাদেশ।

তাওহীদ-আফিফের ব্যাটে যখন ভালো কিছু আশায় দেশ, ঠিক তখনি উইকেট ছুঁড়ে দিয়ে এলেন আফিফ। মিচেল স্যান্টনারের ঝুলিয়ে দেওয়া ডেলিভারি ক্রিজ ছেড়ে খেলতে এসেও ডিফেন্স করেন! ব্যস, বল তার ব্যাট ছুঁয়ে প্যাডে লেগে ওপরে উঠে গেলে সহজ ক্যাচ নেন উইকেটরক্ষক টিম সেইফার্ট। তাতে শেষ হয় ২ চারে ১৩ বলে ১৪ রানের ইনিংস।

এরপরই ধস নামে বাংলাদেশের ইনিংসে। বাকিদের মধ্যে এক রিশাদ হোসেন ছাড়া আর কেউ দুই অঙ্কের ঘর পার হতে পারেননি। রিশাদ করেছেন ১০ রান। আর একটা দুই অঙ্কের ইনিংসের সাহায্য পেয়েছে বাংলাদেশ। ‘মিস্টার এক্সট্রা’ বা অতিরিক্ত খাতের ১১ রানে ভর করে ১৯.৩ ওভারে ১১০ রানে থেমেছে বাংলাদেশের ইনিংস।

বাংলাদেশকে ধসিয়ে দিতে বড় ভূমিকা রেখেছেন নিউ জিল্যান্ড অধিনায়ক মিচেল স্যান্টনার। ৪ ওভারে ১৬ রান খরচায় ৪ উইকেট নিয়েছেন তিনি। বাকি বোলারদের মধ্যে সমান ২টি করে উইকেট নিয়েছেন যথাক্রমে টিম সাউদি, অ্যাডাম মিলনে ও বেন সিয়ার্স।