খেলাধুলা

মেসির অমরত্ব, সৌদি ও যুক্তরাষ্ট্রের ফুটবলে উত্থান এবং চুমু কাণ্ড

নানা হিসেবনিকেশ আর প্রাপ্তি-অপ্রাপ্তি নিয়ে শেষের পথে ২০২৩ সাল। এই বছরে বিশ্ব ক্রীড়াঙ্গনে উল্লেখযোগ্য ঘটনার পাশাপাশি ঘটে গেছে অঘটনও। ফুটবলের লিওনেল মেসি ও ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোর ইউরোপা ছেড়ে যাওয়া থেকে শুরু করে মেসির অষ্টম ব্যালন ডি’অর; সবই দেখেছে ঘটনাবহুল এই বছর। নতুন বছরের আগমনী সুবাসের সঙ্গে পুরনোর ঘ্রাণে আরেকবার পেছন ফেরা যাক। 

রোনালদোর ও একঝাঁক তারকার ইউরোপ ত্যাগ বছরের শুরুতেই বিশ্ব ফুটবলে আলোচনার জন্ম দিয়েছে ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোর ইউরোপ ছেড়ে এশিয়া যাত্রা। যার কারণেই মূলত আলোচনায় আসে সৌদি প্রো লিগ। এরপর তার পথ ধরে একে একে এশিয়ায় পাড়ি জমিয়েছেন করিম বেনজেমা, সাদিও মানে, রবার্তো ফিরমিনো, জর্ডান হেন্ডারসন, রিয়াদ মাহরেজ ও নেইমার জুনিয়রের মতো তারকারা। 

রোনালদোর পর মেসি-এমবাপ্পেদের পেতে হাত বাড়ায় সৌদি লিগের ক্লাবগুলো। এ দুজনকে শেষ পর্যন্ত না পেলেও দলবদলে ইউরোপিয়ান ক্লাবগুলোর কাঁপন ধরিয়ে দেয় প্রো লিগ। অর্থের হাতছানি পেয়ে ফুটবলারদের সৌদিমুখী হওয়া নিয়ে নিজেদের আতঙ্কের কথা জানান ইউরোপের বড় বড় কোচরা। তবে কিছুই দমাতে পারেনি অর্থের ঝনঝনানি। দলবদলেও ইউরোপের শীর্ষ লিগগুলোকে টেক্কা দিয়ে ওপরের দিকে উঠে আসে সৌদি লিগ। সামনে আরও বড় ঝড় যে আসতে যাচ্ছে তা অনুমেয়। 

যুক্তরাষ্ট্রে মেসির পদধ্বনি ও মায়ামির জেগে ওঠা তেইশের অন্যতম ঘটনাগুলোর একটি ছিল লিওনেল মেসির পিএসজি ছেড়ে যুক্তরাষ্ট্রের ক্লাব ইন্টার মায়ামিতে নাম লেখানো। মেসির জন্য আক্ষরিক অর্থেই টাকার থলে নিয়ে হাজির হয়েছিল সৌদি আরবের ক্লাব আল হিলাল। এর মধ্যে মেসির ফের বার্সেলোনায় ফেরার গুঞ্জনও চাউর হয়েছিল। তবে দুই পক্ষকে ফাঁকি দিয়ে মেসিকে টেনে নেয় ডেভিড বেকহামের ইন্টার মায়ামি। জুলাইয়ে মেসির আগমনেই বদলে যায় যুক্তরাষ্ট্রের খেলার দুনিয়া। 

মেসি মায়ামিকে বদলে ফেলেন জাদুর পরশের মতো। মেসিকে একপলক দেখার জন্য অন্য খেলা এবং হলিউডের তারকারা ভিড় জমান স্টেডিয়ামে। কখনো শিরোপা না জেতা ক্লাবটিকে মেসি এনে দেন প্রথম শিরোপা (লিগস কাপ)। নিয়ে যান অন্য এক টুর্নামেন্টের (ইউএস ওপেন কাপ) ফাইনালেও। যুক্তরাষ্ট্রের ফুটবলের বদলে যাওয়ার বিপ্লব দেখা যেতে পারে নতুন বছরেও।

সবাইকে ছাড়িয়ে ‘অষ্টম স্বর্গে’ মেসি কাতারে বিশ্বকাপ জয়ের পর মেসি বলেছিলেন, ফুটবলের কাছে তার আর চাওয়া-পাওয়ার কিছু নেই। তবে মেসি না চাইলেই ফুটবল তাকে দুই হাত ভরে দিয়েছে। তারই ধারাবাহিকতায় গত অক্টোবরে এসেছে অষ্টম ব্যালন ডি’অর। ব্যক্তিগত এ অর্জনে মেসির ধারেকাছেও এখন আর কেউ নেই। দ্বিতীয় অবস্থানে থাকা রোনালদোর দখলে আছে পাঁচটি ব্যালন ডি’অর। 

স্প্যানিশ মেয়েদের বিশ্বজয় ও চুমু কাণ্ড তেইশে উল্লেখযোগ্য ঘটনা ছিল স্পেনের মেয়েদের বিশ্বজয়। শিরোপা জিততে স্পেনের ছেলেদের বিশ্বকাপ খেলতে হয়েছিল ১৩ বার। সেখানে তৃতীয়বার বিশ্বকাপ খেলতে এসেই বাজিমাত করে স্পেনের মেয়েরা। সিডনিতে ইংল্যান্ডের মেয়েদের ১-০ গোলে হারিয়ে শিরোপা জিতে স্পেনের মেয়েরা। তবে স্প্যানিশ মেয়েদের এমন ঐতিহাসিক অর্জন ঢাকা পড়ে যায় এক বিতর্কিত ঘটনায়।

শিরোপা জয়ের আনন্দ চাপা পড়ে যায় স্প্যানিশ ফুটবল ফেডারেশনের সভাপতি লুইস রুবিয়ালেসের চুমু কাণ্ডে। ফাইনালের পর পুরস্কার বিতরণী মঞ্চে স্প্যানিশ ফুটবলার হেনি হেরমোসোর ঠোঁটে চুমু খান রুবিয়ালেস। এরপরই ফুটবল–বিশ্বে বিতর্কের ঝড় ওঠে। বিশ্বের নানা প্রান্ত থেকে রুবিয়ালেসের পদত্যাগ ও শাস্তির দাবি আসতে থাকে। এ ঘটনায় ফুটবল থেকেই সরে দাঁড়ান তিনি। ফিফাও তাকে ফুটবলীয় কার্যক্রম থেকে বরখাস্ত করে। 

সিটির ট্রেবল এবং এক বছরে পাঁচের রেকর্ড ম্যানচেস্টার সিটির ক্যাবিনেটে সব ছিল কেবল চ্যাম্পিয়নস লিগ ট্রফি বাদে। সেই আক্ষেপ দূর হলো চলতি বছর। ইন্টার মিলানকে ফাইনালে ১-০ গোলে হারিয়ে নিজেদের প্রথম চ্যাম্পিয়নস লিগ শিরোপা জিতে নিয়েছে পেপ গার্দিওলার দল। পাশাপাশি এফএ কাপ ও প্রিমিয়ার লিগ জিতে ঐতিহাসিক ‘ট্রেবল’ নিশ্চিত করে তারা।

সিটির ট্রফি জয়ের ধারা এটুকুতেই থামেনি। এরপর উয়েফা সুপার কাপ এবং ক্লাব বিশ্বকাপের ট্রফি জিতে অর্জনের ষোলোকলা পূর্ণ করেছে ক্লাবটি। এ নিয়ে একমাত্র ক্লাব হিসেবে এক বছরে পাঁচটি শিরোপা জিতলো সিটি। যা এর আগে ইউরোপের আর কোনো ক্লাব পারেনি।