খেলাধুলা

২১২ রানে দুইবার সুপার ওভার, অতঃপর আফগানিস্তানের হার

সিরিজের তৃতীয় এবং শেষ ম্যাচে বেঙ্গালুরুতে কি দুর্দান্ত লড়াইটাই না হলো! প্রথমে ভারতের ব্যাটিং বিপর্যয়। এরপর রোহিত শর্মার রেকর্ড পঞ্চম সেঞ্চুরি (১২১) ও রিংকু সিংয়ের ক্যারিয়ার সেরা ৬৯ রানের ইনিংসে ভর করে ভারত আগে ব্যাট করে ২১২ রান তোলে। জবাবে রহমানুল্লাহ গুরবাজ, ইব্রাহিম জাদরান, মোহাম্মদ নবী ও গুলবাদিন নায়েবের ব্যাটে ভর করে আফগানিস্তানও ২১২ রান করে। তাতে ম্যাচ গড়ায় সুপার ওভারে।

সুপার ওভারে আফগানিস্তান আগে ব্যাট করে ১৬ রান তোলে। জবাবে ভারতও ১৬ রান করে। তাতে ম্যাচ গড়ায় আরও একটি সুপার ওভারে।

সেখানে ভারত অবশ্য সুবিধা করতে পারেনি। ফরিদ আহমদের করা ওভারে ৫ বলেই ২ উইকেট হারিয়ে ১১ রান করতে পারে। জবাবে আফগানিস্তানের ব্যাটিংটা হয় আরও বাজে। রবি বিষ্ণোই বলে ৩ বলের মধ্যে ২ উইকেট হারিয়ে ১ রানের বেশি করতে পারে না তারা। তাতে দ্বিতীয় সুপার ওভারে জয় পায় ভারত। আর সিরিজ জিতে নেয় ৩-০ ব্যবধানে।

ভারত জিতলেও আসলে জয় হয়েছে ক্রিকেটের। যেখানে এম চিন্নাস্বামী স্টেডিয়ামে উপস্থিত হাজার হাজার দর্শক আর টিভিতে উপভোগ করা কোটি কোটি দর্শকরা এমন ধুন্ধুমার লড়াইয়ে যারপরনাই মুগ্ধ হয়েছেন। দিনশেষে ক্রিকেটরই জয় হয়েছে। যেটা মানুষ মনে রাখবে অনেক দিন।

দ্বিতীয় সুপার ওভারে ভারত করলো ১১ রান:

দ্বিতীয় সুপার ওভারে সুবিধা করতে পারেনি ভারত। ২ উইকেট হারিয়ে ৫ বলে তারা মাত্র ১১ রান করতে পারে। জিততে ১২ রান করতে হবে আফগানিস্তানকে। ফরিদ আহমদ দুর্দান্ত বোলিং করে রিংকু সিংকে আউট করেন। রোহিত শর্মা হন রান আউট।

জবাবে আফগানিস্তান ৩ বলের মধ্যে ১ রান করে অলআউট হয়। বিষ্ণোইর বলে প্রথমে মোহাম্মদ নবী ও পরে ‍গুরবাজ আউট হন। আর অবশেষে ভারত জিতে যায়।

ম্যাচ গড়ালো সুপার ওভারে, এরপর আবারও সুপার ওভারে:

রোহিত শর্মার ও রিংকু সিং ঝড়ে ৪ উইকেটে ভারতের করা ২১২ রান তাড়া করতে নেমে সমান রান করে ম্যাচ টাই করে আফগানিস্তান। তাতে ম্যাচ গড়ায় সুপার ওভারে।

সুপার ওভারে আফগানিস্তান আগে ব্যাট করে ১ উইকেটে ১৬ রান করে। জবাবে ভারতও ১৬ রান করে। তাতে আবারও টাই হয় ম্যাচ। গড়ায় আরও একটি সুপার ওভারে।

সুপার ওভারে বল করতে আসেন ভারতের মুকেশ কুমার। তার প্রথম বলেই গুলবাদিন আউট হন। কিন্তু এরপর নবী ও গুরবাজ পরের পাঁচ বলে ১ চার ও ১ ছক্কায় ১৬ রান তোলেন। ১৭ রান তাড়া করতে নেমে প্রথম ২ বলে ২ রান নেয় ভারত। কিন্তু আজমতউল্লাহ ওমরজাইর করা পরের দুই বলে দুই ছক্কা হাঁকিয়ে ব্যবধান কমান রোহিত। পঞ্চম বলে ১ রান নিয়েও আউট হন তিনি। আর শেষ বলে জশস্বী জয়সওয়াল ও রিংকু সিং ১ রান নিয়ে ম্যাচ আবারও টাই হয়।

দ্বিতীয় সুপার ওভারে সুবিধা করতে পারেনি ভারত। ২ উইকেট হারিয়ে ৫ বলে তারা মাত্র ১১ রান করতে পারে। জিততে ১২ রান করতে হবে আফগানিস্তানকে। কিন্তু সেটি আর করতে পারে না আফগানিস্তান। ২ উইকেট হারিয়ে ১ রানেই শেষ হয় তাদের লড়াই। দুই দফা সুপার ওভার শেষে ভারতের হয় জয়।

তার আগে বেঙ্গালুরুতে বুধবার রাতে শুরু থেকে দারুণ খেলতে থাকা আফগানিস্তান মাঝে বেশ কয়েকটি উইকেট হারালেও মোহাম্মদ নবী ও গুলবাদিন নায়েবের ব্যাটে লড়াইয়ে টিকে থাকে। তাতে শেষ ওভারে জিততে তাদের প্রয়োজন ছিল ১৯ রান। গুলবাদিন ও শরাফুদ্দিন আশরাফ ১৮ রান নিয়ে ম্যাচ টাই করেন। ২০ ওভারে তাদের রান হয় ৬ উইকেটে ২১২।

গুলবাদিন মাত্র ২৩ বলে ৪টি চার ও ৪ ছক্কায় ৫৫ রানে অপারজিত থাকেন। তার আগে উদ্বোধনী জুটিতে রহমানুল্লাহ গুরবাজ ও ইব্রাহিম জাদরান ১০.৫ ওভারে ৯৩ রান তুলে লড়াইয়ের ভিত গড়ে দেন। গুরবাজ ৩২ বলে ৩টি চার ও ৪ ছক্কায় ৫০ রান করেন। আর ইব্রাহিম জাদরান ৪১ বলে ৪টি চার ও ১ ছক্কায় করেন ৫০ রান।

মাঝে মোহাম্মদ নবী ১৬ বলে ২ চার ও ৩ ছক্কায় ৩৪ রানের টর্নেডো ইনিংস খেলে লড়াইয়ে এগিয়ে দেন দলকে। এরপর গুলবাদিন এসে ঝড় তুলে ম্যাচ টাই করেন।

বল হাতে ভারতের ওয়াশিংটন সুন্দর ৩ ওভারে ১৮ রান দিয়ে ৩টি উইকেট নেন। ৪ ওভারে ৫৫ রান দিয়ে আবেশ খান ১টি ও ৩ ওভারে ৩১ রান দিয়ে কুলদীপ যাদব নেন ১টি উইকেট।

এদিন টস জিতে আগে ব্যাট করতে নামে ভারত। কিন্তু ৪.৩ ওভারের মধ্যে মাত্র ২২ রান তুলতেই তারা হারিয়ে বসে ৪ উইকেট। যশস্বী জয়সওয়াল ৪, বিরাট কোহলি ০, শিবাম দুবে ১ ও সঞ্জু স্যামসন ডাক মেরে ফেরেন সাজঘরে।

ধ্বংস্তুপের ওপর দাঁড়িয়ে যান রোহিত শর্মা ও রিংকু সিং। তাদের দুজনকে আর আউট করতে পারেননি আফগানিস্তানের বোলাররা। তাতে যা হওয়ার তাই হয়। মাত্র ৬৯ বলে ১১টি চার ও ৮ ছক্কায় রোহিত তার ক্যারিয়ারের রেকর্ড পঞ্চম সেঞ্চুরি করে অপরাজিত থাকেন ১২১ রানে। আর রিংকু সিং ৩৯ বলে ২ চার ও ৬ ছক্কায় অপরাজিত থাকেন তার ক্যারিয়ার সেরা ৬৯ রান করে। তাতে ভারত ২২-৪ থেকে ইনিংস শেষ করে ২১২-৪ এ।

রান বন্যার ম্যাচে ৪ ওভারে মাত্র ২০ রান দিয়ে ৩টি উইকেট নেন ফরিদ আহমদ। ৪ ওভারে ৩৩ রান দিয়ে অপর উইকেটটি নেন আজমতউল্লাহ।