খেলাধুলা

বিপিএলের সাত দলের সাতকাহন

পর্দা উঠার অপেক্ষায় বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগের (বিপিএল)। সাত দল নিয়ে শুক্রবার (১৯ জানুয়ারি) থেকে শুরু হচ্ছে বিপিএলের দশম আসর। আগের ছয় দলের সঙ্গে এবার প্রথমবারের মতো যুক্ত হয়েছে দুরন্ত ঢাকা। ঢাকা, সিলেট ও চট্টগ্রামে ৪৩ দিনে বিপিএলের ম্যাচ হবে ৪৬টি। চার-ছক্কার ধুন্ধুমার এই প্রতিযোগিতা মাঠে গড়ানোর আগে জেনে নেওয়া যাক দলগুলোর আদ্যোপান্ত। 

কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স বিপিএলের ইতিহাসের সফলতম দল কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স। ৯টি আসরে চারবারই তারা চ্যাম্পিয়ন। মাশরাফির হাত ধরে প্রথমবার চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পর ইমরুল কায়েস এই দলকে শিরোপা জিতিয়েছেন তিনবার। এবারও তারা চ্যাম্পিয়নশিপের লড়াইয়ের জন্য প্রস্তুতি নিয়েছে। দেশি ও বিদেশি সংগ্রহে বেশ ভালো অবস্থানে তারা। আগাম ফেভারিট বলতেও দ্বিধা নেই। ইমরুল কায়েসকে সরিয়ে এবার লিটনকে তারা অধিনায়ক করেছে। সেই সঙ্গে গত বিপিএলের চমক তাওহীদ হৃদয়কে কোটি টাকারও বেশি খরচ করে দলে ভিড়িয়েছে। এছাড়া মোস্তাফিজ, তানভীর, জাকের আলীও তাদের ভালো সংগ্রহ। বিদেশীদের মধ্যে রিজওয়ান, মঈন, রাসেল, খুশদিল, নাসির, জনসন চার্লস, নাসিম শাহ তাদের দলকে  শক্তিশালী করে তুলেছে। শিরোপা ধরে রাখতে কুমিল্লা দল সাজিয়েছে। পঞ্চম শিরোপার অপেক্ষায় তারা।

সিলেট স্ট্রাইকার্স গত আসরে শেষ মুহূর্তে গিয়ে তরী ডোবায় সিলেট স্ট্রাইকার্স। গোটা টুর্নামেন্টে অসাধারণ পারফরম্যান্স করে ফাইনালে শেষ মূহুর্তে কুমিল্লার কাছে শিরোপা হাতছাড়া করে দলটি। মাশরাফি বিন মুর্তজার অসাধারণ নেতৃত্ব ও শান্ত-তাওহীদদের বীরোচিত পারফরম্যান্সে প্রথমবার মাঠে নেমে দুর্বার সিলেট স্ট্রাইকার্স। কাগজে-কলমে শক্তিশালী না হলেও মাঠের ক্রিকেটে মনোযোগী হয়ে প্রক্রিয়া মেনে সফল দলটি। এবারও সেই মোতাবেক দল গড়েছে তারা। বড় নামের দিকে না গিয়ে রায়ান বার্ল, বেন কাটিং ও বেনি হাওয়েলের মতো কার্যকর বিদেশি অলরাউন্ডারদের নিয়ে দল গড়েছে। শান্তর দুর্দান্ত ফর্ম ও বাকিদের উজ্জীবিত পারফরম্যান্সে এ দলটা আরেকবার শিরোপার পথে পা বাড়ালে অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না। 

রংপুর রাইডার্স সাকিব আল হাসানকে দলে ভিড়িয়ে বিপিএলের অনেক আগে চমক দেখায় রংপুর রাইডার্স। শিরোপা পুনরুদ্ধার করতে মরিয়া দলটি এবারও বিগ বাজেটের দল বানিয়েছে। কাজী নুরুল হাসান সোহানকে অধিনায়ক করে রনি তালুকদারের মতো অভিজ্ঞ ক্রিকেটারকে ধরে রেখেছে তারা। সঙ্গে আছে জাতীয় দলের স্পিন অলরাউন্ডার শেখ মাহেদী হাসান। এছাড়া বাবর আজম, নিকোলাস পুরান, ওয়ানিন্দু হাসারাঙ্গার মতো তারকা ক্রিকেটারকে দলে নিয়েছে তারা। শেষ দিকে চমক হিসেবে দলে যোগ দেওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে টিম ডেভিডের।

ফরচুন বরিশাল  সাকিব আল হাসানকে ছেড়ে দিয়ে ফরচুন বরিশাল দলে ভিড়িয়েছে তামিম ইকবালকে। এছাড়া ড্রাফট থেকে মুশফিকুর রহিমকে পায় তারা। মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ, সৌম্য সরকার, মেহেদী হাসান মিরাজ, তাইজুল ইসলামদের নিয়ে বরিশাল বেশ শক্তিশালী দল। লম্বা সময় পর মাঠে ফেরার অপেক্ষায় থাকা তামিম বড় চ্যালেঞ্জ নিয়েছেন। নিজে দল গুছিয়েছেন। বিদেশি সংগ্রহে ছিলেন ওতপ্রোতভাবে জড়িত। শোয়েব মালিক, ফখর জামান, ডেভিড মিলারদের মতো নামিদামি ক্রিকেটারকে বরিশাল সংগ্রহ করেছে। দলে টেকনিক্যাল ডিরেক্টর হিসেবে কিছু সময় থাকবেন বাংলাদেশের সাবেক কোচ ডেভ হোয়াটমোর।

খুলনা টাইগার্স বিপিএলের গত আসরের শেষ দিকে জ্বলে ওঠা খুলনা টাইগার্স এবার তরুণ ক্রিকেটারদের দিকে বেশি আগ্রহ দেখিয়েছে। বড় নামের পেছনে না ছুটে কার্যকরী ক্রিকেটার খুঁজে বেরিয়েছেন। এনামুল হক বিজয়, আফিফ হোসেন, মাহমুদুদুল হাসান জয়, পারভেজ হোসেন ইমন, আকবর আলীদের দলে নিয়েছে। পেস আক্রমণে রুবেল হোসেন, মুকিদুল ইসলাম মুগ্ধ করয়েছে। বিদেশী সংগ্রহ শাই হোপ, এভিন লুইস, মোহাম্মদ ওয়াসিম, দাশুন শানাকা, ফাহিম আশরাফদের রাখা রয়েছে। যারা যেকোনো ম্যাচ একাই ঘুরিয়ে দিতে সক্ষম। দলের কোচ তাহলা জুবায়ের প্রথমবার বড় মঞ্চে নিজেকেও মেলে ধরার অপেক্ষায়। খুলনা বড় কিছু করতে পারবে সেই বিশ্বাস গোটা দলে ছড়িয়ে দিয়েছেন তিনি।

দুর্দান্ত ঢাকা বিপিএলে আবার ফিরেছে ঢাকা ফ্রাঞ্চাইজি। নতুন করে দলের মালিকানা কিনেছে নিউটেক্স গ্রুপ। তারা নাম দিয়েছে দুর্দান্ত ঢাকা। নামের মতোই মাঠেও দুর্দান্ত ক্রিকেট খেলার প্রত্যয় তাদের। বাজেট স্বল্পতার কারণে দলটির ভার কম। জাতীয় দলের পেস আক্রমণের দুই কান্ডারি তাসকিন ও শরিফুলকে ঘিরেই তাদের সব স্বপ্ন। এছাড়া মোসাদ্দেক, নাঈম শেখ, সাইফ হাসানদের মতো পরীক্ষিত পারফর্মারদের তারা দলে ভিড়িয়েছে। বিদেশীদের মধ্যে বড় নাম নেই। তবে শ্রীলঙ্কার ধারাবাহিক ব্যাটসম্যান সাদিরা সামারাবিক্রমা, চতুরঙ্গ ডি সিলভা, পাকিস্তানের সাইম আইয়ুবদের নিয়ে ভালোমানের দল গড়েছে ঢাকা। দলের কোচ হিসেবে থাকা খালেদ মাহমুদ চমক দেখাতে চান। সেরা চারে নিয়ে যান দলকে। সেই লক্ষ্য পূরণে খেলোয়াড়দের সেভাবেই প্রস্তুত করছেন তিনি। 

চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্স বিপিএলে চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্সের সফর হয় রোলার কোস্টারের মতো। কখনো দুর্দান্ত। কখনো তলানিতে। কখনো বেশ উচুঁতে। কখনো বেশ নিচুতে। বিপিএলে তাদের দল একবার প্লে অফ খেলেছে। গত আসর ছিল ব্যর্থতায় মোড়ানো। তবে এবারও মাঝারি মানের দল তৈরি করেছে তারা।  দেশি খেলোয়াড়ের সংগ্রহ তেমন সমৃদ্ধ নয়। বিদেশি সংগ্রহে কিছুটা মান রেখেছে। কুশল মেন্ডিস, আভিঙ্কা ফার্নান্দোর সঙ্গে ফিল সল্টকে দলে ভিড়িয়েছে। এছাড়া নজিবউল্লাহ জাদরানও আছে শেষ দিকে ব্যাটিং পুষিয়ে দিতে। বোলিংয়ে পেসার আল-আমিনের সঙ্গী পাকিস্তানের হাসনাইন, ওমানের বিলাল খান, শহীদুল ও সালাউদ্দিন শাকিল। দল হিসেবে চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্সকে এগিয়ে রাখার সুযোগ নেই। তবে মাঠের ক্রিকেটে নির্দিষ্ট দিনে যে কেউই যে কাউকে হারাতে পারে।