হাঁটুর চোটের কারণে মাশরাফি বিন মুর্তজা বিপিএল খেলবেন কিনা তা নিয়ে ছিল ধোঁয়াশা। লম্বা সময় খেলার থেকে দূরে থাকায় তার ফিটনেস আপ টু মার্ক নয়। মাশরাফির নিজেরও খেলার আগ্রহ ছিল না। কিন্তু ফ্র্যাঞ্চাইজি মালিকদের জোরাজুরিতে বিপিএলের প্রথম দিন থেকেই ২২ গজে বিপিএলের সফলতম অধিনায়ক। সিলেট স্ট্রাইকার্সের দাবি, ‘মাশরাফি দাঁড়িয়ে থাকলেই চলবে’- বলেছিলেন দলের অন্যতম সত্ত্বাধিকারী জগলুল হায়দার মিঠু।
কিন্তু মাঠে নামা মাশরাফি টুর্নামেন্টের সৌন্দর্য নষ্ট করছেন বলেই দাবি মোহাম্মদ আশরাফুলের। জাতীয় দলের এক সময়কার সতীর্থ আশরাফুল বিপিএল ব্রডকাস্টকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বলেছেন, ‘কিন্তু এইভাবে এই টুর্নামেন্টে আসলে... সে কিন্তু খেলতে চাচ্ছিল না, মালিকরা চাচ্ছে সে মাঠে দাঁড়িয়ে থাকুক। এটা আমার মনে হয় এই টুর্নামেন্টটাকে ছোট করা হচ্ছে। কারণ, এই ধরণের টুর্নামেন্ট পুরো বিশ্বজুড়ে দেখছে।’
২৫০ দিন পর প্রতিযোগিতামূলক ক্রিকেটে ফিরে মাশরাফি বল হাতে উইকেট পেয়েছিলেন ঠিকই। কিন্তু তার বোলিং নিয়েই যত প্রশ্ন। কয়েক কদম দৌড়ে হাত ঘুরিয়েছেন ২২ গজে। ফিল্ডিংয়ে বৃত্তের ভেতরে থাকলেও নড়াচড়া একদমই নেই। নাগালের বল ধরে ফেললেও একটু বাইরের বল চেষ্টা করতে পারছেন না ফিটনেস না থাকায়। বরং অন্য পজিশনের ফিল্ডার দৌড়ে সেই বল ধরার চেষ্টা চালান। মাশরাফিকে নিয়ে আশরাফুল আরও বলেছেন, ‘ক্যাপ্টেন ফ্যান্টাসটিক আমরা তার নাম দিয়েছি, অসাধারণ লিডার। সে সবার কথা শুনে, খেলাটা ভালো বুঝে। কিন্তু অধিনায়ক যদি নিজে পারফর্ম করে নেতৃত্ব দেওয়া সহজ হয়। আট মাস সে ক্রিকেটের বাইরে ছিল, নির্বাচনের জন্য ব্যস্ত ছিল। একদিন মনে হয় অনুশীলনে এসেছিল বল করেছিল কিনা জানি না।’
খেলার প্রতি মাশরাফির প্যাশন, ভালো লাগা সবকিছুর ঊর্ধ্বে। কিন্তু এমন ফিটনেস নিয়ে খেলাটা যে আদর্শ নয় তা বলতে দ্বিধা করেননি মাশরাফি নিজেও। বরং আশরাফুলের কথায় সহমত পোষণ করেছেন, ‘সেটা অবশ্যই (প্যাশন বা ভালো লাগা)। তবে সত্যি বলতে, আদর্শ পরিস্থিতিতে না হলে ভালো হয় (না খেললে ভালো)। তারপরে যেটা, সব কিছু আসলে ব্যাখা করা যায় না। আদর্শ তাই হতো…আমার সব কিছু ঠিক আছে। হাঁটুর সমস্যাটা হচ্ছে। খুব ছোট বা ভোগাচ্ছে।’
আরেক প্রশ্নের উত্তরে মাশরাফি যোগ করেন, ‘যেটা বললাম, সব জিনিস সব সময় ব্যাখা করা যায় না। অবশ্যই আমি যেটা মনে করছি, আদর্শ পরিস্থিতি না। আদর্শ পরিস্থিতি ওইটাই (না খেলা) হওয়া উচিত।’
মাশরাফিকে নিয়ে আশরাফুল আরও বলেছেন, ‘সে (মাশরাফি) ফিট না। কারণ, সে দুই তিন পা দৌড়ে বল করছে। মিডিয়াম পেস নাকি অফ ব্রেক করছে আমি নিশ্চিত না। কিন্তু সে একটা উইকেট পেয়ে গেছে (হাসি)। আদর্শগতভাবে আপনি আরও প্রাণশক্তি চাইবেন, আরও দায়িত্ব নেওয়ার প্রবনতা, আরও তীব্রতা দেখতে চাইবেন। সে খেলছে, আলোচনা তৈরি করতে সক্ষম হয়েছে। কিন্তু খেলার দিক থেকে যদি ভাবি সে আসলে আদর্শ অবস্থায় নেই।’
এ বছরই আছে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ। মাশরাফির স্কোয়াডে আছেন তরুণ পেসার রেজাউর রহমান রাজা। গত আসরে সিলেটের হয়ে ৮ ম্যাচে ১৩ উইকেট পাওয়া এ পেসার এখনও খেলার সুযোগ পাননি। মাশরাফির জায়গায় রাজাকে খেলানো যায় এমন মতও দিয়েছেন আশরাফুল। ভালো করলে বিশ্বকাপের দুয়ারও খুলে যেতে পারে। মাশরাফি এ নিয়ে বলেছেন, ‘আর কে খেললে বা কে ভালো হতো সেটা টিমের বিষয়। দেখা গেল, ওকে না খেলিয়ে আরেকজনকে খেলালে আরও ভালো হতো। কে খেললে ভালো হতো এটা তো আর দল কারো সঙ্গে বসে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেবে না।’