‘হি হ্যাজ ডান ইট, হি হ্যাজ ডান ইট। সামার জোসেফ হ্যাস ক্রিয়েট দ্য মোস্ট অ্যামেজিং থিংকস হেয়ার ইন দ্য ওয়ার্ল্ড অব ক্রিকেট। দ্য আর অলরেডি রানিং অ্যারাউন্ড দ্য গ্যাবা ইউ ডোন্ট বিলিভ। জস হ্যাজেলউড ক্রাইড আদার সাইড অব দ্য উইকেট। দিস ইম রিমারকেবল। ব্রায়ান লারা ইউ আর ইন টিয়ার্স।’
গ্যাবার ধারাভাষ্য কক্ষে বসে ইয়ান স্মিমের কথাগুলো যদি মনে গেঁথে থাকে তাহলে কল্পনাতে নিশ্চয়ই ওয়েস্ট ইন্ডিজ ক্রিকেট দলের উদযাপন চোখে ভাসছে। না কোনো টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের শিরোপা কিংবা অবিশ্বাস্য কোনো ২০ ওভারের ম্যাচ ক্যারিবীয়ানরা জেতেননি। এখনকার সময়ে তাদের বড় বিজ্ঞাপন তো ওই টি-টোয়েন্টি। ওয়ানডেতেও তারা পথ ভুলেছে। শেষ ওয়ানডে বিশ্বকাপ খেলতে পারেননি প্রথম দুই বিশ্বকাপের চ্যাম্পিয়নরা। বাকি আর রইলো কি টেস্ট?
সেটা তো দূর আকাশের তারা। নাহ আজকের পর তাদের টেস্ট নিয়ে প্রশ্ন তোলার মানুষ খুঁজে পাওয়া যাবে না। গ্যাবায় অস্ট্রেলিয়াকে মাত্র ৮ রানে হারিয়ে অবিশ্বাস্য এক জয় তুলে নিয়েছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। টেস্ট ক্রিকেটের বর্তমান রাজাদের তাদের মাটিতে হারানো চাট্টেখানি কথা নয়। অথচ শামার জোসেফের ৭ উইকেটের অবিশ্বাস্য স্পেলে অস্ট্রেলিয়াকে মাটিতে নামিয়েছে ক্যারিবীয়ানরা।
অবিশ্বাস্য, অবিস্মরণীয়, অকল্পনীয় জয় ওয়েস্ট ইন্ডিজ পেয়েছে ২৭ বছর পর। অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে ২৭ বছর পর তারা জিতল টেস্ট ম্যাচ। সবশেষ ১৯৯৭ সালে যেবার বিজয়ের পতাকা উড়িয়েছিল সেবার ১৩২ রান করেছিলেন ব্রায়ান চার্লস লারা। লারা আজও ছিলেন। ইয়ান স্মিথের পাশে। তখন তার চোখে আনন্দাশ্রু।
জয় নিশ্চিতের পর ইয়ান স্মিথ প্রশংসায় ভাসান ক্যারিবীয়ানদের। তার মাইক ছাড়ার পর লারা নিজের প্রতিক্রিয়া জানান এভাবে, ‘অবিশ্বাস্য। ২৭ বছর পর অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে অস্ট্রেলিয়াকে হারানো। তরুণ অনভিজ্ঞ একটা দল ইতিহাস লিখল। আজ ওয়েস্ট ইন্ডিজ দলটা মাথা উচুঁ করে রাখতে পারবে। ওয়েস্ট ইন্ডিজ দল আজ দৌড়াতে পারবে। ওয়েস্ট ইন্ডিজের জন্য আজ বড় একটি দিন। অভিনন্দন। অভিনন্দন ওয়েস্ট ইন্ডিজ দলের প্রতিটি সদস্যকে।’
পাশেই ছিলেন মার্ক হ্যাওয়ার্ড। তাকে জড়িয়ে আনন্দ ভাগাভাগি করেন লারা।
শুধুই কি লারা? এবিসি রেডিওতে কমেন্ট্রি করেছেন আরেক অধিনায়ক কার্ল হুপার। ধারাভাষ্য ছেড়ে চেয়ার থেকে উঠে দেয়ালে হেলান দিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন হুপার। তাদের এই আনন্দাশ্রু বলে দেয় অবিশ্বাস্য এই জয়ের মূল্য কতটা বড়। কতটা বিশাল এই অর্জন।
জয়ের নায়ক শামার জোসেফের উত্থানের গল্পটা তো মোটামুটি এখন সবারই জানা। ক্যারিবীয়ন দ্বীপপুঞ্জের অত্যন্ত ছোট গ্রাম বারাকারা। নিউ আমট্রাডাম থেকে যেখানে যেতে হয় কেবল নৌকায়। সময় লাগে ২ দিন। যে গ্রামে জনসংখ্যা কেবল ৩৫০ জনের মতো। আর ইন্টারনেট সেখানে পৌঁছায় ২০১৮ সালে। ওখানে বড় হয়ে শহরে এসে চাকরি খুঁজে দিনযাপন চলতো তার। সিকিউরিটি গার্ডের চাকরি করতেন ১২ ঘণ্টা।
এরপরই শুরু হয় তার ক্রিকেটের পথচলা। সেই পথচলা আজ দৌড়ে আসমান ছুঁয়ে ফেলল ৭ উইকেট নিয়ে। অবিশ্বাস্য, ধ্রুপদী।