খেলাধুলা

সাকিবের দ্যুতি ছড়ানো ম্যাচে মিরপুরের টস ‘সমীকরণ’ পাল্টাল রংপুর

একটি নয়, দুটি নয়, পরপর আট ম্যাচে একই কাণ্ড মিরপুর শের-ই-বাংলায়। আগে যারা টস জিতবে তারাই জিতবে ম্যাচ! এমন সমীকরণে বিপিএলে প্রথম চার দিনে আট ম্যাচের ফল বের হয়েছিল।

সিলেট পর্ব শেষে বিপিএল আবারও ফিরেছে ঢাকায়। ফিরেই টস সমীকরণ পাল্টাল রংপুর রাইডার্স। এদিন দুর্দান্ত ঢাকার বিপক্ষে টস হারলেও রংপুর ম্যাচ জিতেছে হেসেখেলে।

টস হেরে ব্যাটিং করতে নেমে রংপুর রাইডার্স ৪ উইকেটে ১৭৫ রান করে। জবাবে দুর্দান্ত ঢাকা ১১৫ রানেই অলআউট। ৬০ রানের বিশাল জয়ে পয়েন্ট টেবিলের শীর্ষস্থান শক্তিশালী করলো শিরোপা প্রত্যাশীরা।

রংপুরের জয়ের নায়ক দলের সবচেয়ে বড় ধ্রুবতারা সাকিব আল হাসান। সাকিব এতোদিন বোলিংয়ে রেখে আসছিলেন অবদান। চোখের সমস্যার কারণে ব্যাটিং ঠিকঠাক করতে পারছিলেন না। কিন্তু আজ অলাউন্ডার সাকিবকে মিরপুরে পাওয়া গেল। প্রথমে ব্যাটিংয়ে নেমে ২০ বলে ৩৪ রান করেন ১ চার ও ৩ ছক্কায়। এরপর বোলিংয়ে হাত ঘুরিয়ে ১৬ রানে পেয়েছেন ৩ উইকেট। তাতে ম্যাচসেরার পুরস্কারটাও উঠেছে তার হাতে।

আগের ম্যাচ শেষে সংবাদ সম্মেলনে এসে বলেছিলেন, ‘চোখের কোনো সমস্যা নেই।’ তবে সমস্যা যে নেই তেমনটাও নয়। চোখের কোথায় সমস্যা হচ্ছে তা খুঁজে বের করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। সেই প্রক্রিয়াতে ব্যাটিং চালিয়ে যাওয়ার কথা বলেছিলেন সাকিব।

আজ সবাইকে অবাক করে সাকিব রংপুর রাইডার্সের জার্সিতে তিনে ব্যাটিংয়ে আসেন। শুরুতে একটু অস্বস্তি থাকলেও থিতু হওয়ার পর চেনারূপে বাংলাদেশ ক্রিকেটের ধ্রুবতারা।

সাকিব বাদে রানের দেখা পেয়েছেন রনি তালুকদার ও বাবর আজম। একাদশে ফেরা রনি ২৪ বলে ৬ চার ও ১ ছক্কায় ৩৯ রান করেন। এছাড়া শেষ ম্যাচ খেলতে নামা পাকিস্তানের তারকা ব্যাটসম্যান বাবর ৪৩ বলে ৫ বাউন্ডারিতে করেন ৪৭ রান।

ইনিংসের শুরুতে ব্যাট হাতে ঝড় তোলেন রনি। শরিফুলকে প্রথম বলে চার মেরে তার হাত খোলা শুরু। এরপর অফস্টাম্পের বাইরে একাধিক চার মেরে নিজের ইনিংস বড় করার আভাস দেন। ফর্মের কারণে দল থেকে বাদ পড়েছিলেন। কিন্তু ফিরে এসে দলের প্রয়োজনে আগ্রাসী ব্যাটিংয়ে দ্রুত রান তোলেন ডানহাতি ব্যাটসম্যান। তবে বড় কিছু করার আগেই থেমে যান তিনি। স্পিনার আরাফাত সানীকে স্লগ সুইপ করতে গিয়ে এলবিডব্লিউ হন।

তিনে ব্যাটিংয়ে নেমে সাকিব প্রথম ১৪ বলে কোনো বাউন্ডারি পাননি। এ সময়ে তার ব্যাট থেকে আসে ১১ রান। মোসাদ্দেককে সুইপ করে মিড অন দিয়ে চার মেরে সাকিব বাউন্ডারির খাতা খোলেন। এরপর পরের চার বলে তার ব্যাট থেকে আসে তিন ছক্কা। প্রথম দুটি মারেন চতুরঙ্গকে। পরেরটি মোসাদ্দেকে। যদিও সীমানায় তাকে জীবন দিয়েছিলেন গুলবাদিন। শেষমেশ মোসাদ্দেককে উড়াতে গিয়ে মিড উইকেটে ধরা পড়েন সাকিব।

এই ম্যাচ দিয়ে বাবর আজম বিপিএলের মিশন শেষ করলেন। পিএসএল খেলতে আগামীকালই দেশে উড়াল দেবেন। যাবার আগে শেষ ম্যাচেও দ্যুতি ছড়ান তিনি। ৪৭ রানের ইনিংসটি দিয়ে ২৫১ রানে থেমেছেন পাকিস্তানের ব্যাটসম্যান। শেষ দিকে রংপুরের রান বাড়ান কাজী নুরুল হাসান সোহান ও মোহাম্দ নবী। সোহান ১০ বলে ১৬ ও নবী ১৬ বলে ২৯ রান করেন।

বল হাতে তাসকিন কিংবা শরিফুল কেউ ভালো করেননি। শরিফুল ৪ ওভারে ৩৫ ও তাসকিন ৪ ওভার ৪৩ রান দিয়েছেন। ২ উইকেট পাওয়া মোসাদ্দেক ৪ ওভারে ৩০ রান খরচ করেছেন।

দুই দলের প্রথম মুখোমুখিতে ঢাকা ৭৯ রানের বিশাল ব্যবধানে হেরেছিল। সেদিনই ব্যাটিং ব্যর্থতা ডুবিয়েছিল তাদের। অলআউট হয়েছিল ১০৪ রানে। আজও তার ব্যতিক্রম হলো না। নাঈম শেখ বাদে দলের হয়ে কেউ লড়াই করতে পারেননি। তিনি ৩১ বলে ৪৪ রান করেন ৩টি করে চার ও ছক্কায়। এছাড়া ইরফান শুক্কুর ২১, তাসকিন ১৫ ও গুলবাদিন নাইব ১৩ রান করেন।

টপ ও মিডল অর্ডার ব্যাটসম্যানদের ধারাবাহিক ব্যর্থতায় লাগাতার ম্যাচ হারছে ঢাকা। ৬ ম্যাচে মাত্র ১ জয়ে তারা এখন পয়েন্ট তালিকার তলানিতে। অন্যদিকে ৭ ম্যাচে ৫ জয়ে টেবিল টপার রংপুর রাইডার্স।