খেলাধুলা

‘সাকিব ভাইয়ের পাওয়ার কিছু নেই’

যেন স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললো রংপুর রাইডার্স। হাঁফ ছেড়ে বাঁচলেন অধিনায়ক নুরুল হাসান সোহান। দলের সবচেয়ে বড় তারকা বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার এতদিন খেলছিলেন, একজন বোলার হয়ে। চোখের সমস্যায় ভোগা সাকিব আল হাসান অবশেষে ব্যাট হাতে ফিরেছেন পুরোনো রূপে, ঝড়ো ব্যাটিংয়ে দ্যুতি ছড়িয়েছেন  মিরপুর শের-ই-বাংলায়, ব্যাটে-বলে সমানতালে করেছেন রাজত্ব। মুহূর্তেই দুয়োধ্বনি পাল্টে দিয়ে সাকিব-সাকিব গর্জনে মুখরিত করতে বাধ্য করেছেন।

বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগের (বিপিএল) শুরু থেকে সাকিবের চোখ নিয়ে আলোচনা ছিল চারদিকে। প্রথম ম্যাচে ব্যর্থ হওয়ার পর উড়াল দিয়েছেন সিঙ্গাপুরে। বিপিএলে সাকিবকে আর দেখা যাবে কী না, এটা নিয়ে ছিল সংশয়। বরাবরের মতো সংশয় দূরে ঠেলে সাকিব  মাত্র ১ ম্যাচ মিস করে যোগ দেনে সিলেট পর্বে। সাকিব মাঠে ফেরেন, কিন্তু ব্যাট হাতে অচেনা। আটে নামেন রান পান না, চারে নামেন রানের খাতাই খুলতে পারেন না। মাঝে দুই ম্যাচ ব্যাটই করেননি!

অবশেষে সাকিব ধরা দেন পুরোনো রূপে। মঙ্গলবার (০৬ ফেব্রুয়ারি) মিরপুরে দুর্দান্ত ঢাকার বিপক্ষে তিনে নেমে ৩ ছয় ১ চারে মাত্র ২০ বলে করেন ৩৪ রান! বল হাতে ৪ ওভারে মাত্র ১৬ রান দিয়ে নেন ৩ উইকেট। এসেছিল হ্যাটট্রিকের সুযোগও। বিপিএলে নিজের প্রত্যাবর্তনের ম্যাচেই হয়েছেন ম্যাচসেরা। দল জেতে ৬০ রানের বড় ব্যবধানে। সাকিবের ফেরা কি দলের জন্য স্বস্তি কি না? সংবাদ সম্মেলনে সোহানের উত্তর এক শব্দে বললে হবে, ‘অবশ্যই।’

‘সত্যি করে বলতে আলহামদুলিল্লাহ। সাকিব ভাই যেভাবে দলের প্রতি নিবেদিত ছিলেন, নিজের প্রতি নিবেদিত ছিলেন, আমার কাছে মনে হয় এটা সবচেয়ে বড় জিনিস। সে যেভাবে চেষ্টা করতেছিল, আলহামদুলিল্লহা ভালো খেলছে।’

‘দেখেন এই সময়ে এসে আমার কাছে মনে হয় সাকিব ভাইয়ের পাওয়ার কিছু নেই এখান থেকে। অনেক কিছু পাইছেন, আমার কাছে মনে হয় উনি যেভাবে নিজেকে তৈরি করার জন্য চেষ্টা করতেছিলেন, ব্যক্তিগতভাবে অনুশীলন বলেন, সব কিছু মিলিয়ে আপনারা জানেন উনি সংগ্রাম করতেছিলেন কিছু কারণে। কিন্তু ফিরে আসার জন্য যেভাবে চেষ্টা করতেছিলেন আমার কাছে মনে হয় এটা আমাদের কাছে অনেক বেশি অনুপ্রেরণার।’

সাকিবের ফেরায় সোহান যতটা না বেশি খুশি তার চেয়েও বেশি কিছু বলছেন তার ফেরার লড়াই নিয়ে। বারবার বলেছেন ফেরার জন্য সাকিবের নিবেদনের কথা। আসলেই তো! কী না করেছেন। ছুটির দিনে বিশ্রাম না নিয়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা লড়াই, শরনাপন্ন হয়েছে গুরু সালাউদ্দিনের। সবকিছু শেষে নিজের প্রতি বিশ্বাস, ফেরার জন্য লড়াকু মানসিকতা, ক্রিকেটের প্রতি নিবেদন সাকিবকে ফিরিয়েছে পুরোনো রূপে।

বিপিএলে এই নিয়ে ছয় ম্যাচ খেলে, ব্যাটিং করেছেন চার ম্যাচে।  দুবার চারে নেমে একবার করেন ২ আরেকবার ০। একবার আটে নেমেও ২ রানের বেশি করতে পারেননি। এরপর আর ব্যাটিংয়ই করেননি দুই ম্যাচে। এবার নিজেই সিদ্ধান্ত নেন তিনে নামার, ম্যানেজম্যান্টও সাঁয় দিয়েছেন তাতে। তিনে নেমে ব্যাটে-বলে সেরাটা দেখিয়ে দিয়ে হয়েছেন ম্যাচসেরা।

‘আমার কাছে মনে হয় পুরো টিম ম্যানেজম্যান্ট, তাকে এই সমর্থন করতেছে এবং তিনি নিজে থেকে অনেক বেশি চেষ্টা করতেছেন যেটা আমি বললাম। আমরা কাছ থেকে দেখতেছি, তিনি কতটা চেষ্টা করতেছেন, তিনি কতটা নিবেদিত ঐ জায়গাটায় ফেরার জন্য। এ রকম একটা ইনজুরিতে থাকলে বা প্লেয়ার যখন স্ট্রাগল পিরিয়ডে থাকে তখন অনেক বেশি মোটিভেশন দরকার হয়।’ 

‘ঐ জায়গা থেকে আমার কাছে মনে হয় টিম ম্যানেজম্যান্টের পুরো সাপোর্ট তার উপর রয়েছে, তিনি নিজে থেকে চাচ্ছিলেন একটু সময় নিয়ে ব্যাটিং করতে, শেষ দিন অনুশীলনের সময় তিনি বলেছেন তিনে ব্যাটিং করলে ভালো হবে, আমার কাছে মনে হয় পুরো টিম ম্যানেজম্যান্ট তাকে এই সাপোর্ট দিয়েছে’ -আরও যোগ করেন সোহান।