প্রথম ৭ বলে কোনো রান নেই। অষ্টম বলে ক্যাচ দিলেন ফাইন লেগে। বিপিএলের এবারের আসরে প্রথমবার খেলতে নামা রুবেল হোসেন জায়গায় দাঁড়িয়ে ক্যাচ পেলেন। কিন্তু সহজতম ক্যাচ ফেলে সিলেট স্ট্রাইকার্সের ওপেনার হ্যারি টেক্টরকে জীবন দিলেন। আইরিশ খেলোয়াড় অবশ্য প্রথম বলেও জীবন পেয়েছিলেন। স্পিনার নাহিদুলের বলে স্লিপে ক্যাচ দেন। নিচু হয়ে আসা বল মাহমুদুল হাসান জয় জমাতে পারেননি।
শূন্য রানে দুইবার জীবন পাওয়া সেই হ্যারি টেক্টরই সিলেটের তৃতীয় জয়ের নায়ক। খুলনা টাইগার্সের দেওয়া ১৫৪ রানের লক্ষ্য সিলেট ছুঁয়ে ফেলে ১ ওভার হাতে রেখে। ৫২ বলে ৬ চার ও ৩ ছক্কায় ৬১ রান করেন টেক্টর। তবে দলকে জিতিয়ে মাঠ ছাড়তে পারেননি। ম্যাচের শেষ দিকে খানিকটা রোমাঞ্চ ছড়িয়েছিল।
সিলেটের শেষ বলে দরকার ছিল ১৯ রান। রুবেল নিজের দ্বিতীয় ওভার করতে এসে ২৪ রান দিয়ে দলকে ডোবান। রায়ান বার্ল তার ওভারে ৩ ছক্কা ও ১ চার হাঁকিয়ে দলের জয় নিশ্চিত করেন। ৫ উইকেটের জয়ে সিলেট নবম ম্যাচে পেল তৃতীয় জয়ের স্বাদ। অন্যদিকে টানা চার ম্যাচ জিতে দুর্দান্তভাবে বিপিএল শুরু করা খুলনা টানা তৃতীয় পরাজয়ের তিক্ত স্বাদ পেল।
টস জিতে ব্যাটিং করতে নেমে খুলনার শুরুটা ভালো হয়নি। ওপেনার এভিন লুইস ১০ বলে ১২ রানে ফেরেন সাজঘরে। তিনে নামা আফিফ ৩ চার ও ১ ছক্কায় ১৬ বলে ২৪ রান করে সামিত পাটেলের বলে আউট হন। দলের হাল ধরতে পারেননি মাহমুদুল হাসান জয়ও। মাত্র ১ রানে সানজামুল ইসলামের বলে আউট হন। সেখান থেকে খুলনার ইনিংস বড় করেন এনামুল হক বিজয় ও হাবিবুর রহমান সোহান।
ইনিংসের নবম ওভার থেকে তারা জুটি বাঁধলেও শেষ ৩ ওভারেই ম্যাচের চিত্রনাট্য পাল্টে যায়। যেখানে এনামুল ও হাবিবুর মিলে ৫১ রান তোলেন। নয় তো স্কোরবোর্ড বড্ড বিবর্ণ দেখাত। খুলনার ইনিংসের শেষটা রঙিন করার পেছনের কারিগর হাবিবুর। গিয়ার শিফট করে ঝড়ো গতিতে রান তোলেন। রেজাউর রহমান রাজাকে শেষ ওভারে ও ১৮তম ওভারে বেনি হাওয়েলকে লং অন দিয়ে তিনটি ছক্কা হাঁকান। এছাড়া শেষ ওভারে রাজাকে রিভার্জ র্যাম্প করে দুটি চার ও একটি ছক্কা আদায় করে নেন।
শেষ বল উড়াতে চেয়েছিলেন এনামুল। কিন্তু টাইমিং মেলাতে পারেননি। ওই বলে রান নিলে তাদের জুটির রান একশ ছুঁয়ে ফেলত। হাবিবুরের রান নেওয়ার আগ্রহ থাকায় ক্রিজে ছেড়ে বেরিয়ে পড়েন। তাতে রান আউট হন তরুণ এই ব্যাটসম্যান। ড্রেসিংরুমে ফেরার আগে ৩০ বলে ৪৩ রান করেন তিনি। যেখানে ৩ চারের সঙ্গে ৩টি ছক্কা হাঁকান। এনামুল অপরাজিত থাকেন ৬৭ রানে। ৫১ বলে বিপিএলের দ্বিতীয় পঞ্চাশ ছোঁয়া এনামুল পরের ৭ বলে ১৬ রান তুলে দলের রান চূঁড়ায় নিয়ে যান।
বল হাতে সিলেটের হয়ে সানজামুল ইসলাম, সামিত পাটেল ও বেনি হাওয়েল ১টি করে উইকেট পেয়েছেন।
লক্ষ্য তাড়ায় সামিত পাটেল দুই ছক্কায় শুরুটা ভালো করেছিলেন। কিন্তু ১৩ রানে থেমে যান নাহিদুলের বলে। শান্ত ব্যর্থতার বৃত্ত থেকে বের হয়ে আসতে পারেননি। ১৬ বলে ১৮ রান করেন ৩ বাউন্ডারিতে। জাকির হাসান নিজের দ্বিতীয় বলে লং অনে ক্যাচ দেন শূন্য রানে। দুই বাঁহাতি ব্যাটসম্যানকে একই ওভারে ফেরান অফস্পিনার দেয়াল। সেখান থেকে টেক্টর ও মিথুন ৪২ রানের জুটি গড়েন। টেক্টর নিজের সহজাত খেলে স্কোর বড় করছিলেন।
মিথুন যোগ্য সঙ্গ দিয়ে ১৯ বলে করেন ২৪ রান। খুলনার প্রয়োজন ছিল উইকেট। দেয়াল নিজের শেষ ওভার করতে এসে সিলেটের অধিনায়ক মিথুনকে স্ট্যাম্পড করান। ছয়ে নামা বার্ল তখন ফিনিশিংয়ের ভূমিকায়। বিজয়ীরা শেষটা রাঙায় তার ব্যাটেই। ১৬ বলে ৩২ রান করেন ১ চার ও ৩ ছক্কায়।
১৮তম ওভারের শেষ বলে সুমন খানকে এগিয়ে এসে তুলে মারতে গিয়ে কভারে ক্যাচ দেন টেক্টর। থিতু হওয়া ব্যাটসম্যান আউট হওয়ায় খুলনা শিবিরে কিছুটা প্রাণ পেয়েছিল। কিন্তু পরের ৬ বলে রুবেল তাদের সব আনন্দ মাটি করে দেন।
ছয় ম্যাচ বেঞ্চে বসে থাকার পর রুবেল প্রথম সুযোগটি নষ্ট করলেন বাজেভাবে। ২ ওভারে ৩৬ রান দিয়ে দলকে ডুবালেন বাজেভাবে। শেষ বিপিএলের ফাইনালে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সের বিপক্ষে এক ওভারে ২৩ রান দিয়ে সিলেটকে শিরোপার লড়াই থেকে ছিটকে দিয়েছিলেন। স্লগ ওভারে তার এমন বিবর্ণ, নির্বিষ বোলিংয়ের তালিকাটা বেশ লম্বা।