খেলাধুলা

‘ছক্কা মারা কঠিন কিছু না’- ৭ ছক্কার পর তাওহীদ 

পুরস্কার গ্রহণ শেষে সম্প্রচার চ্যানেলের সাক্ষাৎকারের আবদার মেটালেন তাওহীদ হৃদয়। বিপিএলে প্রথম সেঞ্চুরি হাঁকিয়ে তাওহীদ এখন হটকেক। এবার সংবাদ সম্মেলনে আসার পালা। তাওহীদ শের-ই-বাংলার সংবাদ সম্মেলন কক্ষের দিকে হাঁটা ধরেও শেষ পর্যন্ত পারলেন না। গ্র্যান্ড স্ট্যান্ডে অপেক্ষায় থাকা দর্শকরা ‘হৃদয়-হৃদয়’ চিৎকারে যেন বাঁধ সাধলেন। এবার তিনি দর্শকদের আবদার মেটালেন, সেলফি তুললেন, হাত মেলালেন। 

বিপিএলে রান হয় না রব চারদিকে। এ ছাড়া দেশি ক্রিকেটারদের ব্যাটে রান খরা নিয়ে সমালোচনাও ছিল বেশ। এর মধ্যে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সের তাওহীদ চার-ছক্কার বৃষ্টিতে নিজের প্রথম সেঞ্চুরিতে হৃদয় জিতে নিলেন। সঙ্গে দুর্দান্ত ঢাকার বিপক্ষে একাই ম্যাচ জিতিয়ে হয়েছেন ম্যাচ সেরা।  

শুক্রবার টস জিতে ব্যাটিং করতে নেমে ঢাকা ১৭৫ রান করে। লক্ষ্য তাড়ায় কুমিল্লা ২৩ রানে হারায় ৩ উইকেট। তাওহীদ এক প্রান্তে দাঁড়ালেন ঢাল হয়ে। তিনে নেমে শেষ পর্যন্ত দলকে ৪ উইকেটে জিতিয়ে মাঠ ছাড়েন। ততক্ষণে তার নামের পাশে জ্বলজ্বল করছিল অপরাজিত ১০৮ রান। স্বীকৃত টি-টোয়েন্টিতে প্রথম সেঞ্চুরি। এর আগে তার সর্বোচ্চ রান ছিল অপরাজিত ৮৫। যা গত বিপিএলে সিলেট স্ট্রাইকার্সের হয়ে পেয়েছিলেন। 

৮ চার ও ৬ ছক্কায় ৫৩ বলে সেঞ্চুরির দেখা পেয়েছেন এই তরুণ ব্যাটার। সেঞ্চুরির পর তাসকিনকে ফ্লিক করে চোখ ধাঁধানো শটে আছড়ে ফেলেন গ্যালারিতে। ম্যাচ জেতানোর অসাধারণ ইনিংসে ছক্কা ছিল ৭টি। চার একটি বেশি। 

সংবাদ সম্মেলনে তাই প্রবল আগ্রহ হয়ে উঠল, তার ছক্কার মারার রহস্য উন্মোচনে। তাওহীদ এখানে বাঁধ সাধলেন, ‘আমি মনে করি ছয় মারা কঠিন কিছু না। প্রত্যেকটা খেলোয়াড় ছয় মারতে পারে, যারা ব্যাটার আছে। যদি আত্মবিশ্বাসটা থাকে আমার মনে হয় ছয় যে কোনো সময়, যে কোনো মাঠে ছয় হবে।’ 

স্লগ সুইপে, কখনো পুল করে, কখনো ফ্লিক, আবার তাসকিনের মতো বোলারকে ডাউন দ্য উইকেটে এসে যেভাবে লং অফে তাওহীদ উড়িয়েছেন, তাতে মনে হয়েছিল ছক্কা মারা যায় অনায়েসেই।

তার মতে পাওয়ার নয়, ছক্কার জন্য শুধু আত্মবিশ্বাসটাই প্রয়োজন, ‘আমার কাছে মনে হয়েছে আমরা এরকম পরিস্থিতিতে কম অভ্যস্ত। আমরা যখন আস্তে আস্তে খেলতে থাকবো, আরও যখন ম্যাচে এরকম ছয় মারবো, প্রত্যেকটা ব্যাটার যখন মারবে, তখন আত্মবিশ্বাসটা আসবে যে আমি মারলে ছয় হবে।’ 

দারুণ সব শটে সাজানো এই সেঞ্চুরিটি তাওহীদ উৎসর্গ করেছেন তার মাকে। যিনি এই মুহূর্তে অসুস্থ। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে তাওহীদের কোনো সেঞ্চুরি নেই। প্রথম শ্রেণি, লিস্ট ‘এ’তে সেঞ্চুরি থাকলেও টি-টোয়েন্টিতে কখনো তিন অঙ্কের ম্যাজিক ফিগার স্পর্শ করার কীর্তি ছিল না। এবার সেটিও হয়ে গেছে। বিপিএলের মঞ্চে এই সেঞ্চুরি কি বিশেষ কিছু নাকি?  তাওহীদের সোজাসাপ্টা উত্তর, ‘না।’ তার কাছে সব সেঞ্চুরির ওজন এক। তবে তার হৃদয়ে গেঁথে আছে যুব দলে খেলার সময় শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে পাওয়া হ্যাটট্রিক সেঞ্চুরি। 

চার বছর আগে আজকের দিনে (৯/২/২০২০) যুব বিশ্বকাপ জিতেছিলেন তাওহীদরা। চার বছর পূর্তির দিনটি সেঞ্চুরিতে রাঙালেন তিনি। যদিও বিশ্বকাপ জয়ের দিনটি তার মনে ছিল না বলে দাবি করলেন। তবে অবিশ্বাস্য স্মৃতির দিনটি তার চোখের আড়াল হয় না কখনো, ‘আলহামদুলিল্লাহ, চোখ বন্ধ করলেই মনে পড়ে।’