সাকিব আল হাসানের উপর নির্ভর করছিল সব। বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) কেবল তার সিদ্ধান্ত জানার অপেক্ষায় ছিল। অধিনায়কত্ব নিয়ে সাকিব নিজের সিদ্ধান্ত জানিয়ে দিলে বোর্ডেরও নতুন অধিনায়ক বেছে নিতে তেমন বেগ পেতে হয়নি।
নাজমুল হোসেন শান্তকে তিন সংস্করণেই বাংলাদেশের নতুন অধিনায়ক হিসেবে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। আজ সোমবার (১২ ফেব্রুয়ারি) বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন নতুন অধিনায়ক হিসেবে শান্তর নাম ঘোষণা করেন।
আট মাস পর আজ বোর্ড সভায় বসেছিল বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের পরিচালনা পরিষদ। সেখানেই অধিনায়ক হিসেবে শান্তকে বেছে নেওয়া হয়।
নাজমুল হাসান পাপন গণমাধ্যমে বলেছেন, ‘অধিনায়ক নির্বাচনে সময় বেশি গেছে। অন্যান্য মিটিংয়ের সঙ্গে আজকে পার্থক্য ছিল। আগে মিটিংয়ে আমি সব সময় প্রস্তুত হয়ে আসি। আমি বলি উনারা শুনেন। আজ উনারা বলেছেন আমি শুনেছি। ব্যাকগ্রাউন্ড অনেক কিছু জানি না।’
‘তিন ফরম্যাটেই শান্তকে এই বছরের (২০২৪) জন্য অধিনায়ক হিসেবে নির্বাচিত করেছি।’
সাকিব আল হাসান বোর্ডের পছন্দ ছিল। কিন্তু তাকে এখন সব সময় পাওয়া যাবে না তা ধরে নিয়েছে বোর্ড। সামনের শ্রীলঙ্কা সিরিজেও খেলবে কিনা নিশ্চিত করে বলতে পারেননি কেউ। তাই নতুন অধিনায়ক হিসেবে একজনকে বেছে নিতেই হতো বোর্ডকে।
‘সাকিবের সঙ্গে কথা হয়েছে। সাকিবের কাল পর্যন্ত বলেছে ওর চোখের সমস্যা এখনও যায়নি। সামনে শ্রীলঙ্কা সিরিজ আছে তারপর আরেকটি সিরিজ (জিম্বাবুয়ে) আছে। তারপর বিশ্বকাপ আছে। ওর অ্যাভেইলিবিটি আমরা নিশ্চিত নই। ও নিশ্চিতভাবেই আমাদের প্রথম পছন্দ। অধিনায়ক হিসেবে সব সময় ছিল, এখনও আছে। যেহেতু একটা অনিশ্চিয়তা রয়ে গেছে, এর মধ্যে আমরা থাকতে চাই না। আমরা তাই সিদ্ধান্তটা দেরি করতে চাই না। কারণ, বিশ্বকাপ খুব একটা দূরে নয়। সেজন্য এই সময়টায় টিম যেন স্মুথলি চলতে পারে এজন্য একজনকে বেছে নেওয়া হয়েছে।’
এর আগে নাজমুল হোসেন শান্ত তিন ফরম্যাটেই বাংলাদেশকে নেতৃত্ব দিয়েছেন। তবে প্রতিবারই মূল অধিনায়কের অনুপস্থিতিতে তাকে দায়িত্ব পালন করতে হয়েছে। যার শুরুটা হয়েছিল গত বছর ২৬ সেপ্টেম্বর নিউ জিল্যান্ডের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজের শেষ ম্যাচে। লিটন দাস বিশ্রামে থাকায় শান্তকে অধিনায়ক করা হয়েছিল।
পরবর্তীতে বিশ্বকাপে দুই ম্যাচে সাকিবের পরিবর্তে দলকে নেতৃত্ব দেন শান্ত। দুইবারই সাকিব চোটের কারণে খেলতে পারেননি। বিশ্বকাপের পর নিউ জিল্যান্ডের বিপক্ষে হোম সিরিজে (টেস্ট) এবং অ্যাওয়ে সিরিজে (ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টি) বাংলাদেশকে নেতৃত্ব দেন। যেখানে বাংলাদেশ টেস্ট সিরিজে ঘরের মাঠে প্রথমবার নিউ জিল্যান্ডকে হারায় এবং তাদের মাটিতে জয় পায় ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টি ম্যাচে। তার অধিনায়কত্ব তখন থেকেই মনে ধরেছিল নীতি নির্ধারকদের। সঙ্গে যেভাবে খোলা মনে নিজের ও দলের কথা আত্মবিশ্বাস নিয়ে বলেছেন, পরিপক্কতা দেখিয়েছেন তাতে মুগ্ধ হয়েছেন অনেকেই।
গত বছর ব্যাট হাতে শান্ত দুর্দান্ত সময় কাটিয়েছেন। বাংলাদেশের কোনো ক্রিকেটারের এক বছরে পাঁচ সেঞ্চুরির রেকর্ড নেই। শান্ত পাঁচ সেঞ্চুরি করে তাক লাগিয়ে দেন। তিন টেস্ট সেঞ্চুরির সঙ্গে দুটি পান ওয়ানডেতে। তিন ফরম্যাট মিলিয়ে রান করেন ১৬৫০। ব্যাটিং গড় ছিল ৪২.৩০।
কঠিন পথ পাড়ি দিয়ে শান্ত নিজেকে থিতু করেছেন আজকের অবস্থানে। অফ ফর্মের কারণে বাদ পড়া। আবার দলে আসা। আবার বাদ পড়া সবকিছুই দেখেছেন। ম্যাচের পর ম্যাচ খারাপ সময় গেছে তার। কিন্তু তার নিবেদনে ঘাটতি পায়নি কেউ। অক্লান্ত পরিশ্রমের পর এখন সাফল্য সূর্যর দেখা পেয়েছেন। আজ তার মুকুটে নতুন পালক যুক্ত হলো। তিন ফরম্যাটে অধিনায়কত্ব বর্তমান প্রেক্ষাপটে বিশাল দায়িত্ব।
সামনে তার পথে আরও চ্যালেঞ্জ। বিসিবির বিশ্বাস বিশ্বাস সেই পথটাও শান্ত ভালোভাবে দলকে পরিচালনা করতে পারবেন।