খেলাধুলা

তৈরি হয়েই ছিলেন শান্ত

আজকের সকালটা নিশ্চয়ই অন্যরকম নাজমুল হোসেন শান্ত। যে স্বপ্ন বুকে ধারণ করে বয়সভিত্তিক ক্রিকেট থেকে অপেক্ষায় ছিলেন, সেই স্বপ্ন পূরণ হয়েছে। জাতীয় দলে খেলার স্বপ্ন পূরণের পর তার সামনে কেবল ছিল জাতীয় দলের নেতৃত্ব দেওয়ার হাতছানি। সহ অধিনায়ক হিসেবে সেই দায়িত্ব পালনও করেছেন। তবে পূর্ণকালীন অধিনায়ক হিসেবে তার দায়িত্ব পাকাপাকি হয়েছে গতকাল সোমবার।তার চোখে মুখে এখন স্বপ্ন পূরণের আনন্দ।

বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন ২০২৪ সালের জন্য বাংলাদেশের অধিনায়ক হিসেবে শান্তর নাম ঘোষণা করেন। তিন ফরম্যাটেরই জন্যই দায়িত্ব পেয়েছেন শান্ত। দায়িত্বটা কত বড় তা হয়তো শান্ত নিজেও বুঝতে পারছেন না! কেননা জাতীয় দলে তার অধীনেই এখন খেলতে হবে দেশের ক্রিকেটের সবচেয়ে বড় ধ্রুবতারা সাকিব আল হাসানকে। হাবিবুল বাশার সুমন, মাশরাফি বিন মুর্তজা, মুশফিকুর রহিম, মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ, তামিম ইকবাল, লিটন দাসের নেতৃত্বে সাকিবের আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলা হয়েছে।

এবার সাকিবের অধিনায়ক হতে যাচ্ছেন শান্ত। তার অনুপস্থিতিতে শান্ত আগেও অধিনায়কত্ব করেছেন। সেটা কেবলই ঠেকার কাজ চালানো। সামনে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে শান্ত যখন সামনে দাঁড়াবেন, তার পেছনে গোটা বাংলাদেশ। এই দায়িত্ব পাওয়া এবং সামলানোর জন্য শান্ত প্রস্তুত হয়েই ছিলেন। ২০২৩ বিশ্বকাপে ভরাডুবির পর শান্তর কাছে নেতৃত্ব নিয়ে জানতে চাওয়া হয়েছিল। বিশ্বকাপ মঞ্চে পুনেতে শান্ত সোজাসাপ্টা বলেছিলেন, ‘বেশ কয়েকদিন ধরে তো করছি (অধিনায়কত্ব)। আমার কাছে ব্যক্তিগতভাবে মনে হচ্ছে আমি প্রস্তুত। যদি সুযোগ আসে তাহলে অবশ্যই ভালোভাবে করার জন্য প্রস্তুত।’

শান্ত কতটা প্রস্তুত তা বিশ্বকাপের পর ঘরের মাঠে নিউ জিল্যান্ড সিরিজে টের পাওয়া গেছে। যেখানে সাদা পোশাকে অধিনায়কত্ব করেছিলেন। নিজে সেঞ্চুরি করেছিলেন। দলকে জিতিয়েছিলেন। মাঠে নামার আগে শান্তর ঘোষণা ছিল, ‘এই দুইটা ম্যাচ আমরা জিততে পারি। জেতার জন্যই খেলব। সবার মধ্যে এই বিশ্বাসটা আছে।’

পাঁচদিনের তীব্র লড়াই শেষে বাংলাদেশের ড্রেসিংরুমে বেজেছে , ‘আমরা করবো জয়।’ টেস্ট জয়ের রূপকার ছিলেন অধিনায়ক। তাইতো ম্যাচ শেষে বিজয়ী হয়ে ভরা মজলিশে অধিনায়ক বলেছিলেন, ‘আমি খুবই পরিষ্কার (জয়ের ভাবনায়) ছিলাম। আমি কাউকে মোটিভেট করার জন্য বলিনি। কথাটা মিন করেছিলাম।’

শুধু টেস্টে জয়, শান্তর নেতৃত্বে বাংলাদেশ রঙিন পোশাকে স্বাগতিকদের বিপক্ষে দূর্গও জয় করেছে। বাংলাদেশ কখনোই নিউ জিল‌্যান্ডের বিপক্ষে তাদের মাটিতে ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টি জিতেনি। শান্ত অ‌্যান্ড কোং-রা সেই অধরা জয়ের স্বাদ দিয়েছেন। সেজন‌্য শান্তর প্রশংসাও হচ্ছে সর্বত্র। মাঠের ক্রিকেটে ম্যাচিউরিটির পরিচয় দিয়েছেন। মাঠের বাইরেও দায়িত্ব সামলেছেন সিদ্ধহস্তে। এজন্য সোমবারের বিসিবির পরিচালনা পরিষদের সভায় অধিনায়ক নির্বাচনে শান্তর ব‌্যালটেই বেশি ভোট পড়েছে।

কেননা ভবিষ‌্যতের ভাবনায় শান্তই ছিল বিসিবির সেরা পছন্দ। গণমাধ‌্যমে সাকিবকে বিবেচনায় আনা হয়েছিল বলে যে খবর বিসিবি সভাপতি দিয়েছেন তা পুরোপুরি ভুল। ‘‘বিশ্বকাপের পর একদিনও অধিনায়কত্ব করবো না।’- সাকিবের এমন বক্তব‌্যকে কেউ ভালোভাবে নেয়নি। এজন‌্য ভবিষ্যতের ভাবনায় শান্তকেই বেছে নেয় নীতিনির্ধারকরা।

ক্রিকেটের ভবিষ্যৎ চিন্তায় দীর্ঘমেয়াদে পরিকল্পনায় শান্তকে অধিনায়ক হিসেবে বিবেচনা করার কথা বলেছেন কোচ চন্ডিকা হাথুরুসিংহেও।  নিউ জিল্যান্ড সিরিজের পরপর হাথুরুসিংহে বলেছিলেন, ‘আমার মনে হয় তারা (বিসিবি) বেশ ভালোভাবেই (লম্বা সময়ের জন্য) চিন্তা করবে। অবশ্যই এটা বোর্ডের সিদ্ধান্ত। কিন্তু শান্ত যথেষ্ট প্রমাণ করেছে, তাকে গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করার জন্য।’

২০২৪ সালে বাংলাদেশ রেকর্ড ১৪টি টেস্ট খেলবে।পাকিস্তান,ভারত, শ্রীলঙ্কা, দক্ষিণ আফ্রিকা, জিম্বাবুয়ে, ওয়েস্ট ইন্ডিজ ও আফগানিস্তানের বিপক্ষে টেস্ট আছে।এছাড়া টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ তো আছেই। শান্তর সামনে চ‌্যাল্এজ প্রচুর। তবে তিনি যে প্রস্তুত তা বোঝা যায় তার দেখানো আত্মবিশ্বাসেই।

অধিনায়কত্বে শান্তর ভাবনা, দর্শনও বেশ পরিস্কার, ‘প্রথমত আমি অধিনায়ক হিসেবে হার-জিত নিয়ে খুব বেশি চিন্তিত না। যে জিনিসটা আমি নিজে করার চেষ্টা করি এবং দলের খেলোয়াড়দের কাছ থেকে চাই তা হলো প্রক্রিয়াটা অনুসরণ করছে কি না এবং খেলোয়াড়দের মধ্যে ওই তাড়না আছে কি না। খেলোয়াড়রা শতভাগ দিচ্ছে কি না।’

ক্রিকেটে বাংলাদেশের পালাবদলের সময় চলেই এসেছে। সাকিব বাদে বাকি তিন তামিম, মুশফিক, মাহমুদউল্লাহ কেউ না কেউ কোনো না কোনো ফরম‌্যাটকে গুডবাই বলেছেন। সাকিবই কেবল এখন পর্যন্ত নিশ্চিত নন কিভাবে কী করবেন। বাকিরা নিজেদের এফিটাফ প্রায় লিখেই নিয়েছেন। নতুন নেতৃত্ব, নতুন খেলোয়াড়, নতুন পরিবেশে সাজাতে হবে তিন ফরম‌্যাটেই। শান্ত সেই চ্যালেঞ্জ নিয়ে বাহবা পাচ্ছেন। সঙ্গে তাকে দল গোছানোর সময়ও দিতে হবে তা বলার অপেক্ষা রাখে না। ভেঙে নতুন কিছু গড়তে সময়ের প্রয়োজন। সেজন্য ধৈর্য দেখাতে হবে।