খেলাধুলা

পুত্রের অভিষেক, পিতার আনন্দাশ্রু

সরফরাজ খানের মাথায় ভারতের টেস্ট ক্যাপটা পড়িয়ে দিলেন কিংবদন্তি অনিল কুম্বলে। হাততালি দিয়ে নবাগতকে স্বাগত জানাচ্ছেন চারপাশে উপস্থিত সতীর্থরা। এর মাঝেই ক্যামেরা ঘুরে গেল আরেকদিকে। গায়ে থাকা জ্যাকেটের গলার অংশ দিয়ে চোখ আড়ালের চেষ্টা করছেন কাঁচাপাকা চুলের এক ভদ্রলোক। তার নাম নওশাদ খান, সরফরাজের বাবা।

দেড়শ কোটি মানুষের প্রত্যাশার ভার নিয়ে ছেলে নামবে দেশের হয়ে। তাও ক্রিকেটের ঐতিহ্যবাহী ফরম্যাটে। সরফরাজ খানের পিতা সেই মুহূর্তের স্বাক্ষী হয়ে আনন্দাশ্রু লুকোতে পারলেন না। কেবল দেখলেন, ছেলে তার বড় হয়ে গেছে। গৌরব বয়ে এনেছে পিতৃত্বে। যে কারণে হৃদয় গহীনের অশ্রুটুকু কেবল লুকানোর অহেতুক চেষ্টা!

বাবা নওশাদ খানের সঙ্গে সরফরাজ।

ভারতের ঘরোয়া ক্রিকেটে রানের ফোয়ারা ছুটিয়ে গেছেন সরফরাজ। জাতীয় দলের সুযোগের জন্য সবচেয়ে বড় মানদন্ড পরিমাপক রঞ্জিতেও ছুটিয়েছেন রানের বন্যা। তারপরও কোন এক অজানা কারণে জাতীয় দলের দরজা খুলছিল না তার জন্য। হতাশ হয়ে পড়েন এ ক্রিকেটার। তখনই ভরসা হয়ে আসেন তার বাবা।

ছেলের হতাশা বুঝতে পারলেন নওশাদ খান। দিল্লীর বিপক্ষে ম্যাচের পর একদিন ছেলেকে ডেকে বললেন, ‘তোমার কাজ রান করা, তুমি রান করে যাও।’ পিতার কথা তক্কে তক্কে পালন করে গেছেন ২৬ বছর বয়সী এই তরুণ। সরফরাজের ঘরোয়া ক্যারিয়ারের দিকে তাকালেই ‘রান মেশিন’ খেতাবের সার্থকতার দেখা মিলবে।

অভিষেক ক্যাপ পাওয়ার পর পিতা-পুত্রের আলিঙ্গন।

২০০৯ সালে তার যাত্রা শুরু। মাত্র ১২ বছর বয়সে হ্যারিস শিল্ড আন্তঃস্কুল টুর্নামেন্টে ৪৩৯ রানের ইনিংস খেলে ভারত জুড়ে আলোড়ন তোলেন সরফরাজ। এরপর ২০১৪ থেকে ঘরোয়া ক্রিকেটে নিয়মিত পারফর্ম করে আসছেন এই তরুণ। ২০১৯ সাল থেকে এখন পর্যন্ত তার ব্যাটিং পরিসংখ্যান দেখলেও অবিশ্বাস্য মনে হবে। 

প্রথম শ্রেণির ৬৬ ইনিংসে প্রায় চার হাজারের কাছাকাছি রান (৩৯১২)। রয়েছে ১৪টি সেঞ্চুরি ও ১১টি ফিফটি। গড় ৬৯.৮৫, যা ক্রিকেট ইতিহাসে চতুর্থ সর্বোচ্চ। সর্বোচ্চ গড় ৯৫.১৪ স্যার ডন ব্রাডম্যানের। ২০১৯-২০২০ ও ২০২১-২০২২ টানা দুই মৌসুমে রঞ্জি ট্রফিতে তিনি করেছেন ৯০০ এর বেশি রান। টানা তিন মৌসুমে সরফরাজের প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে ব্যাটিং গড় ছিল ১০০-এর বেশি।

স্বপ্ন পূরনের পর পিতা-পুত্রের আবেগঘন মুহূর্ত।

এমন পারফর্ম্যান্স করার পরও জাতীয় দলের দরজা খোলেনি তার জন্য। যে কারণে ভারত জুড়ে বয়ে গেছে সমালোচনার ঝড়। অবশেষে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ডাক পেলেন দলে। টেস্টে ডাক পাওয়ার পর সরফরাজ বিসিসিআই-কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘পুরোটাই ধৈর্য্যের পরীক্ষা। টেস্ট ক্রিকেট খেলতে হলে ধৈর্য্য ধরতে হবে। আমার খুব আনন্দ হচ্ছে ৷ আমার থেকেও বেশি বাবার জন্য আনন্দ হচ্ছে।’

সেই আনন্দ কেমন সেটা আজ দেখা গেল টিভির পর্দায়। ছেলেকে বুকে জড়িয়ে ধরেছেন নওশাদ খান ৷ চোখে আনন্দাশ্রু নিয়ে চুমো খেয়েছেন টেস্ট ক্যাপে। সেই ক্যাপ মাথায় দিয়ে এবার সরফরাজের মাঠে নামার পালা। নওশাদ খানের দীর্ঘদিনের স্বপ্ন পূরণ করার পালা। ভারতীয় ক্রিকেটের আকাশে নিশ্চয়ই ‘সরফরাজ’ নামের নক্ষত্র দেখার আশা পুষে রেখেছেন নওশাদ।