গায়ে কালো টি-শার্ট, পরনে একই রঙের শর্টস। গলার সোনালি মোটা চেইনের জায়গা হয়েছে টি-শার্টের উপরে; এভাবেই দেখা দিলেন রোমারিও শেফার্ড। ব্রাজিলের বিখ্যাত ফরোয়ার্ড রোমারিওর সঙ্গে মিলিয়ে মা নাম রেখেছিলেন, কিন্তু ছেলে ফুটবলের পেছনে না ছুটে হয়েছেন ক্রিকেটার।
বিশ্বজুড়ে ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেট খেলে বেড়ানো রোমারিও প্রথমবার খেলতে এসেছেন বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগে (বিপিএল)। চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্সের হয়ে প্রথম দিনেই ব্যাটে-বলে ঝড় তুলেছেন। আন্দ্রে রাসেলরা যখন ক্যারিয়ারের সায়াহ্নে তখন ক্রিকেট উইন্ডিজের নতুন দিনের জয়গান গাইতে রোমারিও প্রস্তুত। চট্টগ্রামের টিম হোটেলে রোমারিও শুনিয়েছেন ক্রিকেট নিয়ে নিজের ভাবনা, কেন ওয়েস্ট ইন্ডিজের মতো দল ব্যর্থতার বৃত্তে ঘুরপাক খাচ্ছে। রাইজিংবিডির পাঠকদের জন্য চুম্বক অংশ তুলে ধরা হলো।
বিপিএলে নেমেই ঝড় তুলেছেন। অভিজ্ঞতা কেমন হয়েছে? রোমারিও শেফার্ড: প্রথমত আমি বলবো এটা ভালো অভিজ্ঞতা ছিল। আমার মতে ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের মতোই, আলাদা কিছু না। আমার মূল লক্ষ্য হলো, এখানে চট্টগ্রামের জন্য আমার সেরা ক্রিকেটটা খেলা।
সামনেই টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ। বিপিএলের অভিজ্ঞতা টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে কাজে লাগবে কি না? রোমারিও শেফার্ড: যখনই আমি চট্টগ্রামের হয়ে খেলার সুযোগ পাই, আমি খুব খুশি ছিলাম। এখানকার কন্ডিশন ও পিচ ওয়েস্ট ইন্ডিজের মতই। পিচের আচরণ ব্যাটিং সহায়ক এবং স্পিনও ধরে। আমি এখানে দুটি ম্যাচ খেলেছি, দুটি ম্যাচেই উইকেট ব্যাটিং সহায়ক ছিল। এ ধরণের উইকেটে বোলিং নিয়ে আমার প্রস্তুতি রয়েছে।
২০১৯ বিশ্বকাপে কোয়ালিফাই করতে পারেনি ওয়েস্ট ইন্ডিজ। এটা কি ক্রিকেট ওয়েস্ট ইন্ডিজের জন্য বড় হতাশার বিষয় কি না? রোমারিও শেফার্ড: এটা হওয়ারই ছিল। ২০১৯ বিশ্বকাপেও আমাদের কোয়ালিফাই খেলতে হয়েছে। যেটা আপনি বলেছেন, শেষ বিশ্বকাপে আমরা কোয়ালিফাই করতে পারিনি। আমি মনে করি এটা এমন একটা বিষয় যেটা লম্বা সময় ধরে চলছিল, কিন্তু এটা ঘটেছে শুধু শেষ বিশ্বকাপে। আমি মনে করি বোর্ড-স্টাফ এটা নিয়ে সচেতন, তারা কাজ করছে। আশা করি আগামী বিশ্বকাপে আমরা ভালো অবস্থায় থাকবো।
দেশের চেয়েও ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেটকে বড় করে দেখে উইন্ডিজের ক্রিকেটাররা। দেশের খেলা বাদ দিয়ে তারা ফ্র্যাঞ্চাইজিতে ব্যস্ত থাকে, এটা কি জাতীয় দলের ব্যর্থতার একটি বড় কারণ? রোমারিও শেফার্ড: আসলে আমি এটা নিয়ে নিশ্চিত না। ক্রিকেটারদের তাদের পরিবারকে খাওয়াতে হয়। আপনি তাদেরকে থামাতে পারবেন না, কারণ আপনি জানেন না তারা অর্থনৈতিকভাবে কতটা শক্তিশালী। শেষ এক বছরের কথা যদি বলি, ওয়েস্ট ইন্ডিজ ক্রিকেট ভালো অর্থ আয় করছে এবং তারা ম্যাচ ফিও বাড়িয়েছে। আশা করি এবার ক্রিকেটাররা ভালো অর্থ পাবে (বোর্ড থেকে) এবং ওয়েস্ট ইন্ডিজের জন্য ক্রিকেট খেলবে।
আপনি গায়ানার ক্রিকেটার। এই প্রদেশ থেকে অনেক কিংবদন্তি ক্রিকেটার পেয়েছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। বোলিং অলরাউন্ডার হওয়ার পেছনে আপনার অনুপ্রেরণা কে ছিল? রোমারিও শেফার্ড: ডোয়াইন ব্রাভো আমার অনুপ্রেরণা। তিনি এমন একজন যাকে দেখে আমি বড় হয়েছি। আমি ছোটবেলায় ব্যাটসম্যান ছিলাম। এরপর এক বছরে আমি পাঁচ ফুট থেকে ছয় ফুট লম্বা হই। খুব দ্রুত শারীরিকভাবে বড় হতে থাকি। ক্লাব ক্রিকেটে আমার বলের গতিও বাড়তে থাকে। তখন থেকে বোলিংটাকেও গুরুত্ব দিতে থাকি।
অস্ট্রেলিয়ায় বিপক্ষে শামার জোসেফ ইতিহাস সৃষ্টি করেছে। তাকে কেমন দেখেছেন? রোমারিও শেফার্ড: শামারকে আমি দীর্ঘদিন ধরে চিনি। আমরা একই এলাকায় বেড়ে উঠেছি। যখন সে ছোট বাচ্চা ছিল তখন থেকে আমি তাকে জানি। এই সময়ে তাকে কিংবদন্তিদের মতো বেড়ে উঠতে দেখা দারুণ বিষয়। সে সহজ কাজটা করে ফেলেছে। এখন তার এটা ধরে রাখা প্রয়োজন এবং এটা নিয়ে কাজ করা উচিত। আশা করি লম্বা সময় ধরে সে বিশ্বব্যাপী শীর্ষ বোলার হিসেবে থাকবে।
আপনার নাম একজন বিখ্যাত ফুটবলারের নামে। কোনো রহস্য আছে? রোমারিও শেফার্ড: আমার মা ব্রাজিলিয়ান ফুটবলারের সঙ্গে মিলিয়ে আমার নাম রেখেছে। কিন্তু আমি ফুটবলে ভালো না। আমরা ব্রাজিলের খুব কাছাকাছি, যেখান থেকে সেরা ফুটবলাররা উঠে আসে। আমার মা বিস্মিত হয়েছে আমাকে ক্রিকেটার হতে দেখে। আমাদের পরিবারের খুব কমজনই ক্রিকেট খেলেছে কিন্তু সর্বোচ্চ পর্যায়ের না।
এ বার উইন্ডিজের মাঠে বিশ্বকাপ। কেমন প্রত্যাশা করছেন? রোমারিও শেফার্ড: আমরা আসলে ভাগ্যবান যে ড্রে’কে (আন্দ্রে রাসেল) বিশ্বকাপে পাচ্ছি। তিনি দুইবারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন। আমাদের কোচও (ড্যারেন স্যামি) তাই। জেসন হোল্ডারের মতো খেলোয়াড়কেও পাচ্ছি। এই বিশ্বকাপ আমাদের জন্য বিরাট ব্যাপার হতে যাচ্ছে। আমরা দুইবারের চ্যাম্পিয়ন, প্রথমবার সাবেক চ্যাম্পিয়ন হিসেবে ঘরের মাঠে বিশ্বকাপ আয়োজন করতে যাচ্ছি। আমরা জানি যে ঘরের মাঠের শতভাগ সমর্থন পাব। এটা হবে বিরাট ব্যাপার। গত বছর ভারত এবং ইংল্যান্ডের বিপক্ষে জয় আমাদের বড় স্বপ্ন দেখাচ্ছে।