সংবাদ সম্মেলন কক্ষে এসে তানজীদ হাসান তামিম সংবাদকর্মীদের প্রশ্নের আগে নিজে একটি ঘোষণা দেন, ‘আমরা সবাই অনেক খুশি। যারা আমাদের ভাষার জন্য প্রাণ দিয়েছে তাদের প্রতি শ্রদ্ধা রেখে আমরা এই জয়টা উৎসর্গ করছি।’
বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগের (বিপিএল) চট্টগ্রাম পর্বের শেষদিন সব আলো কেড়ে নিয়েছেন তানজীদ। চার-ছয়ের বৃষ্টিতে তানজীদের দ্যুতি ছড়ানো সেঞ্চুরিতে ভর করে চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্স নিশ্চিত করে প্লে-অফ।
পুরস্কার বিতরণী থেকে সংবাদ সম্মেলন কক্ষের দিকে যখন হাঁটছিলেন তখন গ্যালারিতে তামিম-তামিম চিৎকার। কাছাকাছি আসতে সেলফি শিকারিদের মুখে পড়েন, কথা দেন শেষে এবং সেই কথা রাখেনও ম্যাচ শেষে।
জয় উৎসর্গ করা হয়েছে ভাষা শহীদদের প্রতি কিন্তু তানজীদের সেঞ্চুরিটা কাকে? ঝলমলে তানজীদের উত্তর, ‘আমার ছোট একটা ভাগ্নে আছে। সবসময় ওর সাথে কথা হয়, ম্যাচের আগের দিন মাঠে আসার আগেও। ছয় বললে ছয় দেখায়, আউট বললে আউট দেখায়। আমার সেঞ্চুরিটা ওকে উৎসর্গ করতে চাই।’
তানজীদের ব্যাট থেকে তৃতীয় সেঞ্চুরি দেখলো বিপিএল। ৫৮ বলে ৭টি করে ছয়-চারের মারে স্পর্শ করেন তিন অঙ্কের ম্যাজিক ফিগার। সেঞ্চুরির পর হাঁকান আরও ১টি করে চার-ছয়। ১১৬ রান আসে তার ব্যাট থেকে। চলমান আসরে এটি সর্বোচ্চ ব্যাক্তিগত স্কোর।
আগের ম্যাচে তানজীদের ব্যাট থেকে আসে ৭০ রান। ক্রিজে থিতু হয়েও সেঞ্চুরিতে রুপান্তর করতে পারেননি। পরের ম্যাচে আর ভুল করেননি এই বাঁহাতি ব্যাটার। ৩২ বলে ফিফটির দেখা পান। পরের ফিফটি হতে লাগে ২৬ বল। নব্বইয়ের ঘরে গিয়েও হাঁকিয়েছেন ছয়।
সেঞ্চুরির লক্ষ্যে খেলেছেন এই ওপেনার, ‘আমি কখনও এভাবে চিন্তা করি নাই। আমি আগে যা করছিলাম সেট হয়ে আউট হয়ে যাচ্ছিলাম। চেষ্টা করছিলাম যে ভালো শুরু করার পর সেখান থেকে ক্যারি করব। এটাই চেষ্টা করছি আজকে।’
সাগরিকার পাড়ে তানজীদের ব্যাটে ছুটেছে রানের ফোয়ারা। চার ম্যাচে ২৪০ রান। ১ সেঞ্চুরির সঙ্গে আছে ১ ফিফটি। এখানকার উইকেট কি বেস ভালো?, ‘সবাই তো জানে এখানে চট্টগ্রামের উইকেট ব্যাটিং স্বর্গ। এখানে অনেক ভালো উইকেট ছিল।’
খুলনা দলে কোনো বিশেষজ্ঞ অফ স্পিনার ছিলেন না। সেই সুযোগ ভালোভাবে কাজে লাগিয়েছেন এই বাঁহাতি ব্যাটার। দুই বাঁহাতি স্পিনার নাসুম আহমেদ ও আরিফ আহমেদের বিপক্ষে নিয়েছেন ৫৬ রান!
তানজীদ বলেন, ‘আসলে দেখেন ওই দলে কোনো অফ স্পিনার ছিল না। আমি যেহেতু সেট ব্যাটার ছিলাম আমার লক্ষ্য ছিল বল যদি আমার জোনে পাই তাহলে আমি বাউন্ডারির জন্য যাব।’
বিপিএলে দুর্দান্ত খেলে নাঈম শেখ-এনামুল হক বিজয়রা জায়গা করে নিয়েছেন শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে জাতীয় দলে। বিশ্বকাপের পর তানজীদ আর সুযোগ পাননি। ৩৮২ রান নিয়ে তানজীদ আছেন শীর্ষে। এবার সুযোগ না মেলাতেও কোনো আফসোস নেই তার মধ্যে।
‘কখনওই আফসোস না। তারা যেটা ভালো মনে করেছে সেটাই করেছে। আমার কাজ রান করা, পারফর্ম করা আমি সেটাই করে যাব, বাকি সব আল্লাহর ইচ্ছা।’