খেলাধুলা

ত্রয়ীর রসায়ন, ত্রয়ীর আনন্দভোগ

তাই বলে তামিম ইকবাল, মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ ও মুশফিকুর রহিম এক দলে? বিপিএলের প্লেয়ার ড্রাফট চলছিল। তামিমকে আগেভাগে সরাসরি সাইনে ফরচুন বরিশাল লুফে নেয়। আগের আসরে সাকিবকে নিয়েও শিরোপা পায়নি বরিশাল। এবার তাই তামিমকে নিয়ে নতুন চ্যালেঞ্জ বরিশালের।

প্লেয়ার্স ড্রাফটে তামিম প্রথম সুযোগেই নিয়ে নেয় মুশফিকুর রহিমকে। এরপর মাহমুদউল্লাহ রিয়াদকে। একই ক্যাটাগরির দুই ক্রিকেটার। পারিশ্রমিকও এক। একই তাঁবুতে তারা আস্তানা গাড়লেও তিনজনের দুজনই এই ফরম্যাট থেকে বিদায় নিয়েছেন। আরেকজনের ক্যারিয়ার সায়াহ্নে। তাদের সামনে বিপিএল তাই বিরাট চ্যালেঞ্জের। সেই চ্যালেঞ্জ তারা জিতে গেছেন ৪৩ দিনের লম্বা প্রতিযোগিতা শেষে। 

তামিম অধিনায়ক হিসেবে প্রথম বিপিএলের শিরোপা জিতেছেন। মুশফিক ও মাহমুদউল্লাহ প্রথমবার পেয়েছেন শিরোপা। শ্রেষ্ঠত্বের মঞ্চে ত্রয়ীর রয়াসন ফুটে উঠল প্রবলভাবে। যেখানে তামিম শুধু অধিনায়কই নন একজন নেতা হিসেবে সাফল্যের ফুল ফুটিয়েছেন। মুশফিক ও মাহমুদউল্লাহকে তিনি শুধু শিরোপা উৎসর্গ করেননি বরং দুই সিনিয়রকে দিয়েছেন প্রাপ্য সম্মান। 

পুরস্কার বিতরণীতে সঞ্চালক তামিমকে ডেকে নিলে অধিনায়ক প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে বলেন,‘আমি মুশফিকুর রহিম ও মাহমুদউল্লাহকে ডেকে নিতে চাই। এই শিরোপা আমি তাদেরকে উৎসর্গ করছি।’ এরপর তাদের প্রশংসায় ভাসিয়ে তামিম বলেন,‘মুশি (মুশফিক) অসাধারণ কাজ করেছে। মাঠের কাজটা মুশফিকই সামলেছে। ফিল্ডিং সাজানো, বোলিং পরিবর্তন এগুলো ও করেছে। আমি অধিনায়ক ছিলাম বলে ক্রেডিট পাচ্ছি।’

‘এ ধরণের প্রতিযোগিতায় যেটা হয় প্রচুর চাপ থাকে। মুশফিক ওই চাপটা আমার থেকে নিয়ে নিয়েছে। এজন্য আমি নিজের ব্যাটিং ও দলের বিদেশি সংগ্রহের কাজটা সহজে করতে পেরেছি।’ – আরও যোগ করেন বরিশাল অধিনায়ক।

পাশে থাকা মুশফিককে সঞ্চালক প্রশ্ন করেন, ‘আপনার তো এখনো অনেক কিছু দেওয়ার আছে...।’ মুশফিক এর উত্তরে বলেন, ‘ভবিষ্যতে আরও অনেক কিছু দেওয়ার চেষ্টা থাকবে। চেষ্টা করব, নিজের সেরাটা দিতে।’ এই সময় তামিম মুশফিককে থামিয়ে বলেন, ‘বুড়ো, কিন্তু এখনো ফুরিয়ে যায়নি।’

প্রথম শিরোপা জয়ের আনন্দের প্রতিক্রিয়া মুশফিক দেখিয়েছেন এভাবে, ‘এটা আমার তৃতীয় ফাইনাল। কিন্তু প্রথমবার আমি জিতেছি। তামিমকে ধন্যবাদ যেভাবে আমাদের দলটাকে নেতৃত্ব নিয়েছে। এছাড়া পুরো টিম ম্যানেজমেন্টকে কৃতিত্ব দেব। তারা প্রচুর কষ্ট করেছে আমাদের জন্য।’

মুশফিক মাঠে থেকে দলের জয় উপভোগ করতে না পারলেও মাহদুউল্লাহ ছিলেন। জয়ের মুহূর্তটা উপভোগ করেছেন। সতীর্থরা দৌড়ে মাঠে ঢুকে তাকে জড়িয়ে ধরেন। কোলে উঠে পড়েন। মাহমুদউল্লাহ শুরুতে সিজদাহ দিতে চেয়েছিলেন। কিন্তু সতীর্থরা তাকে ঘিরে ধরায় পারেননি। পরে মাঠ ছাড়ার আগে সিজদাহ করে সৃষ্টিকর্তার কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করেন। এরপর দলের প্রত্যেকের সঙ্গে মাঠে নেচে গেয়ে আনন্দভোগ করেন। 

প্রথম শিরোপা জয়ের আনন্দ টের পাওয়া গেল তার কণ্ঠেও, ‘সত্যি বলতে অসাধারণ অনুভূতি। প্রথমে আমি ধন্যবাদ দিতে চাই তামিমকে। এখানে এসে কথা বলার সুযোগ করে দেওয়ার জন্য। আমি চেষ্টা করেছি আমার সেরা ক্রিকেট খেলার। যখনই সুযোগ পাই এটাই করার তাড়না থাকে। এই তো।’

নানা কারণে তামিম, মুশফিক ও মাহমুদউল্লাহ এবার শিরোপা জয়ের চ্যালেঞ্জ নিয়েছিলেন। ৪৩ দিন ও ৪৬ ম্যাচের প্রতিযোগিতা শেষে তাদের মাথায় গেছে সাফল্যের মুকুট। তাদের রয়াসন, আনন্দভোগই বলে দিচ্ছি এই শিরোপা কতটা আরাধ্য ছিল তাদের।