খেলাধুলা

জাকের বীরত্বের পর হৃদয় ভাঙলো বাংলাদেশের

সব আলো ছিল তার ওপর। ৫৬ হাজার বর্গমাইল জেগে উঠার অপেক্ষায় ছিল। স্রেফ দুটি বাউন্ডারি মিলিয়ে দিতে পারত সমীকরণ। ২০০ স্ট্রাইক রেটে ব্যাটিং করে আসা জাকের আলী আগে ৬টি ছক্কা মেরে শ্রীলঙ্কার বোলারদের নাকানি-চুবানি খাইয়ে দিয়েছিলেন। এখন কেবল বন্দরে নোঙর করার পালা। কিন্ত তীরে এসে তরী ভেড়াতে পারলেন না। ৩৪ বলে ৬৮ রানের বিস্ফোরক ইনিংস খেলার পরও জাকের বাংলাদেশকে জেতাতে পারেননি ৩ রানে। তাতে সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে আরো একবার হৃদয় ভাঙলো বাংলাদেশের।

টস জিতে শ্রীলঙ্কাকে ব্যাটিংয়ে পাঠাতে নতুন অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্তর ভাবনায় ছিল কেবল শিশির। প্রতিপক্ষের লম্বা ব্যাটিং লাইন আপ নিয়ে কাটাছেঁড়া হয়েছিল কিনা তা নিয়ে বিরাট সংশয়। যদি হতো তাহলে ঝুঁকি নিতোই না! কেননা সিলেটে প্রথম টি-টোয়েন্টিতে আগে ব্যাটিংয়ের সুযোগ পেয়ে শ্রীলঙ্কা তুলে নেয় ২০৬ রানের বিশাল পুঁজি। যেখানে শুরুতে ম্যাচ নিজেদের নিয়ন্ত্রণে রেখেছিল ঠিকই। কিন্তু শেষে প্রতিপক্ষের ঝড়ে স্রেফ উড়ে যায় স্বাগতিকরা।

২০১৮ সালে এই মাঠে ২১০ করার অভিজ্ঞতা আছে শ্রীলঙ্কার। ছয় বছর পর সিংহের দলই এই মাঠে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রান করলো। ওই ম্যাচটাতেও বাংলাদেশ জেতেনি। ফল পাল্টালো না এই ম্যাচেও।

জবাব দিতে নেমে শেষ রোমাঞ্চে স্নায়ু স্থির রেখেও ম্যাচটা জিততে পারেনি। ৮ উইকেটে করেছে ২০৩ রান। শেষের প্রতিরোধের পরও ম্যাচ হেরেছে ৩ রানে। তাতে তিন ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজ বাংলাদেশ পিছিয়ে গেল ১-০ ব্যবধানে।

শেষ ৬ বলে বাংলাদেশের প্রয়োজন ছিল ১২ রান। আগের ৫ ওভারে ৭১ রান পাওয়া বাংলাদেশের হাতেই ছিল ম্যাচ। কিন্তু প্রথম দুই বলে কোনো বাউন্ডারি না আসায় সমীকরণ কঠিন হয়ে যায়। প্রথম বলে রিশাদ আউট হন। তাসকিন দ্বিতীয় বলে পান ১ রান। মাঝে একটি ওয়াইডও ছিল। তাতে জাকের ৪ বলে ১০ রানের সমীকরণ পান। কিন্তু তৃতীয় বলে ম্যাচের ভাগ্য লিখে ফেলে শ্রীলঙ্কা। শানাকার বলে জাকের উড়ালেও বল শ্রীলঙ্কার অধিনায়ক চারিথ আসালঙ্কা জমিয়ে নেন হাতে। নতুন ব্যাটসম্যান শরিফুল পরের বলে চার হাঁকলেও শেষ দুই বলে কেবল দুই রান নিতে পারেন শরিফুল ও তাসকিন। এক আকাশ অভিমান নিয়ে শেষ হয় এই লড়াই।

শ্রীলঙ্কার শেষের ঝড় ও শুরুর বোলিংয়ে ম্যাচে রোমাঞ্চ ছড়িয়েছিল। ১০ ওভারে শ্রীলঙ্কার রান ছিল ২ উইকেটে ৭৯। পরের ১০ ওভারে রান চূড়া ছুঁয়ে ফেলে। ১ উইকেট হারিয়ে অতিথিরা যোগ করে ১২৭ রান। এলোমেলো বোলিং আর নির্বিষ আক্রমণে প্রতি ওভারেই বাউন্ডারি-ওভার বাউন্ডারি হজম করেছেন বোলাররা। অন্যদিকে শ্রীলঙ্কার দুই ব্যাটসম্যান সামারাবিক্রমা ও আসালঙ্কা ছিলেন দুর্দান্ত। দুজনের চতুর্থ উইকেট জুটিতে মাত্র ৩৩ বলে ৭৩ রান পায় শ্রীলঙ্কা।

৪৮ বলে ৬১ রানে অপরাজিত থাকেন সামারাবিক্রমা। ৮ চারের সঙ্গে ১ ছক্কা হাঁকান। আর আসালঙ্কা ম্যাচটা বাংলাদেশের থেকে ছিনিয়ে নেন। ২১ বলে ৬ ছক্কা হাঁকিয়ে করেন ৪৪ রান। তাদের বড় পুঁজির ভিত গড়ে দেন কুসল মেন্ডিস। ৩৬ বলে ৫৯ রান করেন ৬ চার ও ৩ ছক্কায়।

শরিফুলের করা ইনিংসের ১৩তম ও মোস্তাফিজের শেষ ওভার ছিল সবচেয়ে ব্যয়বহুল। শরিফুল এক ছক্কা ও তিন চারে বিলিয়ে আসেন ২১ রান। মোস্তাফিজ দুটি করে চার ও ছক্কায় দেন ২৪ রান।

বোলারদের শেষের এলোমেলো বোলিংয়ের পর শুরুর ব্যাটসম্যানরাও ছিলেন তালগোল পাকানো। লিটন স্কোরবোর্ডে কোনো রান যোগ না করেনই ম্যাথুউজের বলে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দেন প্রথম বলে। সৌম্য ১১ বলে ২ বাউন্ডারিতে ১২ রান করে ফেরেন ড্রেসিংরুমে। তাওহীদ হৃদয় উইকেট ছেড়ে প্রথম বলে মেরেছিলেন ছক্কা। ম্যাথুউসকে একই শট খেলতে গিয়ে ৮ রানে থেমে যান। শান্তও পারেননি ইনিংস বড় করতে। ২২ বলে ২০ রান করে পাথিরানার শর্ট বলে মিড উইকেটে ক্যাচ দেন।

ব্যাটসম্যানদের আসা-যাওয়ার এই মিছিলে দেয়াল হয়ে দাঁড়িয়ে প্রতি আক্রমণে গিয়ে রান তুলছিলেন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। লম্বা সময় পর ফিরে যেই আত্মবিশ্বাস নিয়ে ব্যাটিং করেছেন তা প্রশংসা পাওয়ার মতোই। তাকে দারুণ সঙ্গ দেন জাকের আলী। দুজনের দারুণ জুটিতেই ম্যাচে ফেরে বাংলাদেশ। মাহমুদউল্লাহ ২৭ বলে ফিফটি ছোঁয়ার পর ৪ রান যোগ করে আউট হলেও জাকের ব্যাট চালিয়ে যান। ৩১ বলে মাহমুদউল্লাহ ৫৪ রান করেছেন ২ চার ও ৪ ছক্কায়।

ছক্কায় রান তোলা জাকের পেয়ে গিয়েছিলেন ফ্রি লাইসেন্স। কোনো বোলারকেই পাত্তা না দিয়ে উইকেটের চারিপাশে শট খেলে রান তুলছিলেন। ২৫ বলে প্রথম ফিফটি পান ১ চার ও ৬ ছক্কায়। ওখানেই থেমে থাকেননি। পরের ৯ বলে আরো ১৮ রান যোগ করে ম্যাচটা নাগালের কাছাকাছি নিয়ে যান।

শেষ ওভারে জাকের যখন স্ট্রাইক পান তখন ৪ বলে ১০ রান লাগত বাংলাদেশের। কিন্তু শানাকার ক্রস সিম ফুল ডেলিভারিতে টাইমিং মেলাতে পারেননি জাকের। লং অফে ক্যাচ দেন অধিনায়কের হাতে। বল জমিয়ে দলের জয়টাও নিশ্চিত করে ফেরেন আসালঙ্কা। ব্যাট হাতে ঝড় তুলে আর ৩ ক্যাচ লুফে নিয়ে দলের নায়কও হওয়ার পাশাপাশি ম্যাচসেরাও হয়েছেন তিনি।