টেস্টে মাইলফলক অর্জন যে কোনো ক্রিকেটারের জন্যেই বিশেষ সম্মানের। আর যদি তা হয় সেঞ্চুরির মাইলফলক ছোঁয়ার, তাহলে অর্জনের আনন্দ দ্বিগুণ হয়ে যায়। ভারতের ক্রিকেটার রবিচন্দ্রন অশ্বিনের শততম টেস্ট খেলার সেই আনন্দ ছুঁয়ে গেছে তার স্ত্রী পৃথী নারায়ণকে।
অশ্বিনের শততম টেস্ট উপলক্ষ্যে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম ‘ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস’-এ একটি কলাম লিখেছেন পেশায় প্রকৌশলী পৃথী। সেখানেই স্বামীর প্রতি ভালোবাসা, আবেগ, ত্যাগের সব কথাই তুলে ধরেছেন তিনি।
শুরুতেই অশ্বিনের শততম টেস্টের কথা উল্লেখ করে পৃথী লিখেছেন, ‘আমার স্বামী রবিচন্দ্রন অশ্বিন ১০০তম টেস্ট খেলার দুয়ারে দাঁড়িয়ে। আর আমাদের বিয়ের বয়স হলো ৯৮ টেস্ট। তার অভিষেকের পরপরই আমাদের বিয়ে হয়। পাঁচ বছর আগেও আমি এসবের হিসাব রাখতাম, কিন্তু তারপর আগ্রহটা কমে আসে। এসবে আচ্ছন্ন হতে চাইনি। দ্রুতই ৯৯ টেস্ট চলে গেল।’
একজন পেশাদার ক্রিকেটারের জীবন কতোটা ভিন্ন সেটা উল্লেখ করে পৃথী আরও লিখেছেন, ‘লোকে বাইরে থেকে যা ভাবে, একজন পেশাদার ক্রিকেটারের জীবন তা থেকে একদমই আলাদা। বিয়ের আগে আমরা ডেটিংয়ে যাইনি। কোনো প্রস্তুতি ছিল না। বিয়ের পরই ওর অভিষেক টেস্টের জন্য আমাকে কলকাতায় যেতে হয়েছিল।’
তবে স্বামীর জন্য ত্যাগ-তিতিক্ষার সবটুকুই নিংড়ে দিয়েছেন পৃথী, ‘খেলাটিকে কতটা ভালোবাসার জন্য এসব অসুবিধা আমি উতরে যেতে পেরেছি জানি না। আমি জানি, আমি তাকে ভালোবাসি। তবে তার কাজকে ভালো না বাসলে আজ আমি যা করছি, সেটা কি করতাম? তাকে নিয়ে আমি যা যা গড়তে পারতাম, সেসবের বেশির ভাগই কেড়ে নিচ্ছিল ক্রিকেট। আমার বুঝতে সময় লেগেছে যে সর্বোচ্চ পর্যায়ে সফল হতে হলে কিছু না কিছু ত্যাগ করতেই হয়।’
ক্রিকেট একজন ক্রিকেটারের কাছে জীবনের একটি অংশ। সেটা স্ত্রী কিংবা সন্তান থেকে কম নয়। অশ্বিনও এর ব্যক্রিক্রম নন জানিয়ে পৃথীর ভাষ্য, ‘২০১৭ সালে তার ক্যারিয়ারের বড় বাঁকবদল হয়। বছরটির মার্চ মাসে সে আমাকে বলেছিল, বোলিংয়ে বৈচিত্র্য না আনতে পারলে দল থেকে ছিটকে পড়বে। সত্যি সে বছরের মাঝামাঝিতে সীমিত সংস্করণের দল থেকে বাদ পড়ে। তখন সময়টা খুব কঠিন ছিল।’
মাঠের ক্রিকেটার অশ্বিন বাবা হিসেবে কেমন? এই প্রশ্নের উত্তর বেশ গুছিয়ে দিয়েছেন তার স্ত্রী, ‘বাবা হিসেবে সে কর্তব্যপরায়ণ। স্কুলে বাচ্চাদের সঙ্গে দৌড়াতে ভালোবাসে। বাচ্চাদের সে ব্যাট করতে শেখায়। আইপিএল শেষে হয়তো বোলিং করতেও শেখাবে। তামিল সিনেমারও পাগল। বাচ্চাদের মাথায় তামিল সিনেমার পোকা ঢুকিয়ে দিয়েছে। তাই সে বাসায় এলে বাচ্চারা টিভি দেখার জন্য একটু বেশিই সময় পায়।’
বাবা-মায়ের জন্যেও নিবেদিতপ্রাণ সন্তান অশ্বিন। সেটার উদাহরণ টানতে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে চলতি সিরিজের রাজকোট টেস্টের উদাহরণ টেনে পৃথী বলেন, ‘ওর ৪৯৯ উইকেটের সময় তেমন আনন্দদায়ক হয়নি। কারণ, অশ্বিন ৫০০তম উইকেটটি পাওয়ার পরপরই মা (অশ্বিনের মা) পড়ে গিয়ে আঘাত পান। ফোনে তাকে বিষয়টি জানালে কণ্ঠ শুনে মনে হয়েছিল সে ভেঙে পড়েছে।’
‘মাকে আইসিইউতে দেখাটা তার জন্য খুব আবেগময় মুহূর্ত ছিল। মা একটু সুস্থ হয়ে ওঠার পর আমরা তাকে দলে ফিরতে বলি। তার ব্যক্তিত্ব বিচারে বলতে পারি, ওভাবে ম্যাচ ছেড়ে আসার মতো মানুষ সে নয়। ওই কদিনে বুঝতে পেরেছিলাম, বাবা–মায়ের সঙ্গে তার কী গভীর সম্পর্ক এবং বয়স আর পরিণত হওয়ার সঙ্গে এটা আরও বেড়েছে।’ - যোগ করেন পৃথী।
ক্রিকেট ও ব্যক্তি জীবনে ভিন্ন দর্শনে চলা অশ্বিনের স্ত্রী শেষটা করেছেন হৃদয় নিংড়ানো ভালোবাসা দিয়ে, ‘এই লেখা যখন লিখছি, তখন আমরা ধর্মশালায় রওনা দেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছি। কী যে আনন্দ লাগছে! অভিনন্দন অশ্বিন। আমরা একসঙ্গে ৯৯ টেস্ট পর্যন্ত এলাম। তুমি যেসব ম্যাচ খেলেছো, যেসব খেলোনি—আমরা সবকিছু নিয়েই গর্বিত। এই অভিযাত্রা মনোমুগ্ধকর ছিল। আশা করি, বাকি পথেও তুমি আনন্দ পাবে।’