খেলাধুলা

পাতা ফাঁদে পা দিয়ে ‘ফেল’ ব্যাটসম্যানরা

সোমবার সকালের সেশন খুব ভালোভাবে কাজে লাগাতে চেয়েছিল শ্রীলঙ্কা। আগের দিন মাহমুদুল হাসান জয়ের উইকেট নিয়ে খুশি ছিল লঙ্কান শিবির। স্কোরবোর্ডে ৫৩১ রান নিয়ে বাংলাদেশকে যত দ্রুত অলআউট করতে পারবে ততই লাভ। কিন্তু নাইটওয়াচম্যান হিসেবে নামা তাইজুল ইসলামকে নিয়ে আগের দিনের অপরাজিত ব্যাটসম্যান জাকির হাসান প্রথম ঘণ্টা কাটিয়ে দেন অনায়াসে।

মাত্র ৩০ রান যোগ করলেও শ্রীলঙ্কার তিন পেসার বিশ্ব ফার্নান্দো, আসিথা ফার্নান্দো ও লাহিরু কুমারাকে সামলে নেন সহজেই। জাকির হাসান দুয়েকটি শট খেলে রান বাড়ালেও তাইজুল মাটি কামড়ে পড়ে ছিলেন। প্রথম ঘণ্টায় শ্রীলঙ্কার বোলারদের পরিকল্পনা কাজে না লাগায় দ্বিতীয় ঘণ্টায় তারা নতুন কিছুর চেষ্টা চালায়। উইকেটে দুই বাঁহাতি ব্যাটসম্যান থাকায় ওয়াইড ক্রিজ থেকে বল ভেতরে ঢোকানো শুরু করেন বাঁহাতি পেসার আসিথা। ব্যস, তাতেই সাফল্য।

ওয়াইড ক্রিজ থেকে বল লেগ স্টাম্প বরাবর আঘাত হানে। জাকির হাসান ওই পাতা ফাঁদে আটকে পড়ে বোল্ড হন। চার ওভার পর তাইজুলও বোল্ড হয়ে ড্রেসিংরুমের পথ ধরেন। পরবর্তীতে দ্বিতীয় সেশনে সাকিবের জন্যও একই পরিকল্পনা করে তারা। লেগ স্টাম্প বরাবর বারবার বল করে রান আটকে দেয়। শর্ট অব লেন্থে বল করায় সাকিব শাফল করেছিল কয়েকবার। পরে ওয়াইড অ্যাঙ্গেল থেকে একটি বল খাড়াভাবে ভেতরে ঢুকলে সাকিব এলবিডব্লিউ হন।

শ্রীলঙ্কার এমন বোলিংয়ে নিজেরা ভালো করতে না পারার দায় নিলেন জাকির, ‘আমাদের তো ওই পার্টিকুলার ডেলিভারি ফেস করতে হবে। আমার কাছে যেটা মনে হয়েছে যে আজকে বেশি বাতাস থাকার কারণে অনেক উইকেটে পড়েছে। আদারওয়াইজ সবই ঠিক ছিল। উইকেট ওয়াইজ সবই ভালো ছিল। কিন্তু ওইটা যদি বলি ওই পার্টিকুলার বলের জন্য, এটা আসলে কোনো কথা হতে পারে না যে এটার জন্য আউট হয়ে গেছি। আমাদের ওইখানে আরও ভালো খেলার দরকার ছিল।’

শুধু ওই পাতা ফাঁদেই নয়, নিজেদের সামর্থ্য দেখাতে না পেরে পুরোপুরি ব্যর্থ ব্যাটসম্যানরা, এমন কথা বলতেও দ্বিধা করেননি জাকির, ‘আসলে কারণটা আর…কী বলব আমরা সম্পূর্ণভাবে ফেল করেছি। আমরা কেউ সামর্থ্য অনুযায়ী পারফর্ম করতে পারিনি। আমার কাছে মনে হয় যে, আমরা আমাদের যে ভূমিকা ছিল, ওই ভূমিকাও আমরা পালন করতে পারিনি। আপনি যদি বলেন ব্যাটিংয়ের ক্ষেত্রে আমরা যেই রকম খেলার কথা ছিল আমরা ওই রকম খেলতে পারিনি।’

সিলেটের মতো এই ম্যাচের নাটাইও অতিথিদের হাতে। ম্যাচ বাঁচাতে এই ম্যাচে ব্যাটসম্যানদের কঠিন পরীক্ষা দিতে হবে। চতুর্থ ও পঞ্চম দিন অন্তত পাঁচ থেকে সাড়ে পাঁচ সেশন লড়াই করতে হবে। ব্যর্থতা ঝেড়ে সামনে ভালো করতে মুখিয়ে জাকির, ‘আমি চেষ্টা করি প্রত্যেকদিনই নতুনভাবে শুরু করার। আসলে অন্য কেউ এটা করল কি না আমি জানি না। কিন্তু আমার মনে হয় যে ওইগুলো (আগের ব্যর্থতা) চিন্তা না করে বর্তমানেই যদি আমরা ভালো পারফর্ম করতে পারি সেটাই গুরুত্বপূর্ণ হবে আমাদের জন্য।’

শেষ পাঁচ ইনিংসে বাংলাদেশের দলীয় রান দুইশ পেরোতে পারেনি। ২০১৮ সালের পর এবারই প্রথম টেস্টে ঘরের মাঠে টানা পাঁচ ইনিংসে দুইশ করতে পারেনি স্বাগতিকরা। কেন ব্যাটসম্যানদের পারফরম্যান্স ধারাবাহিকভাবে খারাপ হচ্ছে, দলীয়ভাবে কেউ দায়িত্ব নিতে পারছে না কেন সেই উত্তর জাকিরের কাছে নেই। তবে নিজের দূর্বলতা নিয়ে খোলামনে কথা বলেছেন, ‘শট নির্বাচনে একটু সতর্ক হলে ভালো হয় আমার জন্য। একটা টেস্ট ম্যাচ খেলতে আসলে প্রস্তুত হয়ে আসতে হবে আমার। এই মানসিকতা আমার দিক থেকে গড়ে উঠা জরুরী।’

সঙ্গে ব্যাটসম্যানদের ভালো করা কতটা জরুরী সেটাও বোঝালেন, ‘একটা টেস্ট ম্যাচ বা যে কোনো ম্যাচই জিততে হলে বোলাররা ভালো বল করলে হবে না। আমাদের সব বিভাগে ভালো করতে হবে। ধরেন বোলিং, ফিল্ডিং এবং ব্যাটিং। ব্যাটিং তো খুব গুরুত্বপূর্ণ। যদি স্কোরবোর্ডে রান দিতে না পারি, হ্যাঁ আমরা কখনই ডিফেন্ড করতে পারব না। ২০ উইকেট নিতে হলেও কিন্তু ওই রকম একটা রান দিতে হয়। ওইটা আমরা পারছি না। আমাদের কথা হচ্ছে। আমরা চেষ্টা করছি। কিন্তু কোনো না কোনোভাবে আমরা সবাই ফেল করছি।’

দ্বিতীয় ইনিংসে একটি সুযোগ আছে নিজেদের মেলে ধরার। যদি এবারও ব্যর্থ হয় তাহলে বিশাল পরাজয়কে সঙ্গী করতে হবে।