খেলাধুলা

‘অপরাধবোধ’ নেই, আছে কেবল খারাপ লাগা

প্রশ্নটা বিশাল বড়। যতটা বড় হারের ক্ষত। অবশ্য সিলেট থেকে চট্টগ্রামে এসে সেই ব্যবধান কমেছে। মানচিত্রের দুই প্রান্তের দুই শহরে শ্রীলঙ্কা বাংলাদেশকে একই লক্ষ্য ৫১১ ছুঁড়ে দিয়েছিল। সিলেটে বাংলাদেশ হেরেছিল ৩২৮ রানে। এবার চট্টগ্রামে ১৯২। ব্যাটিং ব্যর্থতা, ফিল্ডিংয়ে অমনোযোগীতা দুইয়ে মিলিয়ে দুই টেস্টে একাকাবার বাংলাদেশ।

দুই টেস্টে ব্যর্থতার বৃত্তে ঘুরপাক খেয়েছে শান্ত অ্যান্ড কোং। ধারাবাহিকভাবে ব্যর্থ হওয়ার পর, খুব বাজেভাবে ম্যাচ হারের পর এবং একই কারণে বারবার কাঠগড়ায় দাঁড় করানোতে ক্রিকেটারদের মধ্যে কি অপরাধবোধ কাজ করে কিনা বুধবার চট্টগ্রাম টেস্ট শেষে সেই প্রশ্ন উঠল। অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্তর অপরাধবোধ শব্দ নিয়ে আপত্তি। তবে এভাবে প্রত্যেকবার অসহায় আত্মসমর্পণ, নিজেদের উইকেট আত্মাহুতি দিয়ে এসে খারাপ লাগা কাজ করে তাদেরও।

নাজমুলের কণ্ঠেই শুনুন বাকিটা, ‘অপরাধবোধের কথাটা আসলে এই শব্দটা ব্যবহার করতে চাই না। তবে এটা বলতে পারি দল খারাপ করার পরে খারাপ লাগাটা কাজ করে এবং কীভাবে এটা (পারফরম্যান্স) আরও ভালো করতে পারি দলের জন্য ওই জিনিসগুলা সবসময় প্রত্যেকটা খেলোয়াড়ের মধ্যে থাকে।’

টেস্ট ক্রিকেটের প্রতি আগ্রহ বাড়াতে এবং খেলোয়াড়ের আরও উদ্বুদ্ধ করতে বিসিবি নানা পদক্ষেপের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে, খেলোয়াড়দের ম্যাচ ফি বাড়ানো। গত ফেব্রুয়ারিতে বোর্ডের শেষ সভায় টেস্ট ক্রিকেটের ম্যাচ ফি ৮ লাখ টাকা হয়েছে। বিশাল অঙ্কের এই পারিশ্রমিক পেলেও খেলার মানে রয়েছে বিশাল ঘাটতি। সাদা বলের ক্রিকেটে যেভাবে ক্রিকেটাররা নিবেদন দেখান, জয়ের তাড়না দেখান লাল বলে সেই ঘাটতি রয়েছে তা বিভিন্ন সময়েই তারা স্বীকার করেছেন।

এক্ষেত্রে ম্যাচ ফি কোনো প্রভাব ফেলে না বলে দাবি নাজমুলের, ‘একটা খেলোয়াড় যখন ব্যর্থতাগুলো মূল্যায়ন করে তখন  আসলে ম্যাচ ফি বেশি পেলাম না কম পেলাম এটা নিয়ে চিন্তা খুব বেশি করে না। প্রত্যেকটা প্লেয়ার ১০০% চেষ্টা থাকে কীভাবে আমি দলকে ভালো কিছু দিতে পারি।’ 

ম্যাচ হারলে, লাগাতার পারফর্ম না করলে ড্রেসিংরুমের পরিবেশ স্বস্তিকর থাকে না। তখন জানা কাজগুলোতেও ভুল হয়। পরিকল্পনা বাস্তবায়নে ঘাটতি থেকে যায়। তবে বাংলাদেশের অধিনায়ক জানালেন, এখনও ড্রেসিংরুমে অস্বস্তির কিছু তৈরি হয়নি। বরং পারস্পরিক বোঝাপড়ার ভালো কিছুর অপেক্ষায় আছেন তিনি, ‘ড্রেসিংরুমে একজন আরেকজনের সাথে কথা বলে (ব্যর্থতা নিয়ে)। কীভাবে আরেকটু ভালো করতে পারি, কীভাবে আরেকটু উন্নতি করতে পারি। যখন খারাপ খেলি যখন ভালো খেলি তখনও চিন্তা থাকে আমরা কীভাবে আরেকটু ভালো ক্রিকেট খেলতে পারি। এই খারাপ লাগা সবার মধ্যে থাকে। ওই জায়গা থেকে বের হওয়ার জন্য সবার কী কী দরকার কী ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া দরকার ওই জিনিসটা সবাই আমার মনে হয় ১০০% অনুশীলনে দেয়।’ 

সাম্প্রতিক সময়ের পারফরম্যান্সের কারণে ক্রিকেটাররা প্রবল সমালোচনায় বিদ্ধ। বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান পাপনও তাদের সমালোচনা করে বলেছেন, ‘টেস্ট খেলার মানিসকতাই নেই ক্রিকেটারদের। জঘন্য।’ এছাড়া দর্শকদের সমালোচনা রয়েছে। তবে বাইরের কিছু দলে প্রভাব পড়ছে না বলে দাবি নাজমুলের। নিজেদের ঐক্যতে তাদের পূর্ণ আস্থা, ‘বাইরে অনেক কথা হবে। বাইরের কথা আমাদের নিয়ন্ত্রণে নাই। আমি এতটুকু বলতে পারি প্রত্যেকটা খেলোয়াড় একসাথে আছে। প্রত্যেকটা খেলোয়াড় একজন আরেকজনকে ব্যাক করছে। সবাই মেনে নিয়েছি যে আমরা ভালো খেলি নাই। এই জায়গা থেকে বের হওয়ার জন্য আমাদের কী কী করা দরকার ওই অনুযায়ী আমাদের কাজ করতে হবে। সামনে টেস্ট ম্যাচ আরও দেরি আছে। এই সময়ে যারা শুধু টেস্ট খেলে তারা সেভাবে প্রস্তুতি নেবে। সবাই একসাথে আছে এতটুকু আমি বলতে পারি।’