ক্রীড়াপ্রেমি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঠাট্টা করে কথাটা বলেছিলেন, ‘তোমাকে অস্ট্রেলিয়া পাঠিয়ে দেব। সেখানেই ট্রেনিং করবা।’ অস্ট্রেলিয়া ও বাংলাদেশের নারী ক্রিকেটাররা গণভবনে দেখা করতে গেল বাংলাদেশের অধিনায়ক নিগার সুলতানাকে ডেকে কথাটা বলেছিলেন।
ইশ! প্রধানমন্ত্রী যদি ঠাট্টা না করে সত্যিই নির্দেশ দিতেন। পাশে থাকা বিসিবির প্রধান ও ক্রীড়ামন্ত্রী নাজমুল হাসান পাপনকে ডেকে যদি বলতেন, জ্যোতিদের অস্ট্রেলিয়া পাঠানোর ব্যবস্থা করো।’ তাহলে মন্দ হতো না নিশ্চয়ই।
অ্যালিসা হিলি কিংবা এলিস পেরি বিশ্ব ক্রিকেটে কতটা সমাদৃত তা সবারই জানা। বাংলাদেশের মাটিতে প্রথমবার খেলতে এসে অসি নারীদের সেই দাপট দেখেছে স্থানীয়রা। জ্যোতিদের তাই ‘বড়’ করতে হলে অস্ট্রেলিয়ার মতো সুযোগ সুবিধা আর ট্রেনিংয়ের বিকল্প নেই। মিরপুরে অনুশীলন করে অন্তত ‘অস্ট্রেলিয়া’ হবে না তা শতভাগ নিশ্চিত করেই বলা যায়। ওই সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করা কি সত্যিই খুব কঠিন?
ক্রিকেট সংশ্লিষ্টরা জোর গলায় বলতে পারেন, সঞ্চয়ের হাজার কোটি ছাড়িয়ে গেছে বিসিবি। আর নাজমুল হাসান তো সুখবরটা এজিএমে দিয়েছেন এভাবে, অর্থের দিক থেকে বিসিবি বিশ্বের চতুর্থ ধনী ক্রীড়া সংস্থা। তাহলে অর্থ নিয়ে কোনো জটিলতা নেই। জটিলতা কোথায়? সদিচ্ছার অভাব। সামনেই টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ। তাও ঘরের মাটিতে। চটজদলি কোনো ব্যবস্থা না নিলে মাঠের পারফরম্যান্স কেমন হতে পারে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে তিন ম্যাচের ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টি সিরিজে দেখা হয়ে গেছে নিশ্চয়ই।
নারী ক্রিকেটের ক্ষত আজই তরতাজা হলো। পুরুষদের দেওয়া ক্ষত এখন জ্বালাপোড়া করছে। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে টেস্ট সিরিজে অসহায় আত্মসমর্পণ। সিলেটে ৩২৮ রানে। চট্টগ্রামে ১৯২ রানে। শুনতে প্রহসন মনে হতে পারে তবে সাদা পোশাকের ক্রিকেটে সিলেটে থেকে চট্টগ্রামে ফিরে কিছুটা উন্নতি হয়েছে। উন্নতিটা এমন পাঁচ ইনিংস পর দলীয় স্কোরবোর্ড দুই’শ পেরিয়ে যাওয়া। টেস্ট ম্যাচ পাঁচ দিনে নিয়ে যাওয়া।
দুঃসময়েও ‘টিটকারি’। আসলে এই ‘টিটকারিটা' দিচ্ছেন খোদ ক্রিকেটার, ক্রিকেট সংশ্লিষ্টরা। যারা টেস্ট স্ট্যাটাস পাওয়ার ২৩ বছর পেরিয়ে যাওয়ার পরও বলতে দ্বিধা করেন না, ‘আমাদের প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটের মান ভালো নয়।’ অথচ এর দায়টা যে তাদেরই সেটা কেউ মুখ ফুটে বলেন না। এক নির্বাচককে এক আড্ডায় বলতে শোনা যায়, ‘ওইটা আনপ্লেয়েবল ডেলিভারি ছিল। ব্যাটসম্যান আনলাকি।’ অথচ ন্যাড়া উইকেটে বলের কোনো কারুকার্যতা ছিল না। ব্যর্থতা ঢাকতে আর কত কিছু করবেন তারা!
ক্রিকেটারদের কথাই বলুন। সিনিয়র ক্রিকেটাররা তো সুযোগ থাকার পরও প্রথম শ্রেণির দুই ক্রিকেট প্রতিযোগিতা জাতীয় ক্রিকেট লিগ বা বাংলাদেশ ক্রিকেট লিগ খেলেন না। এই মৌসুমের বাংলাদেশ ক্রিকেট লিগ শেষ হয়েছে গত নভেম্বরে। এরপর লাল বলের ক্রিকেটে খেলার কোনো সুযোগ নেই। অথচ শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে জাতীয় দলের ক্রিকেটাররা মাঠে নেমেছে সাদা বলের ক্রিকেটে টানা তিন মাস খেলার পর। বিসিএল ওয়ানডে ফরম্যাটের পর, বিপিএল এবং ঢাকা লিগ। ফলে প্রস্তুতির বিশাল এক পার্থক্য ছিল।
ক্রিকেটের মান নিয়ে রয়েছে আরও বড় প্রশ্ন। শেষ কয়েক মৌসুমে তাও মিনহাজুল আবেদীন নান্নু ও হাবিবুল বাশারের নির্বাচক কমিটি কিছু ঘাসের উইকেট বানিয়েছিলেন। তাতে কয়েকজন ভালোমানের পেস বোলার উঠে এসেছে। কিন্তু ওইটুকু বাদে প্রথম শ্রেণির ক্রিকেট থেকে ‘পিকনিক টুর্নামেন্টের’ কালিমা খুব একটা সরেনি। লিগ শুরু হওয়ার দুদিন আগে জড়ো হয়ে বিভাগীয় ক্রিকেটাররা অনুশীলন করেন। এরপর টানা খেলা। ওই প্রতিযোগিতা শেষে সারা বছর আর লাল বলের ক্রিকেটের খবর থাকে না। কোনো মূল্যায়ন হয় না। নতুন কোনো ক্রিকেটারও খোঁজা হয় না। ফলে যারা আছে কেবল তাদের নিয়েই লড়াই।
অধিনায়ক শান্ত সময় দেওয়ার আহ্বান করলেন। পালাবদলের সময় যাচ্ছে বলেই তার সময়ের দাবি। অথচ তিনি ভুলে গেছেন হয়তো ২৭ টেস্ট তারও খেলা হয়ে গেছে। মিরাজ, লিটনদের সংখ্যাটা চল্লিশ পেরিয়েছে। মুমিনুলেরও ফিফটি পূরণ হয়েছে অনেক আগে। তাদের পারফরম্যান্সের সূর্য এখন মধ্যগগনে থাকার কথা। অথচ তারাও পায়ের নিচের মাটি শক্ত করার অপেক্ষায়! তাদের ভাবনা, মননেও যে বিশাল এক ফারাক তা উদ্ভট কথাবার্তাতেও বেরিয়ে আসে।
শুরুর কথাতেই শেষ করা যাক। ব্যাংকে বিসিবির হাজার কোটি টাকা। অথচ মাঠের ক্রিকেটে বড়লোকি নেই। হুটহাট পাওয়া সাফল্যগুলো ব্যর্থতাগুলো আড়াল করে দেয়। অথচ অতি পেশাদার ক্রিকেটার, সংগঠক, বোর্ড ওই ব্যর্থতাগুলো আড়াল না করে সামনে এনে ঘষামাঝা করেই সামনে এগিয়ে যাওয়ার শপথ করে। বিসিবি অবশ্য আশ্বাস দিয়েছে, ‘ঈদের পর ব্যর্থতার কারণ খুঁজবে।’