পাকিস্তানের সাবেক অধিনায়ক বিসমাহ মারুফ তার ১৭ বছরের আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারের ইতি টানলেন। আজ বৃহস্পতিবার অবসর ঘোষণা দিয়েছেন। আন্তর্জাতিক ক্রিকেট না খেললেও লিগে খেলা চালিয়ে যাবেন।
অবসর ঘোষণা দিয়ে তিনি লিখেন, ‘আমি যে খেলাটিকে সবচেয়ে বেশি ভালোবাসি সেটা থেকে অবসর নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। এটা ছিল অবিশ্বাস্য এক যাত্রা, যে যাত্রায় চ্যালেঞ্জ ছিল ভরপুর, ছিল বিজয়, অবিস্মরণীয় সব স্মৃতি। আমার ক্রিকেট ক্যারিয়ারের শুরু থেকে আজ পর্যন্ত যারা আমায় নিরলসভাবে সহযোগিতা করেছে আমি আমার সেই পরিবারের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাতে চাই।’
‘ধন্যবাদ জানাতে চাই পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ডকে (পিসিবি) আমার প্রতি বিশ্বাস রাখার জন্য, আমার প্রতিভা দেখানোর সুযোগ করে দেওয়ার জন্য। আমার প্রতি পিসিবি যে সমর্থন দেখিয়েছে সেটা ছিল অমূল্য। বিশেষ করে আমার জন্যই তারা প্রথমবার ‘প্যারেন্টাল পলিসি’ তৈরি করেছিল। যে কারণে সর্বোচ্চ পর্যায়ে আমি আমার দেশকে প্রতিনিধিত্ব করতে পেরেছিলাম মা হয়েও।’
‘সবশেষে আমি আমার সতীর্থদের ধন্যবাদ জানাতে চাই। যারা আমার কাছে ছিল পরিবারের মতো। মাঠে এবং মাঠের বাইরে আমাদের যে স্মৃতি সেটি আমি আজীবন মনে রাখবো।’
পাকিস্তানের অন্যতম সেরা এই নারী ক্রিকেটার অবসরের সময় নিজের নামটি সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহকদের তালিকায় শীর্ষে রেখেছেন। সর্বোচ্চ ১৩৬ ওয়ানডেতে ২৯.৫৫ গড়ে তার রান ৩৩৬৯। হাফ সেঞ্চুরি রয়েছে ২১টি। আর ১৪০ টি-টোয়েন্টিতে ২৭.৫৫ গড়ে রান করেছেন ২৮৯৩টি। ১২টি রয়েছে ফিফটি।
পাকিস্তানকে দুই ফরম্যাটে মোট ৯৬ ম্যাচে নেতৃত্ব দিয়েছেন তিনি। ৬২টি টি-টোয়েন্টিতে তার নেতৃত্বে পাকিস্তান জিতেছে ২৭টিতে। আর ৩৪ ওয়ানডেতে জিতেছে ১৬টিতে। তার চেয়ে কেবল সানা মীর পাকিস্তানকে বেশি (৬৫টি) টি-টোয়েন্টি ম্যাচে নেতৃত্ব দিয়েছেন।
২০০৬ সালে মাত্র ১৫ বছর বয়সে ভারতের বিপক্ষে পাকিস্তানের হয়ে অভিষেক হয় তার। অভিষেক ম্যাচেই ৪৩ রানের ইনিংস খেলেছিলেন। যদিও প্রথম হাফ সেঞ্চুরির দেখা পেতে অপেক্ষা করতে হয়েছিল চার বছর। ২০১০ সালে নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে করেছিলেন প্রথম ফিফটি। তার সর্বোচ্চ ব্যক্তিগত সংগ্রহ ৯৯। যেটা তিনি ২০১৫ সালে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে করেছিলেন।
২০১৬ সালে তিনি পাকিস্তান টি-টোয়েন্টি দলের এবং ২০১৭ সালে ওয়ানডের অধিনায়ক হন। ২০২০ সালে ক্রিকেট থেকে অনির্দিষ্ট সময়ের জন্য বিরতিতে যান। এই সময়ে তিনি একটি কন্যা সন্তানের জন্ম দেন। এরপর ২০২২ সালে ওয়ানডে বিশ্বকাপ দিয়ে আবার ক্রিকেটে ফিরেন। যদিও মা হওয়ার পর থেকে নতুন চ্যালেঞ্জ নিয়ে তাকে এগিয়ে যেতে হয়েছে।
গেল বছর নারী টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের গ্রুপপর্ব থেকে পাকিস্তান বিদায় নেওয়ার পর তিনি অধিনায়কত্ব ছাড়েন। সম্প্রতি ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে তিনটি ওয়ানডে খেলেন। তার মধ্যে দ্বিতীয়টিতে ৬৫ রানের ইনিংস খেলেন। যদিও পাকিস্তান সিরিজ হেরেছে ৩-০ ব্যবধানে।
বিসমাহ মারুফ দুইবার পাকিস্তানের হয়ে ২০১০ ও ২০১৪ এশিয়ান গেমস ক্রিকেটে স্বর্ণ জিতেন। পাকিস্তানের হয়ে চারটি ওয়ানডে বিশ্বকাপ (২০০৯, ২০১৩, ২০১৭ ও ২০২২) এবং ৮টি টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ (২০০৯, ২০১০, ২০১২, ২০১৪, ২০১৬, ২০১৮, ২০২০ ও ২০২৩) খেলেছেন।