‘যাক এবার তো কোনো বিতর্ক নেই। আপনার মাথা নিশ্চয়ই পরিস্কার আছে? গণমাধ্যম থেকে চন্ডিকা হাথুরুসিংহেকে এমন প্রশ্ন করার পেছনের কারণ জানতে চলে ফিরে যেতে হবে ২০২৩ বিশ্বকাপের আগের কিছু ঘটনায়। যেখানে বাংলাদেশের কোচ প্রত্যক্ষ অবদান রেখেছিলেন নানা বিতর্কিত কর্মকাণ্ডে। সেসব নিয়ে কম জল ঘোলা হয়নি। মাঠের ক্রিকেটে সেই প্রভাব পড়েছে ঠিকই। কিন্তু সেসব নিয়ে কেউ মুখ ফুঁটে বলেনি। যিনি বলেছেন তিনি এখন আবার দলের ত্রি-সীমানাতেও নেই, খালেদ মাহমুদ সুজন।
আরেকটি বিশ্বকাপ দরজায় কড়া নাড়ছে। এবারের ফরম্যাটটা টি-টোয়েন্টি। বৈশ্বিক আরেকটি আসরে বাংলাদেশকে নিয়ে আরেকটি চ্যালেঞ্জ হাথুরুসিংহের সামনে। যিনি নিজেই বাংলাদেশকে বৈশ্বিক আসরে সর্বোচ্চ সাফল্য এনে দিয়েছেন। ২০১৭ সালে তার অধীনেই বাংলাদেশ খেলেছিল আইসিসি চ্যাম্পিয়নস ট্রফির সেমিফাইনাল। দুই বছর আগে ২০১৫ সালে খেলেছিল বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনাল।
দ্বিতীয় মেয়াদে দায়িত্ব পাওয়ার পর ২০২৩ বিশ্বকাপ ছিল তার বড় অ্যাসাইনমেন্ট। কিন্তু বিশ্বকাপের মাত্র ৮ মাস আগে দায়িত্ব পাওয়ায় ফলাফল নিয়ে শ্রীলঙ্কান কোন খুব একটা চিন্তা করেননি। কিন্তু এবার? টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের আগে পর্যাপ্ত সময় পেয়েছেন তিনি? এবারের লক্ষ্যটা কি তার?
শুনুন তার মুখ থেকেই, ‘আমাদের হাতে সুযোগ রয়েছে এখন পর্যন্ত যা করতে পারিনি তা করে দেখানোর। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ সব সময়ই চ্যালেঞ্জিং আমাদের জন্য। আমরা র্যাংকিংয়ে কোথায় আছি সবাই তা দেখছে। অস্বীকার করার কোনো সুযোগ নেই। কিন্তু আমাদের যে প্রস্তুতি রয়েছে তাতে সুযোগ রয়েছে আগের থেকে ভালো কিছু করার।’
প্রত্যাশার পারদ এবং সাফল্যর ক্ষুধা সম্পর্কে জানেন বলেই হাথুরুসিংহে ধাপে ধাপে এগোতে চান, ‘আমরা এমন একটি দেশে আছি যেখানে ক্রিকেটের থেকে প্রত্যাশা অনেক উচুঁতে। আইসিসি ইভেন্ট থেকে প্রত্যাশা বেশির কারণ এখানে আমরা সচরাচর ভালো ক্রিকেট খেলি। এছাড়া নির্দিষ্ট খেলোয়াড়ের থেকে বাড়তি প্রত্যাশা তো আছেই। আমাদের প্রথম লক্ষ্য এবার কঠিন এই গ্রুপপর্ব পেরোনো। এরপর আমরা ধাপে ধাপে এগিয়ে যেতে চাই। একটি একটি করে ম্যাচ আগাতে চাই। সেখান থেকে পরেরটা।’
ওয়ানডে বিশ্বকাপের আগে দল বাছাই নিয়ে বিতর্ক, সমালোচনা হয়েছিল। এবার ঠিক তেমনটা নেই। এজন্য হাথুরুসিংহের কপালে নেই চিন্তার ভাঁজও! তবে চ্যালেঞ্জ রয়েছে অন্য জায়গায়, ‘আমার মাথা সব সময়ই পরিস্কার। তবে এবার যে চ্যালেঞ্জ নেই তেমনটা নয়। ইনজুরি এবং অন্য ভিন্ন সমস্যা রয়েছে। আমি মনে করি এবারের নির্বাচনটা খুব ভালো হয়েছে। আমরা বেশ কিছু ভালো সিদ্ধান্ত নিয়েছি। বিশেষ করে সিরিজ শেষে। নিঃসন্দেহে তাসকিনের ইস্যুটাও বড় ছিল। তা ছাড়া, আমি ফলাফল নিয়ে খুব সন্তুষ্ট।’
সব কিছুর সঙ্গে নিজেদের প্রস্তুতি নিয়েও খুশি কোচ, ‘প্রস্তুতি হিসেবে আমরা সর্বোচ্চ অবস্থানে আছি। চট্টগ্রামে ভালো ক্যাম্প হয়েছে। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে পাঁচটি ম্যাচ ভালো ছিল। প্রায় সব ক্রিকেটাররা সুযোগ পেয়েছে নিজেদের অবস্থান জানার। আমি মনে করি প্রস্তুতি ভালো হয়েছে।’
তবে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে পাঁচ ম্যাচের এই সিরিজকে দলের সেরা তারকা সাকিব আল হাসান আদর্শ মানতে চান না। এই সিরিজের আত্মবিশ্বাস খুব একটা কাজে লাগবে না বলেও মনে করেন তিনি। সাকিবের কথায় ভিন্ন মত হাথুরুসিংহের, ‘আমি তা মনে করি না। ম্যাচ খেলা সব সময়ই ভালো প্রস্তুতি। যে কোনো দলের বিপক্ষেই খেলা বড় কিছু। কারণ, ম্যাচের পরিস্থিতি কখনোই কারো নিয়ন্ত্রণে থাকে না। কিছু দল সব সময়ই কঠিন। তবে প্রস্তুতির দিক থেকে বলবো, জিম্বাবুয়ে সিরিজেও আমরা ভালো প্রস্তুতি নিয়েছি।’
বিশ্বকাপে মাঠে নামার আগে যুক্তরাষ্ট্রে আরও পাঁচটি ম্যাচ খেলবে বাংলাদেশ। যুক্তরাষ্ট্রের বিপক্ষে তিনটি ম্যাচের পর আইসিসির আয়োজনে দুটি প্রস্তুতি ম্যাচ রয়েছে। সেখানের আবহাওয়ার সঙ্গে খাপ খাইয়ে নেওয়ার জন্য এই ম্যাচগুলো এবং নিজেদের ট্রেনিং ভালো কাজে দেবে বলে বিশ্বাস হাথুরুসিংহের।
প্রস্তুতি, দল বাছাই, পরিস্থিতি এবার সব কিছুই হাথুরুসিংহের পক্ষে। ম্যাচে ফলের ভাগ্যটাও হাথুরুসিংহে নিজ দিকে টানতে পারেন কিনা সেটাই দেখার।