খেলাধুলা

বিশ্বকাপের স্বপ্নযাত্রা

গন্তব্য ১৪ হাজার ১৮ কিলোমিটার। ঢাকা থেকে হুস্টন। নর্থ আমেরিকার ছিমছাম এক শহর। যেখানে স্বাগতিক যুক্তরাষ্ট্রের বিপক্ষে তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজ খেলবে বাংলাদেশ। এরপরই নবম টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে অংশ নিতে বাংলাদেশ চলে যাবে সড়ক পথে তিন ঘণ্টার দূরত্বের ডালাসে।

বিশ্বকাপের সেই স্বপ্নযাত্রা শুরু হলো বুধবার দিবাগত রাতে। রাত ১টা ৪০ মিনিটে টি–টোয়েন্টি বিশ্বকাপ খেলতে যুক্তরাষ্ট্রের উদ্দেশে দেশ ছেড়েছে বাংলাদেশ দল। বিমানবন্দরে সবার আগে এসে পৌঁছান লিটন দাশ। তাকে ঘিরে সমর্থকদের উল্লাস, উদ্দীপনা এতটাই বেশি ছিল যে গাড়ি থেকে নামতেই কষ্ট হয়ে যাচ্ছিল লিটনের। স্ত্রীকে নিয়ে বিমানবন্দরে এলেও তিনি নামতে পারেননি গাড়ি থেকে। মাহমুদউল্লাহ নিজে গাড়ি চালিয়ে আসেন বিমানবন্দরে। তাসকিন নিয়ে আসেন বাবাকে। সৌম্যও আসেন নিজের গাড়িতে। বাকি বেশিরভাগ ক্রিকেটার বিসিবির টিম বাসে বিমানবন্দরে পৌঁছান। দলের সঙ্গে একই গেট দিয়ে ঢুকেননি সাকিব আল হাসান। ভিভিআইপি টার্মিনাল দিয়ে সাকিব বিমানবন্দরের আনুষ্ঠানিকতা সারেন।

বুধবার সারাদিন ব্যস্ত ছিলেন ক্রিকেটাররা। সকালে অনুশীলনের পর অফিসিয়াল ফটোসেশন করেন। এরপর বিসিবিতে মধ্যাহ্নভোজে অংশ নেন। নিজেদের ব্যাগ, কিটব্যাগ, জার্সি বুঝে নেন। পরিবারের সঙ্গে খানিকটা সময় কাটিয়ে দ্রুতই আবার তাদের চলে যেতে হয় বিমানবন্দরে।

আরেকটি টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে অংশ নিতে বাংলাদেশ যখন উড়াল দিয়েছে তখন পেছনে তাড়া করছে পুরোনো ব্যর্থতার রেকর্ড। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে বাংলাদেশের পারফরম্যান্স একেবারেই হতশ্রী। বিশ্বকাপের মূলপর্বে বাংলাদেশের প্রথম জয় এসেছিল ২০০৭ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে। আরেকটি জয়ের জন্য অপেক্ষা করতে হয় ১৫ বছর। সেই জয় আসে ২০২২ সালে অস্ট্রেলিয়া বিশ্বকাপে। নেদারল্যান্ডসকে হারিয়ে মূল পূর্বে পরাজয়ের গেরো ছুটায় বাংলাদেশ। এরপর জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে জয় পায়।

তবুও রেকর্ডটা বেশ বিবর্ণই। ৩৮ ম্যাচে জয় মাত্র ৯টি। যার ৬টিই বাছাই পর্বে। মূল পর্বে কেবল ৩টি। মনে করিয়ে দেওয়া ভালো- হংকং, আয়ারল্যান্ড, আফগানিস্তানের মতো প্রতিপক্ষের কাছে হারের লজ্জাও পেয়েছে। ক্রিকেটের সংক্ষিপ্ততম সংস্করণে বাংলাদেশের পারফরম্যান্স ভালো নয়। তবুও এবারের বিশ্বকাপে ভালো করার এবং প্রত্যাশার চেয়ে বেশিদূর যাওয়ার স্বপ্ন দেখছে।

মূল পর্বে বাংলাদেশের ব্যর্থতার গল্পগুলো অভিন্ন। একাধিকবার প্রতিপক্ষকে হাতের মুঠোয় পেয়েছে। কিন্তু জয়সূর্যের দেখা পায়নি। নবম টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ দরজায় কড়া নাড়ছে। আশার কথা, এবার বাংলাদেশকে প্রথম বা বাছাই পর্ব খেলতে হচ্ছে না। ২০ দলের বিশ্বকাপে চারটি গ্রুপ করা হয়েছে। প্রতি গ্রুপে আছে ৫টি করে দল। গ্রুপের সেরা দুই দল যাবে সুপার এইটে। সেখান থেকে সেমিফাইনাল। সবশেষ ফাইনাল।

বিশ্বকাপে কঠিন গ্রুপে পড়েছে বাংলাদেশ। ‘ডি’ গ্রুপে বাংলাদেশের প্রতিপক্ষ আইসিসির পূর্ণ সদস্য দুই দল দক্ষিণ আফ্রিকা ও শ্রীলঙ্কা। সেই সঙ্গে সহযোগী সদস্য নেদারল্যান্ডস ও নেপাল আছে বাংলাদেশের সাথে প্রতিদ্বন্দ্বীতা করার জন্য।

বাংলাদেশের প্রথম ম্যাচ ডালাসের গ্র্যান্ড প্রেইরি স্টেডিয়ামে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ৮ জুন। দ্বিতীয় ম্যাচ দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে নিউ ইয়র্কের নাসাউ কাউন্টি ইন্টারন্যাশনাল ক্রিকেট স্টেডিয়ামে, ১০ জুন। পরের দুই ম্যাচ সেন্ট ভিনসেন্টে নেদারল্যান্ডস ও নেপালের বিপক্ষে যথাক্রমে ১৩ ও ১৭ জুন।

বিশ্বকাপের ৫৫টি ম্যাচ দুই দেশের নয়টি শহরে অনুষ্ঠিত হবে। যুক্তরাষ্ট্রের তিনটি এবং ক্যারিবিয়ানের ছয়টি। ডালাসের মেট্রো এরিয়ার গ্র্যান্ড প্রেইরি স্টেডিয়ামে পহেলা জুন বিশ্বকাপের উদ্বোধনী ম্যাচে মুখোমুখি হবে কানাডা ও যুক্তরাষ্ট্র। ২৯ জুন ফাইনাল ম্যাচ হবে বার্বাডোজে। দুটি সেমিফাইনাল হবে ত্রিনিদাদ অ্যান্ড টোবাগো ও গায়ানাতে।

বাংলাদেশ স্কোয়াড: নাজমুল হোসেন শান্ত (অধিনায়ক), লিটন কুমার দাশ, সৌম্য সরকার, সাকিব আল হাসান, তানজিদ হাসান তামিম, তাওহীদ হৃদয়, মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ, জাকের আলী অনিক, শেখ মাহেদী, রিশাদ হোসেন, তাসকিন আহমেদ, শরিফুল ইসলাম, তানজিম হাসান সাকিব, তানভীর ইসলাম ও মোস্তাফিজুর রহমান।

রিজার্ভ খেলোয়াড়: হাসান মাহমুদ, আফিফ হোসেন ধ্রুব।