খেলাধুলা

আত্মবিশ্বাসে বড় রকমের চিড় ধরাল ভারত

ম্যাচটা টি-টোয়েন্টি। হোক না প্রস্তুতি। কিন্তু ইনিংসের প্রথম ছক্কাটি যদি আসে ১৫তম ওভারে, তাহলে ব্যাটসম্যানদের কাঠগড়ায় দাঁড় করানো যেতে পারে। বলা হয় পাওয়ার প্লে’ এই ফরম্যাটে পার্থক্য গড়ে দেয়। অথচ বাংলাদেশের পাওয়ার প্লে’র চিত্রটা এরকম, ৬ ওভারে ২৭ রানে ৩ উইকেট। বাউন্ডারি, মাত্র দুইটি। ম্যাচের একটা চিত্র মোটামুটি কল্পনা করা হয়ে গেছে নিশ্চয়ই। 

টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে অংশগ্রহণের আগে বাংলাদেশের নিজেদের গুছিয়ে নেওয়ার শেষ সুযোগ ছিল ভারতের বিপক্ষে প্রস্তুতি ম্যাচ। অথচ এই ম্যাচে গোটা দল যেন আরো ছন্নছাড়া, আরো এলোমেলো। লড়াইয়ের নুন্যতম মানসিকতা নেই। নিবেদনে প্রবল ঘাটতি। সঙ্গে সামর্থ্য নিয়েও উঠতে শুরু করেছে প্রশ্ন। কেউ কেউ বলতে বাধ্য হচ্ছে, কেবল অংশগ্রহণের জন্যই কি যুক্তরাষ্ট্র, ওয়েস্ট ইন্ডিজে আসা! মাইকেল অ্যাথারটন সেদিন বলছিলেন,‘এই দলটা যুক্তরাষ্ট্রের কাছে ২-১ ব্যবধানে সিরিজ হেরে বিশ্বকাপে অংশ নিচ্ছে।’ 

ভারতের দেওয়া ১৮৩ রানের লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে ৪১ রান তুলতে ৫ ব্যাটসম্যান ড্রেসিংরুমে। ইনিংসের নবম ওভারে ম্যাচ হাতের নাগাল থেকে সরে যাওয়ার পর কেবল পরাজয়ের ব্যবধান কতটা কমাতে পারে সেটাই ছিল দেখার। সাকিব ও মাহমুদউল্লাহর ষষ্ঠ উইকেট জুটিতে আসে ৭৫ রান। যেখানে মাহমুদউল্লাহ ২৮ বলে ৪০ রান করে ইতিবাচক মানসিকতা দেখিয়েছেন। সাকিব সঙ্গ দিয়ে ৩৪ বলে ২৮ রান করে নিজের প্রস্তুতি সেরেছেন অর্ধেক। শেষমেশ ৯ উইকেটে বাংলাদেশের ইনিংস থামে ১২২ রানে। ৬০ রানের বিশাল ব্যবধানকে সঙ্গী করে বিশ্বকাপে খেলার অপেক্ষায় লাল সবুজের প্রতিনিধিরা।  

বিশ্বমঞ্চে নামার আগে বাকিরা স্রেফ নিজেদের আত্মবিশ্বাস নাড়িয়ে নিল। সৌম্য রানের খাতা খোলার আগে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দেন আর্শদ্বীপের বলে। বাঁহাতি পেসারের সুইং সামলাতে না পেরে লিটন তিনে নেমে বোল্ড হন। অধিনায়ক শান্তর বাজে ফর্ম চালু ছিল এই ম্যাচেও। ৬ বল খেলে রানের খাতা খুলতে পারেননি।

দুই তরুণ তানজিদ ও তাওহীদ দুই অঙ্ক ছোঁয়ার পর ফিরে যান ড্রেসিংরুমে। প্রথম পাঁচ ব্যাটসম্যানের কেউই পারেননি নতুন বলে ভারতের পেস আক্রমণ সামলাতে। বড্ড বিবর্ণ ছিল ব্যাটিং। তাতে বড় দলের বিপক্ষে নিজেদের সামর্থ্যে বড় প্রশ্ন তুলে রাখল বাংলাদেশ।

শেষ কিছুদিন ধরে নতুন বলে বোলিং ভালো হচ্ছিল না বাংলাদেশের। যুক্তরাষ্ট্রের বিপক্ষে ব্রেক থ্রু পেতে অপেক্ষা করতে হয়েছে বেশ কয়েক ওভার। ভারতের বিপক্ষে অবশ্য ততদূর যেতে হয়নি। সানজু স্যামসানকে দ্বিতীয় ওভারে এলবিডব্লিউ করেন শরিফুল। মোস্তাফিজ ও তাসকিনকে বিশ্রাম দিয়ে আক্রমণ সাজিয়েছিল বাংলাদেশ। প্রস্তুতি ম্যাচ বলেই ১৪ জনের যে কারোরই ব্যাটিং বা বোলিং করার সুযোগ ছিল। 

শান্ত সুযোগ গুলোকে কাজে লাগিয়ে তানভীর, রিশাদ, মাহেদী, সাকিব, মাহমুদউল্লাহকে বোলিং করিয়েছেন। হাত ঘুরিয়েছেন সৌম্য সরকার ও তানজিম হাসানও। কিন্তু বলার মতো কেউই ভালো করতে পারেননি। সাকিব রিশাভ পান্তের কাছে এক ওভারে তিন ছক্কা হজম করেছেন। তানভীরকে হ্যাটট্রিক ছক্কার লজ্জা দিয়েছেন হার্দিক। নির্বিষ বোলিংয়ের শেষটা হয়েছে হতাশার, আতঙ্কের। শরিফুল ইনিংসের শেষ ওভারে হার্দিকের ফিরতি বল ঠেকাতে গিয়ে আঙুলে চোট পেয়ে মাঠ ছাড়েন। তার সর্বশেষ অবস্থা এখনও জানায়নি অফিসিয়ালরা। 

বাংলাদেশের প্রস্তুতি খুব বাজে হলেও ভারত ব্যাটিং-বোলিংয়ে দাপট দেখিয়েছে। পান্ত ৩২ বলে ৫৩ রান করেছেন ৪টি করে চার ও ছক্কায়। হার্দিক ২৩ বলে ৪০ রান করেন ২ চার ও ৪ ছক্কায়। এছাড়া ১৮ বলে ৩১ রান করেন সূর্যকুমার যাদব। বোলিংয়ে দুবে ও আর্শদীপ ২টি করে উইকেট পেয়েছেন। 

প্রস্তুতি ম্যাচে জয় পরাজয়ের চেয়েও নিজেদের পরীক্ষা করা জরুরী। নিউ ইয়র্কের নতুন এই মাঠে বাংলাদেশ আজ যে পরীক্ষা দিল তাতে পুরোপুরি ফেল! সামনে বাংলাদেশের শ্রীলঙ্কা ও দক্ষিণ আফ্রিকা পরীক্ষা। এরপর নেপাল ও নেদারল্যান্ডস। বিশ্বকাপ যত ঘনিয়ে আসছে আশার প্রদীপ টিমটিম করে জ্বলছে। যা নিভে যেতে পারে অচিরেই।