আফ্রিদি যখন ক্রিজে আসেন তখন পাকিস্তান লক্ষ্য থেকে ১২ রান দূরে ছিল। বল বাকি ছিল ১৪টি। উইকেট ৩টি।
অন্তিম মুহূর্তে পাকিস্তানের ম্যাচ হারের রেকর্ড অহরহ রয়েছে। কিছুদিন আগে ভারতের বিপক্ষেও হাতের মুঠোয় থাকা ম্যাচ জিততে পারেনি তারা। বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচে সুপার ওভারের সমীকরণও মেলাতে পারেনি। তাতে বিশ্বকাপের সুপার এইটের লড়াই থেকে ছিটকে যায়।
তবে আজকের লড়াইয়ে আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে মুখ রক্ষা হয় তাদের। আফ্রিদি ১৯তম ওভারে লেগ স্পিনার ডিনালিকে দুই ছক্কা উড়িয়ে দলকে নিরাপদ স্থানে নিয়ে যান। দেন ৩ উইকেটে জয়ের স্বাদ। এই জয়ে তৃতীয় স্থানে থেকে বিশ্বকাপের মিশন শেষ করলো ২০০৯ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের চ্যাম্পিয়নরা।
লাডারহিলে বিশ্বকাপের আগের তিন ম্যাচ পরিত্যক্ত হয়েছিল কোনো বল গড়ানো ছাড়াই। পাকিস্তান ও আয়ারল্যান্ডের ‘ডেড-রাবার’ ম্যাচ গড়ালো রৌদ্রজ্জ্বল দিনে। নিউ ইয়র্কের উইকেট টি-টোয়েন্টির আবেদন মেটাতে পারেনি। লাডারহিলের উইকেট কেমন হবে তা নিয়ে ছিল ধোঁয়াশা। প্রত্যাশা পূরণ করতে পারেনি লাডারহিলও। ধীর গতির অসমান বাউন্সের উইকেট। ডাবল পেসের উইকেটে শট খেলা যেন আত্মঘাতি সিদ্ধান্ত! সেই কাজ করতে গিয়ে ভুগল দুই দলের ব্যাটসম্যানরা।
ম্যাচে সবমিলিয়ে রান হলো ২১৭। উইকেট পড়ল ১৬টি। আয়ারল্যান্ড আগে ব্যাটিং করতে নেমে ৯ উইকেটে ১০৬ রান করে। পাকিস্তান জবাব দিতে নেমে হিমশিম খেল। শেষ পর্যন্ত তারা জিতেছে ৩ উইকেটে, ৭ বল হাতে রেখে।
লক্ষ্য তাড়ায় পাকিস্তানের শুরুটা খারাপ ছিল না। সায়েম আইয়ুব ১৭ বলে ১৭, রিজওয়ান ১৬ বলে ১৭ রান তুলে নতুন বলে ভালো জবাব দিচ্ছিল। কিন্তু ২৩ রানে উদ্বোধনী জুটি ভাঙার পর এলোমেলো হয়ে যায় পাকিস্তানের ব্যাটিং লাইনআপ।
ফখর জামান বড় শট খেলতে গিয়ে মিড অনে ক্যাচ দেন ৫ রানে। উসমান খান লাফিয়ে উঠা বলে ব্যাট সরাতে পারেনি। ২ রানে পয়েন্টে ক্যাচ দেন। শাহাব খান রানের খাতা খোলার আগে ক্যাচ দেন উইকেটের পেছনে। আর ইমাদ ৪ রানে পয়েন্টে ক্যাচ দেন। মাত্র ১০ রানে ৪ উইকেট হারিয়ে বিপদে পড়ে পাকিস্তান।
৬ উইকেটে তাদের রান ছিল ৬২। সেখানে আব্বাসকে সঙ্গে নিয়ে বাবর ৪০ বলে ৩৩ রান যোগ করেন। আব্বাস ১টি করে চার ও ছক্কায় ১৭ রান করে আউট হলেও বাবর অপরাজিত ৩২ রানের ইনিংস খেলে দলকে জিতিয়ে মাঠ ছাড়েন। শাহীন শাহ আফ্রিদির ব্যাট থেকে আসে ১৩ রান।
টস জিতে ব্যাটিংয়ে নেমে আয়ারল্যান্ডের প্রথম পাঁচ ব্যাটসম্যানের কেউই দুই অঙ্কের ঘরে পৌঁছতে পারেনি। দুই ব্যাটসম্যান অ্যান্ডি বালবিরনে ও হ্যারি টেক্টর খুলতে পারেননি রানের খাতা। অধিনায়ক পল স্টারলিং ১, লোরকান টাকার ২ ও কুর্টিস ক্যাম্পার ৭ রানে ফেরেন ড্রেসিংরুমে।
পেসার আফ্রিদি ইনিংসের প্রথম ওভারে নেন ২ উইকেট। আমির পরপর দুই ওভারে পেয়ে যান ২ উইকেট। আফ্রিদি প্রথম স্পেল শেষ করেন আরো ১ উইকেট নিয়ে।
শুরুর ব্যাটসম্যানরা যেখানে লড়াই করতে পারেনি, পরের দিকের ব্যাটসম্যানরা গড়ে তোলেন প্রতিরোধ। জর্জ ডর্করেল করেন ১১ রান। সর্বোচ্চ ৩১ রান করেন গ্যারেথ ডিনলে। ১৯ বলে ১ চার ও ৩ ছক্কায় সাজান তার ইনিংস। এছাড়া মার্ক আডায়ারের ব্যাট থেকে আসে ১৯ বলে ১৫ রান।
৮০ রানে ৯ উইকেট হারানো আয়ারল্যান্ডের শতরান লাগছিল দূর আকাশের তারা। কিন্তু সবাইকে চমকে দিয়ে দশে নামা জস লিটল স্কোরবোর্ডে যোগ করেন ২২ রান। ১৮ বলে ২ চার ও ১ ছক্কায় তার সাজানো ইনিংস কতটা গুরুত্বপূর্ণ ছিল বোঝা যায় ম্যাচ শেষে।
উইকেটের পূর্ণ সহায়তা নিয়ে পাকিস্তানের পেসাররা জ্বলে উঠেন দারুণভাবে। আফ্রিদি ২২ রানে পেয়েছেন ৩ উইকেট। আমির ৪ ওভারে ১ মেডেনে ১১ রানে নেন ২ উইকেট। এছাড়া স্পিনার ইমাদ ওয়াসিম ৪ ওভারে ৮ রানে পেয়েছেন ৩ উইকেট। অপর উইকেটটি নেন হারিস রউফ।
অলরাউন্ড পারফরম্যান্সে পাকিস্তানের জয়ের নায়ক আফ্রিদি।
পাকিস্তান ৪ ম্যাচে ২ জয় ও ২ পরাজয় নিয়ে টুর্নামেন্ট শেষ করলো। এই গ্রুপ থেকে ভারত ও যুক্তরাষ্ট্র গেছে সুপার এইটে।