খেলাধুলা

এলোমেলো ব্যাটিংয়ের পর বোলারদের বীরত্বে ঈদ আনন্দ দিগুণ 

ব্যাটসম্যানদের জন্য উইকেট ছিল পরীক্ষার মঞ্চ। বোলারদের জন্য স্বর্গ। ২২ গজের সেই সুবিধাকে পুরোপুরি কাজে লাগালেন তানজিম হাসান সাকিব ও মোস্তাফিজুর রহমান। দুজনের বীরত্বগাথায় পবিত্র ঈদুল আজহার দিনটি ম্লান হয়নি। এলোমেলো ব্যাটিংয়ে ব্যাটসম্যানরা যা করেছিলেন, তাতে ঈদের আনন্দ মাটি হয়ে যাওয়ার উপক্রম তৈরি হয়েছিল।

আগে ব্যাটিং করে বাংলাদেশ মাত্র ১০৬ রান করেন। ৩ বল আগেই শেষ হয়ে যায় দলের ইনিংস। জবাবে নেপাল সবকটি উইকেট হারিয়ে ৮৫ রানের বেশি করতে পারেনি। ২১ রানের জয়ে ডি গ্রুপ থেকে রানার্সআপ হয়ে বাংলাদেশ চলে গেছে সুপার এইটে। যেখানে বাংলাদেশের অপেক্ষায় অস্ট্রেলিয়া, ভারত ও আফগানিস্তান।

উইকেট ব্যাটিংয়ের জন্য সহায়ক ছিলো না। দক্ষিণ আফ্রিকা ও নেপালের আগে ম্যাচে রান হয়েছিল কেবল ১১৫। মন্থর উইকেট বল স্পিন ধরছিল বেশ। নতুন বলে পেসাররা গতির সঙ্গে পেয়েছেন বাউন্স। বল সহজেই ব্যাটে আসছিল না। অসমান বাউন্সের না হলেও বল উঁচু নিচু হয়েছে। তাতে যা হয়েছে, ব্যাটসম্যানরা চাইলেও সহজাত শট খেলতে পারেননি। বাজে বলের জন্য অপেক্ষা করতে হয়েছে। অন্যদিকে বোলাররা মনের মতো উইকেট পেয়ে চাপে রাখেন প্রতিপক্ষকে।

বাংলাদেশের জয়ের নায়ক পেসার তানজিম। ৪ ওভারে ২ মেডেনে ৭ রানে তার শিকার ৭ উইকেট। তার বোলিংয়ে ২১ বলই ছিল ডট। নেপালের ব্যাটসম্যানদের জন্য দুর্বোধ্য হয়ে ছিলেন মোস্তাফিজুর রহমান। ৪ ওভারে ১ মেডেনে ৭ রানে তার শিকার ৩ উইকেট। মোস্তাফিজও ডট দিয়েছেন ২০টি। এছাড়া তাসকিন ১ এবং সাকিব পেয়েছেন ২ উইকেট। তিন ম্যাচ পর সাকিবের পকেটে গেছে উইকেট।

লক্ষ্য তাড়ায় নেপালের শুরুটাও ছিল বিবর্ণ। ২৬ রানে নেপালের ৫ উইকেট তুলে নেয় বাংলাদেশ। যার পুরোপুরি কৃতিত্ব পেসার তানজিমের। টানা ৪ ওভার হাত ঘুরিয়ে মাত্র ৭ রানে ৪ উইকেট তুলে নেন ডানহাতি পেসার। যেখানে তার দুই ওভারই ছিল মেডেন। এছাড়া মোস্তাফিজুর রহমান নিজের প্রথম ওভারে পেয়ে যান আসিফ শেখের উইকেট।

শুরুর বিপর্যয় পেরিয়ে নেপাল লড়াই করে ষষ্ঠ উইকেট জুটিতে। কুশল মালা ও দীপন্দ্র ৫৮ বলে ৫২ রানের জুটি গড়েন। শুরুতে থিতু হতে সময় নিয়েছিলেন দুই ব্যাটসম্যান। এরপর প্রতি আক্রমণে গিয়ে রান তোলেন। চার-ছক্কা উড়িয়ে ভয় ছড়ান বাংলাদেশ শিবিরে। ম্যাচে ফিরতে এই জুটি ভাঙার দরকার ছিল বাংলাদেশের। দ্বিতীয় স্পেলে ফিরে মোস্তাফিজ দলের হয়ে কাজটা করে দেন।

তার কাটারে বড় শট খেলতে গিয়ে টাইমিংয়ে গড়বড় করেন মালা। ৪০ বলে ২৭ রান করে শান্তর হাতে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন এই ব্যাটসম্যান। আরেক ব্যাটসম্যান দীপন্দ্র নেপালের আশা বাঁচিয়ে রেখেছিলেন। তাসকিনকে পয়েন্টের ওপর দিয়ে ছক্কা উড়ান চোখের পলকে। মনে হচ্ছিল জয়ের সমীকরণ মিলিয়ে ফেলবেন তিনি। কিন্তু ১৯তম ওভারে মোস্তাফিজ ম্যাজিকে পাল্টে যায় হিসাব।

১২ বলে নেপালের ২২ রান দরকার ছিল। ধ্রুপদী কাটার, স্লোয়ার ও স্টক বলে মোস্তাফিজ প্রথম পাঁচ বলে কোনো রানই দেননি। শেষ বলে তুলে নেন দীপন্দ্রর উইকেট। তাতে ম্যাচের ভাগ্য লিখে ফেলে বাংলাদেশ।

সাকিব মুখটা লুকাতে চেয়েছিলেন। দুুই গ্লাভস হেলমেটের ওপর রেখেছিলেন। তবুও চোখ আড়াল করতে পারেননি! মুখটা লুকাবেন কী করে? দল এমনিতেই তখন ছিল খাদের কিনারা। তার ডাকে সাড়া দিয়ে ননস্ট্রাইক প্রান্ত ছেড়েছিলেন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। কিন্তু ফিল্ডারের হাতে বল রেখে রান নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়াতেই নেমে আসে বিপদ।

ফিল্ডার গুলশান ঝার থ্রোতে লামিচানে ভাঙলেন উইকেট। বাংলাদেশের ‘কফিনে’ নেপালের আরেকটি পেরেক। রান আউটে শেষ মাহমুদউল্লাহর ১৩ রানের ইনিংস। সাকিবও বেশিক্ষণ টিকলেন না। স্কোরবোর্ডে ১০ রান যোগ হতে অফস্পিনার ও নেপালের অধিনায়ক রোহিত পাউডলের বলে প্ল্যাম এলবিডব্লিউ। আউট হয়েছেন জেনেও রিভিউ নিয়েছিলেন। কিন্তু তাতে ভাগ্য ফেরেনি। টিভিতে যখন রিভিউ চলছিল, সাকিব (২২) তখন ড্রেসিংরুমের পথে।

মাহমুদউল্লাহ ও সাকিব যখন আউট হলেন তখন দলের রান যথাক্রমে ৫২ ও ৬১। দুই সিনিয়রের মাঠে নামার আগে ব্যাটিংয়ে বাংলাদেশকে ডুবিয়ে আসেন তানজিদ, শান্ত, লিটন ও তাওহীদ। ৩০ রানে বাংলাদেশ হারায় টপ অর্ডারের ৪ উইকেট।

ইনিংসের প্রথম বলে তানজিদ ফিরতি ক্যাচ দেন পেসার সোম্পাল কামিকে। চরম অফফর্মে থাকা শান্ত আরো একবার ব্যর্থ। তার দূর্বলতার জায়গা অফস্পিনার দীপন্দ্র সিংকে বোলিংয়ে এনে সাফল্য পায় নেপাল। বলের লাইন মিস করে শান্ত বোল্ড হন ৪ রানে। লিটনকে প্রথম ওভারে এলডব্লিউ দিয়েছিলেন আম্পায়ার স্যাম নোগাস্কি। রিভিউ নিয়ে বেঁচে যান। এরপর একটি ড্রাইভ ও সুইপে রান পেয়েছেন। কিন্তু নিজের উইকেট কিভাবে উপহার দিয়ে আসতে হয় তা আরেকবার দেখিয়েছেন লিটন। ড্রাইভের বল পুল করতে গিয়ে লিটন ক্যাচ তোলেন আকাশে। উইকেট রক্ষক আসিফ তাকে সহজ ক্যাচ নিয়ে তাকে সাজঘরের পথ দেখান।

তাওহীদ ক্রিজে এসে তাড়াহুড়ো করে থেমে যান ৯ রানে। অফস্পিনার পাউডলের বল স্লগ করতে গিয়ে ফাইন লেগে ক্যাচ দেন। সেখানে লামিচানে দুর্দান্ত ক্যাচ নিয়ে নেপালকে উল্লাসকে ভাসান। পাওয়ার প্লে’ বাংলাদেশের ছিল যাচ্ছেতাই। স্কোরবোর্ডে ৩১ রান তুললেও হারায় ৪ উইকেট। যেখানে ডট বলই ছিল ২২টি।

শুরুর ব্যাটসম্যানরা যেখানে পারেননি সেখানে লেজের ব্যাটসম্যানরা পারবেন সেই বিশ্বাস করাটা দুরুহ ব্যাপার। তবুও রিশাদের একটি করে চার ও ছক্কায় ১৩, তাসকিনের ১২ স্কোরবোর্ডকে সমৃদ্ধ করে। উইকেট রক্ষক জাকের আলীর ২৬ বলে ১২ রানের ইনিংসটি দৃষ্টিকটু হলেও শতরান পেরিয়ে যেতে সহায়তা করেছে।

বোলিংয়ে নেপালের আক্রমণ ছিল সম্মিলিত। ২টি করে উইকেট পেয়েছেন সোম্পাল, রোহিত, দীপন্দ্র ও লামিচানে। লেগ স্পিনার লামিচানে ২ উইকেট নিয়ে পৌঁছে যান সেঞ্চুরি উইকেটের মাইলফলকে।