খেলাধুলা

অবিশ্বাস্য গোল ঠেকিয়ে তুরস্কের নায়ক গুনক

ম্যাচের অতিরিক্ত সময়ের (৯৫ মিনিট) খেলা চলছিল। লিপজিগ স্টেডিয়ামে তখন তুরস্কের সমর্থকদের আনন্দের বন্যা। অস্ট্রিয়ার বিপক্ষে ২-১ ব্যবধানে লিড নিয়ে ইউরো চ্যাম্পিয়নশিপের কোয়ার্টার ফাইনালে যাওয়ার অপেক্ষায় তারা। রেফারির শেষ বাঁশির অপেক্ষায় তুরস্ক। 

ঠিক ওই সময়ে হাল না ছাড়া অস্ট্রিয়া আরেকটি সুযোগ তৈরি করলো। ম্যাচ শেষ হতে কয়েক সেকেন্ড অপেক্ষা। বামপাশ থেকে ভলিতে বাড়ানো পাস ডি বক্সের ভেতরে ফাঁকায় পান অস্ট্রিয়ার ফরোয়ার্ড ক্রিস্টোফ বামগার্টনার। রক্ষণের চার খেলোয়াড়ের মাঝে বল পেয়ে নিখুঁত হেডও করেছিলেন। বল ড্রপ করে গোলমুখে এগিয়েও যাচ্ছিল। নিশ্চিত গোল! 

কিন্তু হঠাৎ সেখানে প্রচীর হয়ে আসলেন মার্ট গুনক। ডানদিকে ঝাঁপিয়ে অবিশ্বাস্য এক সেভ করলেন। ফিস্ট নয়, সোজা বলের লাইনে হাত নিয়ে গোল আটকে দেন। বল বেরিয়ে যায় সাইড বার দিয়ে। অস্ট্রিয়ার খেলোয়াড়দের সবার মাথায় হাত। তুরস্কের খেলোয়াড়রাও বসে পড়লেন মাটিতে! যেন হাফ ছেড়ে বাঁচলেন। নিশ্চিত সেই গোল হয়ে গেলে ম্যাচ গড়ায় বাড়তি সময়ে। 

কিন্তু সেসব কিছুই হতে দেননি গুনক। ইউরোপীয়ান চ্যাম্পিয়নশিপের অন্যতম সেরা সেভ করে তুরস্ককে কোয়ার্টার ফাইনালে তুলেছেন তিনি। ২-১ গোলের জয়ে তারা চলে গেল শেষ আটে। যেখানে তাদের অপেক্ষায় নেদারল্যান্ডস।

ম্যাচে তুরস্কের হয়ে জোড়া গোল করেন মেরিহ ডেমিরাল। কিন্তু শেষ মুহূর্তে চোখ ধাঁধানো সেভ করে সব আলো নিজের উপর কেড়ে নিয়েছেন গুনক। ১৬ বছর পর কোয়ার্টার ফাইনালে গেল তুরস্ক। ২০০৮ সালে  শেষবার সেরা আটে জায়গা করে নিয়েছিল তারা। সেবার সেমিফাইনালও খেলেছিল। যা ইউরো কাপে তাদের সর্বোচ্চ সাফল্য। এবারের দলটা কতদূর যেতে পারে সেটিই দেখার। 

ডেমিরালের করা ম্যাচের প্রথম গোলটি ছিল ইউরোপীয় চ্যাম্পিয়নশিপের ইতিহাসে নকআউট পর্বের দ্রুততম গোল। মাত্র ৫৭ সেকেন্ডে গোলের খাতা খুলে তুরস্ক। আর্দা গুলারের নেওয়া কর্নার ক্লিয়ার করতে ব্যর্থ হয় অস্ট্রিয়া। গোললাইন থেকে গোলরক্ষক বল সরিয়ে দিলে সেটি পেয়ে দুর্দান্ত শটে গোল করেন ডেমিরাল।

এর আগে চলতি আসরেই ইতালির বিপক্ষে ২৩ সেকেন্ডে গোল করে ইউরোর ইতিহাসে দ্রুততম গোলের রেকর্ড করেছিলেন আলবেনিয়ার নেদিম বাজরামানি। প্রথমার্ধে দুই দলের কেউ আর গোলের দেখা পায়নি। অস্ট্রিয়া উল্টো দ্বিতীয়ার্ধে ফিরে আরো এক গোল হজম করে। গুলার্সের কর্ণার কিক থেকে পাওয়া বলে হেড দিয়ে গোল করেন ডেমিরাল। 

গোল শোধে মরিয়া অস্ট্রিয়ার ভাগ্য খুলে ৭ মিনিট পর। ভালো ফুটবল খেলেও গোল পাচ্ছিল না তারা। ৬৬ মিনিটে মাইকেল গ্রেগোরিচ মান বাঁচে তাদের। স্টিফেন পোচের কর্নার থেকে পাওয়া বলে ডান পায়ের শটে গোল করেন গ্রোগোরিচ। এরপর আক্রমণ অব্যাহত রাখলেও ফিনিশিংয়ে দূর্বলতার কারণে সমতা ফেরাতে পারছিল না অস্ট্রিয়া।

শেষমেশ অতিরিক্ত সময়ে কপাল পুড়ে তাদের। গুনকের অবিশ্বাস্য এক সেভে চোখের জলকে সঙ্গী করে অস্ট্রিয়া বিদায় নেয় ইউরো থেকে। এ নিয়ে টানা দ্বিতীয় মেজর প্রতিযোগিতায় রাউন্ড অব সিক্সটিন থেকে বিদায় নিল অস্ট্রিয়া। কাতার বিশ্বকাপেও তাদের মিশন থেমে যায় প্রি কোয়ার্টারে। শুধু তাই নয় ২০২০ ইউরোতেও কোয়ার্টারে উঠতে পারেনি অস্ট্রিয়া।