খেলাধুলা

নতুন বলের উজ্জ্বলতায় আলোকিত বাংলাদেশ

টসকে নাজমুল হোসেন শান্ত গুরুত্বপূর্ণ মনে করেছিলেন। রাওয়ালপিন্ডিতে টস জিতে শান্ত গুরুত্বপূর্ণ সেই কাজটা করে ফেলেন। পেসবান্ধব উইকেট হবে আগেই জানা।

প্রতিপক্ষ পাকিস্তানের রণকৌশল সেই ইঙ্গিতই দিয়েছিল। তাই টস জিতে বোলিং নিতে বিন্দুমাত্র চিন্তা করতে হয়নি বাংলাদেশের অধিনায়ককে। এবার দায়িত্ব পেস বোলারদের। পাকিস্তান চার পেসার নিয়ে একাদশ সাজালেও বাংলাদেশ নেমেছে তিনজন নিয়ে। দিনের প্রথম ঘণ্টায় তারাই উড়ালেন বাংলাদেশকে।

নতুন বলের উজ্জ্বলতায় পাকিস্তান শিবিরে কাঁপন ধরালেন শরিফুল ইসলাম ও হাসান মাহমুদ। ১৬ রানেই আউট পাকিস্তানের তিন ব‌্যাটসম‌্যান। এরপর স্বাগতিকদের প্রতিরোধে লড়াই জমে উঠে। কিন্তু শেষ সেশনে আরও ১ উইকেট নিয়ে দিনটা নিজেদের করে নিয়েছে অতিথিরা। ৪ উইকেটে পাকিস্তানের রান ১৫৮।

দিনের প্রথম সেশনে একটি বলও মাঠে গড়ায়নি। আগের রাতের বৃষ্টিতে মাঠ ভেজা থাকায় খেলা শুরু হতে বিলম্ব। সকাল গড়িয়ে দুপুর। দুপুর গড়িয়ে বিকেল। এরপর ৩টায় শুরু হয় দুই দলের লড়াই।

পাকিস্তানে খেলা হচ্ছে কুকাবুরা বলে। নতুন বলের উজ্জ্বলতা যতক্ষণ থাকে ততক্ষণ পর্যন্ত পেসাররা ভয়ংকর। বলের উজ্জ্বলতা কমতে কমতে আক্রমণের তেজও কমে আসে। এজন্য নতুন বলেই যা করার করে নিতে হয়। পরিকল্পনামাফিক শরিফুল ও হাসান সেই কাজটাই করেন। অফস্টাম্পের বাইরে পরীক্ষা নেন ব্যাটসম্যানদের। তাতে মিলে যায় সাফল্য। সঙ্গে ফিল্ডারদেরও দিতে হবে কৃতিত্ব। কঠিন ক্যাচ সহজ করে নিয়ে দলকে উদযাপনে ভাসিয়েছেন তারা।

হাসান নিজেদের দ্বিতীয় ওভারে ফেরান আব্দুল্লাহ শফিককে। তার ওয়াইড ফুলার লেন্থ বল ড্রাইভ করতে গিয়ে গালিতে ক্যাচ দেন। সেখানে জাকির ঝাঁপিয়ে ক্যাচ নেন। এরপর পাকিস্তানের অধিনায়ককে ফেরানোর দায়িত্ব নেন শরিফুল। তার ভেতরে ঢোকানো বলে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দেন শান মাসুদ। আম্পায়ারের সিদ্ধান্তকে চ্যালেঞ্জ করে রিভিউ নিয়ে বাংলাদেশ সাফল্য পায়। যদিও রিভিউয়ের সিদ্ধান্ত পছন্দ হয়নি পাকিস্তান অধিনায়কের।

ম্যাচ শুরুর আগে বাঁহাতি এই পেসার সংবাদ সম্মেলনে বলেছিলেন, বাবর আজম তার স্বপ্নের উইকেট। সেই বাবরকেই নিজের দ্বিতীয় বলে আউট করেছেন শরিফুল। লেগ সাইডে বেরিয়ে যাওয়া বলে ব‌্যাটের ছোঁয়া দেন বাবর। পেছনে সুপারম‌্যান লিটন লাফিয়ে ক‌্যাচ গ্লাভসবন্দী করেন। পাকিস্তানের সাবেক অধিনায়ক মাঠ ছাড়েন শূন্যরানে! পাঁচবারের মুখোমুখি লড়াইয়ে বাবরকে এই প্রথম ফেরালেন শরিফুল। বাবার পান অষ্টম ডাকের স্বাদ!

নতুন বলে পাকিস্তানের ব‌্যাটসম‌্যানদের চাপে রেখে বাংলাদেশ এগিয়ে যায় ঠিকই। তবে চতুর্থ উইকেটে আসে প্রতিরোধ। সাইম আইয়ুব–সৌদ শাকিল জুটি ৯৮ রান যোগ করে পাকিস্তানের ড্রেসিংরুমে হাসি ফোটান। এ সময়ে সাইম তুলে নেন ফিফটি। আক্রমণাত্মক ব‌্যাটিংয়ে শাকিলও বড় আশা দেখান। 

চা-বিরতির পর ম‌্যাচে ফিরতে বাংলাদেশের এই জুটি ভাঙার প্রয়োজন ছিল। দলের হয়ে কাজটা করেন হাসান। তার অফ স্টাম্পের বাইরের বল ড্রাইভ করতে গিয়ে তৃতীয় স্লিপে মেহেদী হাসান মিরাজের ক্যাচ হয়েছেন সাইম। ওপেনার ৯৮ বলে ৫৬ রান করেন। ইনিংসে ছিল ৪টি চার ও ১টি ছয়।

এরপর রিজওয়ানকে নিয়ে দিনের বাকিটা সময় কাটিয়ে দেন শাকিল। বৃষ্টিবিঘ্নিত দিনে ৪৮ ওভার খেলা হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু পড়ন্ত বিকেলে আলোকস্বল্পতায় ৪১ ওভারের বেশি খেলা হয়নি। ৪ উইকেট নিয়ে বাংলাদেশ দিনটি নিজেদের করে নিয়েছে। সামনে পাকিস্তানকে কতদ্রুত আটকে দিতে পারেন বোলাররা সেটাই দেখার।