পরিসংখ্যান বলছে, প্রথম ইনিংসে ২৬ রানে ৬ উইকেট হারানোর পর কোনো দল টেস্ট ক্রিকেটে কখনো ম্যাচ জেতেনি। হিসেব অনুযায়ী, তাহলে পাকিস্তানের বিপক্ষে বাংলাদেশের ঐতিহাসিক জয়টি বিশ্ব রেকর্ড হিসেবে ক্রিকেটের ইতিহাসের পাতায় যুক্ত হয়েছে।
অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত জয়ের কৃতিত্ব দলের প্রত্যেককে দিয়েছেন। তবে একজন নায়ককে তো বেছে নিতেই হয়। কেতাবি সেই নায়ক হয়েছেন লিটন দাশ। প্রথম ইনিংসে খাদের কিনারা থেকে দলকে তুলে ১৩৮ রানের ঝকঝকে ইনিংস খেলেছেন। যে ইনিংস খেলার পথে মিরাজের সঙ্গে ১৬৫ রানের জুটি গড়েছেন।
টপ ও মিডল অর্ডারের ব্যাটসম্যানরা আউটের মিছিলে যোগ দিয়েছিলেন। সেখানে ছয় ও সাতে নামা লিটন ও মিরাজ হাল ধরে দলকে উদ্ধার করে বিশ্ব রেকর্ড গড়েন। ক্রিকেট ইতিহাসে ৩০ রানের আগে ৬ উইকেট হারিয়ে কোনো দল এর আগে সপ্তম উইকেটে ১৫০ রানের বেশি করতে পারেনি। মিরাজ ও লিটন ইতিহাসের পাতায় নতুন অধ্যায় যুক্ত করে বাংলাদেশের মান বাঁচিয়েছেন।
দুজনের জুটি নিয়ে লিটন ম্যাচ শেষে বলেছেন, ‘শুধু নিজের ওপর বিশ্বাস রেখেছিলাম। ওই সময়টায় পাকিস্তান সত্যিই ভালো বোলিং করেছে। আমি এবং মিরাজ আলোচনা করেছি যে আমাদের দীর্ঘ ব্যাটিং করা উচিত এবং তাদের ছন্দ পরিবর্তন করাতে হবে। এরপর মিরাজ কয়েকটি বাউন্ডারি মারে এবং গতি পাল্টে যায়। মধ্যাহ্ন বিরতির পর ব্যাপারটা সহজ হয়ে গেল।’
মিরাজ সাজঘরে ফেরেন ৭৮ রানে। তখনও ৮৪ রানে ব্যাটিং করছিলেন লিটন। এর মধ্যেই তার পায়ে দুইবার ক্র্যাম্প করে। লেজের ব্যাটসম্যান হাসান মাহমুদ তাকে সেঞ্চুরি পেতে এবং দলের স্কোর বড় করতে বড় ভূমিকা রাখেন। তার ব্যাটিং নিয়ে লিটন বলেছেন, ‘হাসান যখন ব্যাট করতে আসে, তখন আমার কাছে কোনো রানের সুযোগ ছিল না। সব ফিল্ডার সীমানায় চলে গেল। আমি আবার সময় নিয়েছিলাম, এবং আমাকে ওভারগুলো খেলতে হয়েছিল। রান বা কিছুই নেওয়া হয়নি। আমার জন্য অনেক সিঙ্গেল খোলা ছিল। কিন্তু বাউন্ডারি আসেনি। ওদিকে হাসান বেশ দায়িত্বশীল ব্যাটিং করেছে। এবং কৃতিত্ব হাসানকে দিতে হবে; সে সত্যিই ভালো ব্যাটিং করেছে।’ উইকেটকিপিং উপভোগ করার কথাও বললেন লিটন, ‘(উইকেট কিপিং) হ্যাঁ, অবশ্যই। আমি টেস্ট ম্যাচে কিপিং করতে পছন্দ করি কারণ এটা আমার কাজ। আমি উইকেটের পেছনে আমার কাজ করেছি, এবং আমার দলও ভালো করেছে।’
অধিনায়ক শান্তর মতো লিটনের চোখেও এই জয়, এই সাফল্য দলীয় প্রচেষ্টার ফসল, ‘(ঐতিহাসিক জয়) আমরা যখন এখানে এসেছিলাম, দেশের পরিস্থিতি ভালো ছিল না। আমরা আগে এখানে পৌঁছেছিলাম এবং নিজেদের প্রস্তুতি নিয়েছি। এটা সম্পূর্ণটাই দলীয় প্রচেষ্টা। এই কন্ডিশনে প্রতিটি খেলোয়াড় যেভাবে নিজেদেরকে নিংড়ে দিয়েছে…এখানে পাঁচদিন টেস্ট খেলা কঠিন। সাফল্যের সব কৃতিত্ব আমার সতীর্থ এবং কোচিং স্টাফদের দেওয়া উচিত।’