লাইমলাইটে মেহেদী হাসান মিরাজই ছিলেন এগিয়ে। নাজমুল হোসেন শান্ত একটু পিছিয়ে। বয়সভিত্তিক দলে, অনূর্ধ্ব-১৫, ১৭, ১৯ মিরাজের নেতৃত্বেই শান্ত খেলেছেন। ডেপুটিও হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। যুব ক্রিকেট পেরিয়ে মিরাজই দুজনের মধ্যে আগে জাতীয় দলে আসেন। শান্ত যোগ দেন পরে। মিরাজ শুরু থেকে জাতীয় দলের অপরিহার্য ক্রিকেটার হয়ে ওঠেন। শান্ত পায়ের নিজের জমিন খুঁজতে অনেক সময় নেন। নাটকীয়তার সঙ্গে ছিল উঠা-নামার অধ্যায়।
কঠিন পথ পেরিয়ে শান্ত এখন জাতীয় দলে তিন ফরম্যাটে অধিনায়ক। মিরাজ কেবল রয়েছেন ওয়ানডে ও টেস্ট দলে। মিরাজকে টপকে শান্ত অধিনায়ক হলেও ভেতরে মিরাজকেই অধিনায়ক মনে করেন তিনি। বিসিবির হোম অব ক্রিকেট পডাস্টে সেই গল্প শোনালেন শান্ত, ‘এখানে মজার ব্যাপার হলো যে, আমরা অনূর্ধ্ব-১৫ দল থেকে একসাথে। অনূর্ধ্ব-১৫ দল থেকে মিরাজ কিন্তু আমার অধিনায়ক। আমি এখনো এটা বিশ্বাস করি ও-ই আমার অধিনায়ক। এটা ও জানে।’
বয়সভিত্তিক দল থেকে একসঙ্গে খেলায় মিরাজ ও শান্তর বন্ধুত্ব বেশ গাঢ়। তাই তো কে অধিনায়ক, কে দায়িত্বে, কে দলের বাইরে, কে ভেতরে সেসব দুজনের কাছে খুব একটা উল্লেখযোগ্য বিষয় নয়। শান্তর কথাতে তেমনটাই ওঠে এলো, ‘জিনিসটা হলো, যখন আমরা খেলেছি একসাথে বিষয়টা এমন ছিল না যে ও অধিনায়ক বা আমি অধিনায়ক। ওর কাছে কখনোই মনে হয়নি যে আমি অধিনায়ক। আবার এখন আমি অধিনায়ক, ও নিজেও হয়তো মনে করে না যে আমি অধিনায়ক। ওর যখন মনে হয় যে এটা দলের জন্য ভালো হবে ও আমার কাছে আসে। ও যখন অধিনায়ক ছিল তখন আমি গিয়ে দেখা যেত একটা ফিডব্যাক দিতাম। বোঝাপড়াটা এতো ভালো।’
পেছনে ফিরে শান্ত অজানা অনেক কিছু জানালেন, ‘আমার মনে আছে আমরা অনূর্ধ্ব-১৯ দলের হয়ে যে বিশ্বকাপটা খেলেছি বা এর আগে যত সিরিজ খেলেছি নির্বাচকদের তখন বলতে শুনেছি, ‘‘এই প্রথম অনূর্ধ্ব-১৯ দলে অধিনায়ক ও সহ-অধিনায়কের মধ্যে কোনো মনমালিন্য নেই।’’ থাকে না… একটু জেলাসি তো থাকেই। কিন্তু ওই জিনিসটা আমাদের মধ্যে একদমই নেই। আমাদের এতোটাই ভালো বোঝাপড়া ওই সময় থেকে। এখনও আমরা একসঙ্গেই খেলছি।’
বন্ধুত্বের, বিশ্বাসের, আত্মবিশ্বাসের আরেকটি গল্পও ভাগাভাগি করেছেন শান্ত, ‘আরেকটা মজার বিষয়, জাতীয় দলে আমরা যখন খেলা শুরু করলাম একসাথে, আমি তখন খেলছি-খেলছি না এরকম অবস্থা। আর মিরাজ তখন থিতু হয়েছে। একটা সময়ে ও এসে আমাকে বললো, ‘‘আমার বিশ্বাস তুই আমার আগে বাংলাদেশ দলের অধিনায়ক হবি।’’ ও তখন কেন এটা বলেছে আমার জানা নেই। এরকম বোঝাপড়াটা আমাদের ভেতরে আছে। কে অধিনায়ক, কে অধিনায়ক না সেগুলো আমাদের মধ্যে নেই।’
কোন বিশ্বাস থেকে মিরাজ এমন কথা বলেছিলেন? উত্তরটা তার মুখ থেকেই শুনুন, ‘আমার সব সময় মনে হয় না…হঠাৎ করে মনে হয়। হঠাৎ করে যখন মনের ভেতর থেকে কিছু একটা আসে তখন আমি আবার মনের ভেতরে এটা রাখতে পারি না। আর যার সম্পর্কে আসে এটা আমি তাকে বলেও দেই। এটা ওকে তাই বলেছিলাম যে, বাংলাদেশ দলে একসাথে খেললে আমার আগে তুই অধিনায়ক হবি।’