খেলাধুলা

চার ডেলিভারিতে চেন্নাইয়ে মুখে মুখে হাসানের নাম

সারাদিন রোদের দেখা নেই। শেষ বিকেলে চিপকে উঁকি দেয় সূর্য। লং অফে বাউন্ডারি লাইনে ফিল্ডিংয়ে হাসান মাহমুদ। ভারতের বাঘা বাঘা ব্যাটারদের সাজঘরে পাঠানো হাসানকে দেখেই ভারতের দর্শকরা নড়ে চড়ে বসেন। কেউ কেউ তাকে নাম ধরেই ডাকছেন। মুঠোফোন হাতে নিয়ে ক্যামেরাবন্দি করেছেন।

মাত্র চতুর্থ টেস্ট খেলতে নামা হাসান ভারতে অচেনা মুখ। কিন্তু চারটি অসাধারণ ডেলিভারিতে এখন তার নাম মুখে মুখে। এই চার ডেলিভারিতে যে ফিরিয়েছেন রোহিত শর্মা, শুভমান গিল, বিরাট কোহলি ও ঋষভ পন্থকে। চীপকে প্রথম টেস্টের প্রথম দিনের শুরুতে দুর্দান্ত বোলিংয়ে চার উইকেট নিয়ে বাংলাদেশকে দেখিয়েছিলেন স্বপ্ন।

শুধু দর্শকরা নয় হাসানকে নিয়ে বহুল চর্চা হচ্ছে চীপকের প্রেসবক্সেও। ভারতীয় সংবাদকর্মীদের কাছেও এই তরুণ যে অচেনা। গতির কারণে সিরিজের আগে নাহিদ রানা আলোচনায় থাকলেও প্রথম দিনে সব ফোকাস কেড়ে নেন লক্ষ্মীপুর এক্সপ্রেস।

তাইতো বারবার বাংলাদেশি সংবাদকর্মীদের কাছে ছুটে আসছিলেন ভারতীয়রা। উদ্দেশ্য একটাই, হাসান সম্পর্কে অজানা কিছু জেনে নেওয়া। ভারতের প্রথম সারির ব্যাটারদের আউট করায় মূলত তাদের আগ্রহ বেড়ে যায় কয়েকগুণ। প্রথম দিন শেষে হাসানের উইকেট চারটি, ১৪ ওভারে খরচ করেছেন ৫৮টি রান। ভারতের মাটিতে এর আগে ৪ উইকেট নেওয়ার কৃতিত্ব আছে একমাত্র আবু জায়েদ রাহীর। এর আগে সবশেষ ২০১৯ সালে ১০৮ রানে ৪ উইকেট নিয়েছিলেন রাহী।

দুই দিকে সুইং করিয়ে শুরু থেকে চাপে রাখেন হাসান। সিমে পরাস্ত করেন ভারতীয় অধিনায়ককে। খোঁচা দিয়ে দ্বিতীয় স্লিপে ক্যাচ তুলে দেন নাজমুল হোসেন শান্তর হাতে। দ্বিতীয় উইকেটের জন্য বেশিক্ষণ অপেক্ষা করতে হয়নি। পরের ওভারে শিকার শুভমান গিল। অসাধারণ ডেলিভারি না হলেও যেন ধারাবাহিভাবে দারুণ বোলিংয়ের পুরস্কার পেয়েছেন হাসান। লেগ সাইডের বলে ব্যাট চালিয়ে ক্যাচ দেন উইকেটের পেছনে।

গিল আউট হলেও চীপকে চলে করতালি। কারণ ব্যাটিংয়ে আসছেন কিং কোহলি! কিন্তু তাকেও বেশিক্ষণ থাকতে দেননি। কোহলির বাইরের বলের দুর্বলতা কাজে লাগিয়ে ফেরান তাকে। ড্রাইভ করতে গিয়ে ক্যাচ দেন উইকেটের পেছনে।

টানা তিন ওভারে তিন উইকেট। চতুর্থ উইকেটের জন্য অপেক্ষা করতে হয় লম্বা সময়। জুটি গড়ে ঋষভ পান্থ যখন চোখ রাঙ্গানি দিচ্ছিলেন তখন ফেরান তাকে। এবার শর্ট বল, একটু ওয়াইড, কাট করতে গিয়ে দেরি করে ফেলেন পান্থ, তাতেই কাটা পড়েন। বল খোঁচা লেগে যায় লিটনের হাতে। 

এই চারটি ডেলিভারি হাসানকে যেন তারকাখ্যাতি এনে দেয়।

দিনশেষে সংবাদ সম্মেলনেও ছিল সেটির রেশ। ভারতীয় সাংবাদিকরা নানা কিছু জানতে চেয়েছেন। এরমধ্যে অন্যতম ছিল তার বলের মুভমেন্ট নিয়ে। হাসানের উত্তর, ‘এটা আমার নিজস্ব দক্ষতা, যারা আমার পেছনে শ্রম দিয়েছেন, তাদেরকেও ধন্যবাদ।’