খেলাধুলা

এবার শান্ত-সাকিবদের মুদ্রার উল্টো পিঠ দর্শন

মধ্যাহ্ন বিরতি পর্যন্ত যাবে? ঘুরপাক খাচ্ছিলো এই প্রশ্ন। তবুও আশার দানা বাঁধছিল সকালের শুরুটা দেখে। হাতের নাগালে বিরাট কোহলি-রোহিত শর্মা দর্শনের সুযোগ হাতছাড়া করেনি চিপকের দর্শকরা। সুপার সানডেতে সেই সুযোগ আর থাকলো কই। ততক্ষণে অর্ধেক গ্যালারি ভরে গেছে, ঢোকার অপেক্ষায় আরও অনেকে। 

বাংলাদেশ দুই ঘণ্টাও খেলতে পারেনি। ছুটির দিনে আনন্দ করতে আসা দর্শকরা মাঠ ছাড়েন হতাশা নিয়ে। এক দর্শক তো রাগে বলছিলেন, ‘এমন হলে খেলার দরকার কী।’

রবীচন্দ্রন অশ্বিনকে ছক্কা মারতে গিয়ে সাজঘরে ফেরেন মেহেদী হাসান মিরাজ (১০)। সেঞ্চুরির সঙ্গে অশ্বিনের ঝুলিতে জমা হয় ৫ উইকেট! মিরাজ ফিরতেই স্পষ্ট হয়ে যায়, হার খুব সন্নিকটে। মিরাজের আউটের পর বাংলাদেশ বাকি তিন উইকেট হারায় ৪ ওভারে, রান হয়েছে মাত্র ১২টি। প্রথম টেস্টে ৫১৫ রানের লক্ষ্যে খেলতে নেমে লাল সবুজের দল অলআউট হয় মাত্র ২৩৪ রানে। ২৮০ রানের বড় পরাজয়! ২ ম্যাচের সিরিজে ১-০ ব্যবধানে এগিয়ে গেলো ভারত।

বাংলাদেশের হার নিশ্চিত হয়ে গিয়েছিল গতকালই। অপেক্ষা ছিল কত ব্যবধান আর কয় সেশন আগে। ৪ উইকেটে ১৫৮ রানে তৃতীয় দিন শেষ করে বাংলাদেশ। চতুর্থ দিন খেলতে নেমে সাবলীল দেখাচ্ছিল সাকিব আল হাসান ও নাজমুল হোসেন শান্তকে। শান্ত ৫১ ও সাকিব ৫ রানে অপরাজিত ছিল। 

অশ্বিনের ঘূর্ণিতে সাকিবের আউটে পতনের শুরু। এর আগে সাকিব জীবন পেয়েছিলেন ঋষভের ভুলে। সেটি কাজে লাগাতে পারেননি। ২৫ রান করেন এই ব্যাটার। পাকিস্তানের সেঞ্চুরি করা লিটন দাস গুরুত্বপূর্ণ সময়ে আউট হন  মাত্র ১ রানে। এর আগের ইনিংসে আউট হয়েছিলেন অসময়ে অহেতুক শটে। শট বাছাই নিয়ে প্রশ্নে শান্ত জানিয়েছেন, ‘এগুলো যার যার ব্যক্তিগত ব্যাপার।’

ফিফটিতে দিন শুরু করা শান্ত এগোচ্ছিলেন সেঞ্চুরির দিকে। মারার বলে সুযোগ হাতছাড়া করেননি। কিন্তু সতীর্থদের আসা যাওয়ার মিছিলে ৮২ রানে থামতে হয় বাংলাদেশ অধিনায়ক। এরপর তিন পেসারের কেউ দুই অংকের মুখ দেখেননি। 

প্রথম ইনিংসের তুলোনায় দ্বিতীয় ইনিংসে বাংলাদেশের ব্যাটিংয়ের শুরুটা হয় দারুণ। কিন্তু থিতু হয়েও উইকেট দিয়ে আসায় সেটি শেষ পর্যন্ত কাজে আসেনি। দুই ওপেনার জাকির হাসান ও সাদমান ইসলাম ফেরেন ৩৩ ও ৩৫ রান করে। দুই অভিজ্ঞ ব্যাটার মুমিনুল হক ও মুশফিকের রহিমের ব্যর্থতাও বড় হারের একটি বড় কারণ। দুজনে আউট হন সমান ১৩ রান করে।

সর্বোচ্চ ৬ উইকেট নেন সেঞ্চুরিয়ান অশ্বিন। চতুর্থবারের মতো তিনি এই কীর্তি গড়েন। সর্বোচ্চ ৫ বার এই কীর্তি রয়েছে ইয়ান বোথামের। অশ্বিনের হাতে ওঠে ম্যাচসেরার পুরস্কার। নিজের বাড়ির মাঠে এর চেয়ে সুন্দর পারফরম্যান্স আর কী হতে পারে! এ ছাড়া ৩ উইকেট নেন রবীন্দ্র জাদেজা। 

বাংলাদেশ ব্যাকফুটে চলে যায় প্রথম ইনিংসেই। টস হেরে ব্যাটিং করতে নেমে ৩৭৬ রান করে ভারত। জবাবে মাত্র ১৪৯ রান করে বাংলাদেশ। দ্বিতীয় ইনিংসে ভারত ৪ উইকেটে ২৮৭ রান করলে বাংলাদেশের সামনে লক্ষ্য দাড়ায় ৫১৫। যেটি ছিল এক প্রকার অকল্পনীয়।  

চিপকে বড় হার দিয়ে শুরু। বাংলাদেশ লড়াইটুকু করতে পারেনি। দুই ইনিংস মিলিয়ে ব্যাটিং করতে পেরেছে মাত্র ১১০ ওভারের মতো। খেলা শেষ হয়েছে ৫ সেশন বাকি থাকতে! সংবাদ সম্মেলনে অধিনায়ক শান্তও কাঠগড়ায় দাঁড় করালেন ব্যাটারদের। জানিয়েছেন ভুল থেকে শেখার কথা। অথচ ম্যাচটি হতে পারতো বাংলাদেশের পেসারদের।

প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে ভারতের মাটিতে ৫ উইকেট নিয়েছিলেন হাসান মাহমুদ। প্রথম ইনিংসের শুরুতে ভিত নাড়িয়ে দিয়েছিলেন ভারতীয় টপ অর্ডারদের। রোহিত শর্মা থেকে বিরাট কোহলি, কে ছিলেন না উইকেটের তালিকায়। দ্বিতীয় দিন সকালে তোপ দাগিয়েছেন তাসকিন আহমেদ। কিন্তু ব্যাটারদের ব্যর্থতায় সেগুলো পড়ে গেছে আড়ালে।

অথচ এই সফরে আসার আগে পাকিস্তানকে তাদের মাটিতে ভূ-পাতিত করে এসেছেন শান্তরা। এক ম্যাচ না যেতেই মুদ্রার উল্টো পিঠ দেখেছেন তারা। শান্ত বলেছেন শেখার কথা। এই শিক্ষা কি কানপুরে কাজে লাগাতে পারবেন?