খেলাধুলা

স্টেডিয়ামের ভেতরে পীরের মাজার

গ্রিন পার্কের প্রেসবক্সের ব্যালকনি থেকে নিচে তাকাতে চক্ষুচড়গাছ। তিন-তলা থেকে স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে এখানে রয়েছে তিন-তিনটি কবর! চারদিকে দেয়াল, ভেতরে চারটি পিলারের উপর টিনের ছাদ, নিচে দেখা যাচ্ছে কবর। স্টেডিয়ামের ভেতর কবর, শুনতেও কেমন যেন অদ্ভুতুড়ে।

বিশ্বের বিভিন্ন স্টেডিয়ামের ভেতরে নানা-রকমের স্থাপনা থাকে। কিন্তু কারও কবর থাকবে এমন কিছু নিশ্চয়ই কেউ কল্পনাই করবে না। সত্যি তাই। ভারতের উত্তর প্রদেশের কানপুরে অবস্থিত এই স্টেডিয়ামে এই কবরগুলো সাইয়েদ বাবা নামে একজন পীর ও তার দুই আত্মীয়ের।

সকলের কাছে এটি সাইয়েদ বাবার মাজার নামে পরিচিত। সবুজের সমারোহে অবস্থিত গ্রিনপার্কের ৭ নম্বর গেট তথা মিডিয়া গেটের বামে এই মাজারের অবস্থান। ছোট একটি গ্রিলের দরজা দিয়ে আটকানো থাকে এই মাজারের গেট।

 

ভেতরে পা ফেলতে মনে হলো এই মাজার পড়ে আছে অবহেলায়। টাইলসে কাঁদা, গাছের পাতাসহ নানা রকমের ময়লা। সাইয়েদ বাবার কবরটির অবস্থান একবারে কেন্দ্রে। খাটিয়ার মতো কবরের তিন পাশে নিল রঙের গ্রিল। মাথা বরারবর সামনে টাইলসের দেয়াল। কবরটি ফুলের ছাপ বিশিষ্ট হলুদ রঙের কাপড়ে মোড়ানো। 

সাইয়েদ বাবার কবরের সামনে রাখা আগরবাতির একটি প্লেট। একপাশে একটি নীল রঙের আলমারি। আলমারির উপরে একপাশে ছিদ্র দেখে মনে হবে দানবাক্স। উপরের রাখা বেশ কয়েকটি জায়নামাজ। দেখা মিলেছে নীল রঙের গিলাফের।

পীর-বাবার কবরের পেছনে আরও দুটি কবর। টাইলসে অঙ্কিত কবরগুলো মোড়ানো হলুদ রঙের কাপড়ে। তাদের কবরের পেছনে আছে একটি গাছও। গাছের পাশে নিচে রাখা বেশকয়েকটি ইট। বাংলাদেশ-ভারত ম্যাচ চলাকালীন দায়িত্বরত একজনকে মাজারে ঢুকে নামাজ পড়তে দেখা গেছে। কেউ আবার ভেতরে ঢুকে খেয়েছেন দুপুরের খাবারও।

১৯৪৫ সালে গ্রিনপার্ক স্টেডিয়ামটি স্থাপিত হয়। ভারতের স্বাধীন হওয়ারও দুই বছর আগে ব্রিটিশ আমলে স্টেডিয়ামটি তৈরি হয়। তারও আগে থেকে সাইয়েদ বাবার মাজারের অবস্থান বলে জানিয়েছেন আহমেদ নামে গ্রিনপার্কের এক কর্তা।

 

‘এটি সাইয়েদ বাবার মাজার নামে সবার কাছে পরিচিত। বাবার নাম আমরা জানি সাইয়েদ বাবা পীর সাব। স্টেডিয়াম হওয়ার আগে থেকে বাবার মাজার এখানে রয়েছে, একশ বছর হবে কমপক্ষে’ -বলছিলেন আহমেদ।    ভক্তদের মান্নত কিংবা জিয়ারত করার জন্য সুযোগ থাকে সকলের। তবে স্থানীয়দের বাইরে কেউ আসলে একটু বিড়ম্বণা পোহাতে হয় বলে জানান আহমেদ। 

তিনি বলেন, এখানে অনেকে মান্নত-জিয়ারত করতে আসে। তবে সবাই সহজে আসতে পারে না। বিশেষ করে স্থানীয়দের বাইরের কেউ হলে তার প্রবেশ করতে সমস্যা হয়। যেহেতু স্টেডিয়ামের ভেতরে এটি তাই অনেকে আসতেও চায় না।’

পুরোনো স্থাপনায় দাঁড়িয়ে ঐতিহাসিক এই স্টেডিয়ামটি। ভেতরে রয়েছে ক্রিকেট জাদুঘরও। পাশে রয়েছে ক্রিকেটের একটি হোস্টেল গ্যালারির একটি অংশ। যদিও সেটি ব্যবহৃত হচ্ছে না, ধসে পড়ার ভয়ে। সবমিলিয়ে এই গ্রিনপার্কে রয়েছে ভারতীয় ক্রিকেটের সুখকর স্মৃতি। 

১৯৫২ সালে এই স্টেডিয়ামে প্রথম টেস্ট ম্যাচ খেলে ভারত। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ৮ উইকেটে স্বাগতিকরা হারে। প্রথম জয়ের দেখা পায় ১৯৫৯ সালে, অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে। ১১৯ রানে জয় পায় ভারত। এই মাঠে বাংলাদেশ প্রথম টেস্ট ম্যাচ খেলতে নেমেছে ২৭ সেপ্টেম্বর থেকে। 

উত্তর প্রদেশের লক্ষ্ণৌতে আরেকটি স্টেডিয়াম হওয়াতে কানপুরে খেলা হয় না বললেই চলে। সবশেষ টেস্ট হয়েছে ২০২১ সালে, নিউ জিল্যান্ডের বিপক্ষে। তারও চার বছর আগে হয়েছে ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টি ম্যাচ।