খেলাধুলা

রূপ হারিয়ে ধুঁকছে শচীনের সেই রূপ সিং

দেয়ালে ধুলোবালির আস্তরণ। পলেস্তরা যেন খসে খসে পড়ছে। লাগোয়া রাস্তায় কোনো ব্যস্ততা নেই। হুটহাট সাঁই সাঁই করে ছুটে যাচ্ছে গাড়ি। গেইটের সামনে বড় অক্ষরে লেখা ‘ক্যাপ্টেন রূপ সিং স্টেডিয়াম।’ 

১৪ বছর পর ভারতের মধ্যপ্রদেশের পৌরাণিক শহর গোয়ালিয়রে ফিরছে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট। অথচ রূপ সিং নিঃসঙ্গ শেরপা। ক্রিকেটের সব এখন শহর থেকে প্রায় ১০ কিলোমিটার দূরে শ্রীমন্ত মাধভরাও ক্রিকেট স্টেডিয়ামে।

এই রূপ সিং এর নাম এলেই সামনে আসে ক্রিকেটের জীবন্ত কিংবদন্তি শচীন টেন্ডুলকারের নাম। রূপ সিংয়ের ২২ গজে  ওয়ানডে ক্রিকেট ইতিহাসের প্রথম ডাবল সেঞ্চুরি এসেছে লিটল মাস্টারের ব্যাট থেকে। ২০১০ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে এই ম্যাচের পর গোয়ালিয়রে আর কোনো ম্যাচ হয়নি।

স্টেডিয়ামের ভেতরে প্রবেশ করতে কোনো বাধার মুখে পড়তে হয়নি। যেন যে কেউ চাইলেই এখন ঢুকতে পারে। প্রথম চোখে পড়বে হলরুমের মতো একটি ঘর। স্টেডিয়ামে পা ফেলার আগে আরও একটি ছোট কামরার দেখা মিলবে।

দেয়ালে টাঙানো লম্বা স্কোরশিট। কোন ম্যাচের স্কোর সেটা অবশ্য বোঝার কথা। শচীনের সেই কীর্তির বর্ণনা দেয়া আছে পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে। স্কোরবোর্ডের সঙ্গে জ্বলজ্বল করছে শচীন টেন্ডুলকারের উদযাপনের ছবি। ছবি আছে এই ম্যাচের স্কোরার সুনীলেরও। 

স্মৃতিকাতর সুনীল বলেন, ‘এরকম একটি ঐতিহাসিক ম্যাচের স্বাক্ষী হতে পারাটা আমার জন্য অনেক বড় গর্বের। এই ম্যাচটি হওয়ার কথা ছিল কানপুরে। কিন্তু সেখানে সমস্যা হওয়ায় ম্যাচ আসে রূপ সিংয়ে। মাত্র ১৪ দিনের নোটিশে আমরা মাঠ প্রস্তুত করি। ইতিহাসের সাক্ষী হতে পারি।’

স্কোরশিটের পাশেই একটি কাঁচের বাক্সে পুরো স্টেডিয়ামের মানচিত্র। অর্থাৎ কোথায় কী আছে সবকিছুর বর্ণনা আছে এই কাঁচের পাত্রের মধ্যে। কামরা পেরিয়ে মাঠে পা ফেলতেই ফুটে ওঠে অবহেলার চিত্র। চারপাশের গ্যালারির অবস্থা যা-তা। কোথাও চেয়ার ভেঙে পড়েছে, কোথাও শ্যাওলা আর ধূলোবালির আস্তরণে আসল রূপ হারিয়ে গেছে। 

ফ্লাডলাইট থাকলেও এগুলো দীর্ঘদিন ব্যবহার না হওয়ার ফলে অচল হয়ে আছে। ড্রেসিংরুম হতে শুরু করে গুরুত্বপূর্ণ সব স্থানই যেন ময়লা আবর্জনার বাগাড়। মাঠে কোনো উইকেট নেই, তবে উইকেট বানানোর জন্য কিছু জায়গা উঁচু মাটিতে ভরাট করে রাখা হয়েছে।

ড্রেসিং রুমের সামনে দুজন উঠতি ক্রিকেটারকে দেখা গেলো ব্যাট-বল নিয়ে টুং-টাং করতে। তাদের একজন আবার বাংলাদেশ-ভারত দলের নেট বোলার হিসেবেও কাজ করছিলেন। সৌরভ জাট নামে এই উঠতি ক্রিকেটার বলেন, ‘এই মাঠটি ইতিহাসের অংশ। আমরা তখন অনেক ছোট ছিলাম। বোঝার বয়স ছিল না। এখন এমন অবস্থা দেখে কিছুটা খারাপই লাগে।’  

কোনো কর্তাকে পাওয়া যায়নি। বেরিয়ে যাওয়ার পথে সিকান্দার সিং যাদব নামে একজন গ্রাউন্ডসম্যানের দেখা মেলে। এদিক সেদিক ঘুরছেন; যেন কোনো কাজ নেই। এই মাঠ কেন এমন অবহেলায় পড়ে আছে তার কোনো সঠিক উত্তর জানা নেই। তার জানারও কথা না অবশ্য।

সিকান্দারের ভাষ্যমতে এই স্টেডিয়ামে বয়সভিত্তিক ক্রিকেটের টুর্নামেন্ট হয়, ‘আমি এখানে কাজ করি ১০ বছর ধরে। এর আগে এখানে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট হয়েছে। এখানে বয়সভিত্তিক ক্রিকেটের টুর্নামেন্ট হয়। আগামী মাসে অনূর্ধব-১৫ মেয়েদের টুর্নামেন্ট আছে।’

এই স্টেডিয়ামটি সংস্কার হবেও বলে জানান সিকান্দার, ‘বাংলাদেশ-ভারত ম্যাচ শেষে এর সংস্কার কাজ শুরু হবে। ভবিষ্যতের জন্য এই মাঠও প্রস্তুত রাখা হবে।’

ক্যাপ্টেন রূপ সিং স্টেডিয়াম মধ্যপ্রেদেশ ক্রিকেট অ্যসোসসিয়েশনের (এমপিসিএ) অন্তর্ভুক্ত নয়। ১৯৮৮ সালে এই মাঠের যাত্রা শুরু হয় ভারত-ওয়েস্ট ইন্ডিজ ম্যাচ দিয়ে। ২২ বছর পর দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ম্যাচ দিয়ে যাত্রা থামে। জাতীয় হকি দলের সদস্য রূপ সিংয়ের নামে এই স্টেডিয়ামটির যায় যায় অবস্থা। তবে শচীনের কীর্তি এখনো মনে রেখেছে রূপ সিংকে, কিন্তু হারিয়ে গেছে তার রূপ।