খেলাধুলা

উৎসবের মঞ্চে ব্যর্থতার মিছিলে ডুবলো বাংলাদেশ

রাজাদের শহরে ১৪ বছর পর ফিরেছে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট। হিন্দু মহাসভার হুমকিকে উড়িয়ে বিকেল নাগাদ গোয়ালিয়র মেতে উঠে উৎসবে। শ্রীমান্ত মাধবরাও সিন্ধিয়া ক্রিকেট স্টেডিয়াম প্রথমবার আন্তর্জাতিক অঙ্গনে পা রাখবে, এই আনন্দে যেন তর সইছিল না ভারতের মধ্যপ্রদেশের শহরটির হাজারো দর্শকের।  

গোধূলি লগ্নে আশপাশে পাহাড় ঘেরা শ্রীমান্ত মাধবরাও স্টেডিয়াম নৈসর্গিক রুপে দেখা দেয়। মঞ্চ প্রস্তুত, দর্শকরা আসন গ্রহণ করে, সুপার সানডের সন্ধ্যা-রাত যেন শুধু আনন্দের। কিন্তু না, বাংলাদেশের ব্যাটাররা ব্যাট হাতে ব্যর্থতার মিছিলে ম্যাচটিকে করে ফেলে একপেশে। হারিয়ে যায় টি-টোয়েন্টির আসল রুপ। উইকেটের মিছিলে একটা পর্যায়ে দর্শকদের উচ্ছ্বাসও যেন কমে যায়।

টস হেরে ব্যাটিং করতে নেমে বাংলাদেশের সংগ্রহ মাত্র ১২৭ রান। ১৯.৪ ওভার খেলে অলআউট। ওভার প্রতি ৬.৪৫। পাওয়ার প্লেতে ২ উইকেট হারিয়ে মাত্র ৩৯! একই উইকেটে পাওয়ার প্লেতে ভারত তুলেছে ৭১ রান। ১২৮ রানের লক্ষ্যে পৌঁছাতে খরচ হয়েছে মাত্র ১১.৫ ওভার। উইকেট পড়েছে ৩টি। তিন ম্যাচ সিরিজের প্রথমটিতে জিতে ভারত এগিয়ে গেল ১-০ ব্যবধানে।

তাসকিন আহমেদকে টানা দুই চার ও এক ছয়ের ঝড়ে দলকে বড় জয় এনে দেন হার্দিক পান্ডিয়া। ছক্কার মারার আগের বলে হাত ফসকে উড়ে যায় ব্যাটও। তার ব্যাট থেকে আসে ১৬ বলে ৩৯ রান। ছক্কা হাঁকান ২টি আর চার ৫টি। হার্দিকের সঙ্গী ছিলেন অভিষেক ম্যাচ খেলতে নামা নীতিশ কুমার রেড্ডি। ১৫ বলে ১৬ রান করেন তিনি। দুজনের জুটি থেকে আসে ২৪ বলে ৫২ রান।

লক্ষ্যে খেলতে নেমে ঝড়ো শুরু এনে দেন সাঞ্জু স্যামসন-অভিষেক শর্মা। ৭ বলে ১৬ রান করে ফেরেন অভিষেক। দুজনের ওপেনিং জুটি থেকে আসে ১২ বলে ২৫ রান। সাঞ্জু টিকে থাকলেও ২৯ রানের বেশি করতে পারেননি। সমান ২৯ রান করেন সূর্যকুমার যাদব।  বাংলাদেশের হয়ে তাসকিন এলোমেলো বোলিং করেন। ২.৫ ওভারে দেন ৪৪ রান। মোস্তাফিজুর রহমান ১ উইকেট নিলেও ৩ ওভারে দেন ৩৬ রান। ১ ওভারে ৭ রান দিয়ে ১ উইকেট নেন মিরাজ। 

এর আগে ইনিংসের চতুর্থ বলে আর্শদীপের গতি ব্যবহার করে থার্ডম্যান অঞ্চল দিয়ে দারুণ চারে ইনিংস শুরু করেছিলেন লিটন দাস। স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলতে না ফেলতেই আউট ডানহাতি এই ব্যাটার। উড়িয়ে মারতে গিয়ে শর্ট কাভারে ধরা পড়েন তিনি। ২ বলে আসে ৪ রান। পরের ওভারে পারভেজ হোসেন ইমনের দারুণ ছক্কা। হার্দিক পান্ডিয়াকে ফ্লিক করে আছড়ে ফেলেন গ্যালারিতে। আভাস দিয়েও বড় ইনিংসের পথে হাঁটতে পারলেন না তানজীদ হাসান তামিমের পরিবর্তে খেলতে নামা ইমন। ৯ বলে ৮ রান করেন তিনি।

দুই ওপেনার ফেরার পর অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত-তাওহীদ হৃদয় প্রতিরোধ গড়ার চেষ্টা করেন। কিন্তু হৃদয়ের যেন ঠিকঠাক হচ্ছিল না। বল থেকে রানের ব্যবধান বাড়তে থাকে। অহেতুক পুল করতে গিয়ে ইতি ঘটে হৃদয়ের সংগ্রামী ইনিংসের। ২৬ রানে ভাঙ্গে জুটি। হৃদয়ের ফেরার পর মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ-জাকের আলী অনিক যেন ক্রিজে আসলেন আর গেলেন।

এমন মুহুর্তে অভিজ্ঞ মাহমুদউল্লাহর আউট আরও বিপদে ফেলে। মায়াঙ্ক যাদবকে এগিয়ে এসে মারতে চেয়েছিলেন। টাইমিং ঠিক হয়নি। ডিপ পয়েন্টে ধরা পড়েন ওয়াশিংটন সুন্দরের হাতে। ১ রান করেন বাংলাদেশ দলের সবচেয়ে অভিজ্ঞ এই ব্যাটার। অভিষেক ম্যাচে মায়াঙ্কের প্রথম শিকার হলেন মাহমুদউল্লাহ। এক ওভার পর বরুণ চক্রবর্তীর বল বুঝতেই পারেননি জাকের আলী। তার ব্যাট থেকে আসে ৬ বলে ৮ রান।

৫৭ রানে ৫ উইকেট হারিয়ে ধুঁকতে থাকে বাংলাদেশ। আরেক প্রান্তে তখন লড়ছিলেন শান্ত। ক্রিজে আসেন সাকিব আল হাসানের পরিবর্তে দলে আসা মেহেদি হাসান মিরাজ। শান্ত ২৫ বলে ২৭ রান করে ফেরেন। এরপর হাল ধরেন মিরাজ। মাঝে ৫ বলে ১১ রানের ক্যামিওতে তাকে দারুণ সঙ্গ দেন রিশাদ। সমান রান করেন তাসকিন আহমেদও। অন্য প্রান্তে হাল ধরে থাকা মিরাজকে আউট করতে পারেনি ভারত। ৩২ বলে ৩৫ রান করে কোনোমতে সম্মানজনক স্কোরে সহায়তা করেন এই অলরাউন্ডার।

মাত্র ১৪ রান দিয়ে ৩.৫ ওভারে ৩ উইকেট নেন আর্শদীপ সিং। ম্যাচসেরাও হন তিনি। ৩১ রান দিয়ে সমান উইকেট নেন বরুণ চক্রবর্তী। ১টি করে উইকেট নেন হার্দিক, মায়াঙ্ক ও ওয়াশিংটন। জাসপ্রিত বুমরাহ কিংবা মোহাম্মদ সিরাজদের মতো বোলাররা নেই, তবুও বাংলাদেশের ব্যাটাররা যেন চোখে সর্ষেফুল দেখলেন।