‘অসংখ্য ম্যাচ খেলেছি, অসংখ্য ম্যাচ দেখেছি, তবে এমন ম্যাচ কখনো দেখিনি’ -মন্তব্যটি করেছেন দেড় যুগের বেশি সময় ধরে খেলা ক্রিকেটার তামিম ইকবাল খান। সিরিজ আগেই চলে গেছে ভারতের পকেটে। তবুও মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের বিদায়ী ম্যাচ বলে কথা। বাংলাদেশের হয়ে সবচেয়ে বেশি টি-টোয়েন্টি খেলা মাহমুদউল্লাহও হলেন বিরল শেষের সাক্ষী। চার-ছক্কার বৃষ্টিতে হতাশায় মোড়ানো ইতি টেনেছেন তিনি।
দিল্লিতে দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টিতে সর্বোচ্চ ৮৬ রানে হেরে সিরিজ খুইয়েছিল। এবার ভারতের বিপক্ষে ১৩৩ রানে হেরে সেই হারকেও ছাপিয়ে গেল বাংলাদেশ। আজ ভারতের করা রেকর্ড ২৯৭ রানের জবাবে বাংলাদেশ থামে মাত্র ১৬৪ রান করে। সিরিজ শুরু হয়েছিল গোয়ালিয়রে ৭ উইকেটে হেরে। ৩-০ ব্যবধানে ধবলধোলাই হয়ে ঘরে ফিরছে লাল-সবুজের দল। ৫ বছর আগে সফরে এসে ২-১ ব্যবধানে সিরিজ হেরেছিল।
হায়দরাবাদের রাজীব গান্ধী আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে টস জিতে ব্যাটিং করতে নেমে ৬ উইকেটে ২৯৭ রান করে ভারত। টেস্ট খেলুড়ে দেশগুলোর মধ্যে এটি সর্বোচ্চ দলীয় সংগ্রহ। ১২০ বলের মধ্যে বাউন্ডারি হয়েছে প্রায় অর্ধেক (৪৭) বলে। এমন কখনো আর দেখা যায়নি। ছক্কা হয়েছে ২২টি। টি-টোয়েন্টিতে ২২ ছক্কা কিংবা তার বেশি এর আগে হয়েছে মাত্র ৪ বার। তাইতো ধারাভাষ্য দিতে হায়দরাবাদে থাকা তামিমের এমন মন্তব্য।
গত আইপিএলে হায়দরাবাদে সর্বোচ্চ ২৭৭ রান হয়েছিল। এই ম্যাচের আগেও আলোচনায় ছিল বড় স্কোর। তবে এমন স্কোর হবে আশা করেনি হয়তো কেউই। হায়দরাবাদ কাঁপানো অভিষেক শর্মা (৪) রানে ফিরতে স্বস্তি ফেরে কিছুটা। কিন্তু কে জানতো এই মাঠে দানবীয় রুপে হাজির হবেন সঞ্জু স্যামসন! সঙ্গী হবেন দ্য স্কাই তথা সূর্যকুমার যাদব। ১৭৩ রানের রেকর্ড জুটিতে ভিত গড়ে দেন বড় পুঁজির। দারুণ ছক্কায় সেটিকে তিন’শ থেকে তিন রান দূরে নিয়ে থামেন বার্থডে বয় রিংকু সিং! ভারত পাওয়ার প্লেতে যোগ করে ১ উইকেটে ৮১ রান। যা কম উইকেটে ভারতের সর্বোচ্চ।
মাত্র ৪০ বলে সেঞ্চুরি করেন সঞ্জু। তাসকিন আহমেদকে দ্বিতীয় ওভারে টানা চার চারে শুরু করেছিলেন এই উইকেটরক্ষক ব্যাটার। যখন আউট হয়েছেন নামের পাশে জ্বলজ্বল করছে ৪৭ বলে ১১১ রান। মোস্তাফিজুর রহমানকে মারতে গিয়ে ফেরেন সাজঘরে। পূর্ণ সদস্য দলগুলোর মধ্যে টি-টোয়েন্টিতে এটি চতুর্থ দ্রুততম, ভারতের হয়ে দ্বিতীয় দ্রুততম সেঞ্চুরি। সঞ্জুর সঙ্গে থাকা সূর্য ফেরেন মাত্র ৩৫ বলে ৭৫ রান করে। ফিফটি করেছেন ২৩ বলে।
দুজন ফিরলে ঝড়ো ব্যাটিংয়ে রানের গতি সমান রেখেছেন হার্দিক পান্ডিয়া-রিয়ান পরাগ। দুজনে মাত্র ২৬ বলে ৭০ রান যোগ করেন। পান্ডিয়া ১৮ বলে ৪৭ ও পরাগ ১৩ বলে ৩৪ রান করেন।
৪ ওভারের কোটা পূরণ করা বাংলাদেশের প্রত্যেক বোলার দিয়েছেন চল্লিশের বেশি রান। সর্বোচ্চ ৬৬ দিয়েছেন তানজীম সাকিব। ২ ওভারে ৪৬ রান দিয়েছেন রিশাদ হোসেন। টি-টোয়েন্টিতে কোনো দলের ৫ বোলারের চল্লিশের বেশি দেওয়ার রেকর্ড আছে মাত্র ৪টি দেশের।
তাড়া করতে নেমে প্রথম বলেই উইকেট হারিয়েছে বাংলাদেশ। পারভেজ হোসেন ইমন ফেরেন গোল্ডেন ডাক মেরে। এর আগে তামিম দুবার, তানজীদ ১ বার করে প্রথম বলে আউট হয়েছেন। তৃতীয় টি-টোয়েন্টিতে সুযোগ পাওয়া তানজীদ ১২ বলে ১৫ রান করেন। এরপর চারে নামা লিটন দাস নীতিশ রেড্ডির ওভারে টানা পাঁচ চারে কিছুটা স্বস্তি এনে দেন। পরের ওভারে রবি বিষ্ণোই সুইপ করতে গিয়ে ফেরেন নাজমুল হোসেন শান্ত (১১ বলে ১৪)।
তাওহীদ হৃদয়কে সঙ্গে নিয়ে এগোতে থাকেন লিটন। হৃদয়ের শুরুটা ছিল নড়বড়ে। লিটন ঝড়ো ব্যাটিংয়ে ২৫ বলে ৪২ রান করে ফেরেন। হৃদয় অপরাজিত থাকেন ৪২ বলে ৬৩ রান করে। আর কোনো ব্যাটার দেখেননি দুই অঙ্কের মুখ। ভারতের হয়ে সর্বোচ্চ ৩ উইকেট নেন বিষ্ণোই।
ম্যাচসেরা হন সেঞ্চুরিয়ান সঞ্জু স্যামসন। ১১৮ রান ও ১ উইকেট নিয়ে সিরিজ সেরা হন হার্দিক পান্ডিয়া।