খেলাধুলা

বৃহস্পতিবার ঢাকায় আসছেন সাকিব

সাকিব আল হাসানের বাংলাদেশে আসা নিয়ে নানা জটিলতা দেখা দিয়েছিল। অবশেষে সব জটিলতা একপাশে রেখে বাংলাদেশের মাটিতে পা রাখতে যাচ্ছেন সাকিব। দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে সিরিজ খেলতে বৃহস্পতিবার (১৭ অক্টোবর) দেশের মাটিতে পা রাখবেন দেশসেরা তারকা। বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) একটি সূত্র রাইজিংবিডিকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছে 

সাকিবের দেশে ফেরা নিয়ে জল্পনার শুরু আগস্টে। ক্ষমতাচ্যুত বাংলাদেশ আওয়ামী লিগের একজন সংসদ সদস্য ছিলেন সাকিব। জুলাই-আগস্টে সংগঠিত গণঅভ্যুত্থানে দেশের উত্তাল পরিস্থিতিতে জাতীয় তারকা হিসেবে সাকিবের সমর্থন আশা করছিল দেশবাসী। তবে জাতীয় দলের এই তারকা ক্রিকেটার ছিলেন নীরব।

সারা দেশের উত্তাল পরিস্থিতিতে চারদিকে যখন রক্তাক্ত, সাকিব তখন কানাডায় পরিবার নিয়ে ঘুরতে বের হয়েছিলেন। সাফারিতে গিয়ে মাই ডে-তে একটি পোস্টে সাকিব লিখেছিলেন, টরেন্টোতে একটি চমৎকার দিন কাটালাম। এই পোস্টের সূত্র ধরে তার উপর ক্ষোভ জমতে থাকে দেশবাসীর। ফলে তার দেশে আসা নিয়ে দেখা দেয় সংশয়।

সাকিবের নামে হয়েছে মামলাও। মোহাম্মদপুরে একজন গার্মেন্টস কর্মী হত্যা মামলায় আসামী করা হয় সাকিবকে। মামলার ঝামেলা মাথায় নিয়েই ভারতের বিপক্ষে খেলেছেন সাকিব। সিরিজের মাঝপথেই বিদায় জানিয়েছেন টি-টোয়েন্টিকে। সেই সঙ্গে দেশের মাটিতে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে টেস্ট খেলে নিতে চেয়েছেন অবসর।

সাকিবকে দেশের মাটিতে টেস্ট খেলার সুযোগ দিচ্ছে বিসিবিও। তবে তার দলের সঙ্গে থাকার সময়টুকু বাদে বাকি সময়ে তার নিরাপত্তার বিষয়ে শুরুতে অপারগ ছিল দেশের ক্রিকেটের সর্বোচ্চ সংস্থা। বিসিবি সভাপতি ফারুক আহমেদ জানিয়েছেন, দেশে ফিরে সাকিব আল হাসানের অবসর নেওয়ার ‘ভালো সম্ভাবনা’ আছে।

ফারুক বলেন, ‘লিগ্যালটা তো আমি বলতে পারবো না। আমার কথা হলো সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে সিদ্ধান্ত আসতে হবে। আমি তো ছোট মানুষ, বোর্ড প্রেসিডেন্ট। আমার হাতে ক্ষমতা খুব কম। সাকিবের ব্যাপারটা পুরোপুরি সরকার থেকে আসতে হবে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী আছে, সরকার আছে, উপদেষ্টা আছে তারা সিদ্ধান্ত নেবে তার সামগ্রিক দায়িত্ব নেওয়ার। আমাদের যতটুকু ক্ষমতা, স্টেডিয়ামের ভেতর ও ইনডোরে যাবে, মাঠে খেলবে, অনুশীলন করতে যাবে; এই দায়িত্ব নেওয়াটা তো খুব সহজ। এটা আমরা নিতে পারবো।’

যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভুঁইয়া বলেছেন, সাকিবের দেশে আসা এবং বাইরে যাওয়ার ক্ষেত্রে কোনো বাধা থাকার কথা না। তার নামে হত্যা মামলা থাকলেও, আইন মন্ত্রণালয় পুরো বিষয়টি দেখভাল করছে বলে জানিয়েছেন তিনি।

আসিফ মাহমুদের ভাষ্য, ‘একজন ক্রিকেটার তিনি খেলবেন এবং বাংলাদেশের নাগরিক বাংলাদেশে আসার ক্ষেত্রে কোনো বাধা আমি দেখি না। দল (সাকিবকে নিয়ে বাংলাদেশ দল) দেওয়ার বিষয় বিসিবি দেখবে। রাষ্ট্রের জায়গা থেকে প্রত্যেকটা নাগরিকের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা রাষ্ট্রের দায়িত্ব।  ক্রিকেট দলের নিরাপত্তা নিশ্চিত করাও রাষ্ট্রের দায়িত্ব। সেটা আমরা নিশ্চিত করবো। একটা বড় মুভমেন্ট হয়েছে। সাকিব আল হাসানের আগের ফ্যাসিবাদ সরকারের সঙ্গে ইনভলমেন্ট ছিল। সেটা উনি একটা স্ট্যাটাসে পরিস্কার করেছেন।’

এর আগে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে সরব উপস্থিতি না থাকায় দুঃখ প্রকাশ করেছেন সাকিব। লম্বা সময় পর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে স্ট্যাটাস দিয়ে সাকিব নিজের অবস্থান ব্যাখ্যা করেছেন এবং ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শহীদ ও আহতদের প্রতি শ্রদ্ধা ও সমবেদনা জানিয়েছেন।

সাকিব লিখেছেন, ‘আমি শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করছি সে সকল আত্মত্যাগকারী ছাত্রদের, যারা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতৃত্বে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শহীদ হয়েছেন এবং আহত হয়েছেন। তাদের প্রতি এবং তাদের পরিবারের প্রতি আমার অন্তরের অন্তঃস্তল থেকে শ্রদ্ধা এবং সমবেদনা। এই সংকটকালীন সময়টাতে আমার সরব উপস্থিতি না থাকায় আপনারা যারা ব্যথিত হয়েছেন বা কষ্ট পেয়েছেন তাদের অনুভূতির জায়গাটার প্রতি আমার শ্রদ্ধা এবং এজন্য আমি আন্তরিকভাবে দুঃখিত।’