খেলাধুলা

শেষ বিকেলে তাইজুলের ঘূর্ণিতে ‘স্বপ্নের শুরু’

ম্যাথু ব্রিটজক ভেবছিলেন আগের মতো বল বেরিয়ে যাবে। ভুলটা করলেন বল ছেড়ে দিয়ে। তাইজুল ইসলামের অফ স্ট্যাম্পে পিচ করা বল ভেঙ্গে দেয় ব্রিটজকের উইকেট। তাইজুল যেন ডানা মেলে উড়ছেন। সাকিব আল হাসানের কীর্তি ভেঙে দ্রুততম দুই’শ উইকেট, সঙ্গে শেষ বিকেলে তার ঘূর্ণিতে কম রান করেও জয়ের স্বপ্ন দেখা শুরু।

তাইজুলতো উড়তেই চাইবেন! সতীর্থ মুশফিকুর রহিম এসে কলার উঁচিয়ে দিলেন। কীর্তি বলে কথা। সোমবার (২১ অক্টোবর) দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ঢাকা টেস্টের প্রথম দিন শেষে তাইজুলের জাদুতে কিছুটা হলেও চাপ কমেছে বাংলাদেশের।

দিনশেষে প্রথম ইনিংসে প্রোটিয়াদের সংগ্রহ ৬ উইকেটে ১৪১ রান। বাংলাদেশের সামনে লিড ৩৪ রান। এই লিড যত কম হবে স্বাগতিক শিবিরের জয়ের স্বপ্ন তত বড় হবে। বাংলাদেশ টস জিতে ব্যাটিং করতে নেমে অলআউট হয় মাত্র ১০৬ রানে। যা শের-ই-বাংলায় দ্বিতীয় সর্বনিম্ন।

ঘরের ছেলে নাজমুল হোসেন শান্তদের মতো সফরকারী শিবিরের ব্যাটারদের কাছেও মিরপুর শের-ই-বাংলার উইকেট যেন দুর্বোধ্য! হাসান মাহমুদের তোপে দলীয় ৯ রানে অধিনায়ক এইডেন মার্করামকে (৬) হারিয়ে তাদের পতনের শুরু। এরপর টনি ডি জর্জি-ট্রিস্টান স্টাবসের ৪১ রানের জুটি। স্টাবসকে ২৩ রানে ফিরিয়ে ভাঙনের শুরু করে তাইজুল। এরপর একে একে আরও ৪ উইকেট নিয়ে পূর্ণ করেন ১৩তম ফাইফার।

সর্বোচ্চ ৩০ রান আসে টনির ব্যাট থেকে। জুটি গড়ে প্রতিরোধ গড়ার চেষ্টা করলেও লম্বা হতে দেননি তাইজুল। ডেবিড বেডিংহাম ১১ ও রায়ান রিকেলটনের ব্যাট থেকে আসে ২৭ রান। কাইল ভারানে ১৮ ও উইয়ান মুল্ডার ৩১ রানে অপরাজিত থেকে মাঠ ছাড়েন। তাইজুল ৪৯ রান দিয়ে সর্বোচ্চ ৫ উইকেট নেন। ৪৮ টেস্টের ৮৪তম ইনিংসে ২০০ উইকেট স্পর্শ করেন এই বাঁহাতি স্পিনার। সমান উইকেট নিতে সাকিবের লেগেছিল ৫৪ টেস্ট ও ৯১ ইনিংস। আলোকস্বল্পতার কারণে দিনের খেলা শেষ হয় ১৭ মিনিট আগে, ওভার কম হয়েছে ৬টি।

তার আগে বাংলাদেশের একাদশ দেখেই বোঝা যাচ্ছিল উইকেট কেমন হবে। একাদশে মাত্র এক পেসার! দক্ষিণ আফ্রিকাও অবশ্য বেশি ব্যতিক্রম নয়, অলরাউন্ডার মুল্ডারকে হিসেবে না ধরলে তাদের বিশেষজ্ঞ পেসার একজনই; কাগিসু রাবাদা। তবে বাংলাদেশ যেখানে অর্ধেকের বেশি ৬ উইকেট দিয়েছে পেসারকে, প্রোটিয়ারা ৬ উইকেটের ৫টিই দিয়েছে স্পিনারকে!

অথচ বাংলাদেশের ব্যাটাররা ভুল না করলে স্কোরবোর্ডে আরও কিছু রান জমা হতো। দিনশেষে তাইজুলের কণ্ঠেও ঝরেছে সেই আক্ষেপ, ‘দুই’শ-আড়াই’শ রান হলে অন্যরকম হতো।’ তবে হাল ছাড়ছেন না এখনো, ‘আমরা খুব বেশি পিছিয়ে তা না, আমাদের বেশি ভালো করতে হবে আরও।’

অহেতুক শট খেলতে গিয়ে শুরুতেই উইকেট বিলিয়ে দিয়ে আসেন সাদমান ইসলাম (০)। এরপর চোখের পলকে ৫০ রান না হতে হারিয়ে যায় ৫ উইকেট। উইকেটের মিছিলে ব্যতিক্রম ছিলেন ওপেনার মাহমুদুল হাসান জয়। তবে লম্বা করতে পারেননি ইনিংস। তার ব্যাট থেকে আসে সর্বোচ্চ ৩০ রান। শেষ দিকে ব্যাট হাতে তাইজুল ১৬ রান না করলে বাংলাদেশের মোট সংগ্রহ ১০০ পেরুতো না। মাঝে মেহেদি হাসান মিরাজ ১৩ ও মুশফিকুর রহিম ১১ রান করেন। আর কেউ পৌঁছাতে পারেননি দুই অঙ্কের ঘরে। অভিষিক্ত জাকের আলী অনিকও হাল ধরতে পারেননি বিপদে। ২ রান করে ফেরেন তিনি।

এদিন তাইজুলের মতো বল হাতে কীর্তি গড়েন কাগিসু রাবাদাও। কেশব মহারাজ-মুল্ডারের সঙ্গে যৌথভাবে নেন সর্বোচ্চ ৩ উইকেট। ৬৫তম টেস্ট খেলতে নেমে কীর্তি গড়েন ৩০০ উইকেটের। এই মিরপুর শের-ই-বাংলায় শুরু হয়েছিল তার পথচলা।