এক’শ রানের লিড পেলেই খুশি হতো দক্ষিণ আফ্রিকা। সেখানে ২০২ রান, অনেকটাই আকাশের চাঁদ হাতে পাওয়ার মতো। সেই ব্যবস্থা তাদের করে দিয়েছেন কাইল ভেরায়েন্নে। ১১৪ রানের অনবদ্য এক ইনিংস উপহার দিয়ে দলকে এমন জায়গায় নিয়ে গেছেন যেখানে একটা সময়ে পৌঁছানোর চিন্তা করাও দুরূহ ব্যাপার ছিল।
সপ্তম উইকেটে উইয়ান মুল্ডারকে সঙ্গে নিয়ে ১১৯ রানের জুটি চিত্রনাট্য বলদে দেয়। যেখানে মুল্ডারের অবদান ৫৪। বাকিটা ভেরায়েন্নের। লেট অর্ডার ব্যাটসম্যানদের নিয়ে বাকিটা পথ পেরিয়ে ডানহাতি ব্যাটসম্যান তুলে নেন ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় টেস্ট সেঞ্চুরি। শতরানের আগে ৫ উইকেট হারানো দক্ষিণ আফ্রিকার হয়ে সাতে ব্যাটিংয়ে আসেন ভেরায়েন্নে। সেখান থেকে অনবদ্য ১১৪ রানের ইনিংস খেলে দলকে নিরাপদ জায়গায় নিয়ে যান। ১৪৪ বলে ১৪ চার ও ২ ছক্কায় সাজানো ইনিংসটি ছিল দ্যুতিময়। দিন শেষে জানালেন ক্যারিয়ারের খেলা অন্যতম সেরা ইনিংটি মিরপুরের ২২ গজে খেলেছন।
‘এটা নিশ্চিতভাবেই আমার টেস্ট ক্যারিয়ারের সেরা ইনিংস। সম্ভবত আমার খেলা কঠিনতম কন্ডিশন। আমরা ঘরের মাঠে এতোটা লম্বা সময় ধরে স্পিন ট্র্যাকে খেলে অভ্যস্ত নই। ৯০ শতাংশর আশেপাশের সময়ে আমাকে স্পিন খেলতে হয়েছে। সবকিছু তড়িৎ গতিতে হয়েছে। যেভাবে ইনিংস এগিয়েছে আমরা রিসেট করার সুযোগ পাইনি।’
সেঞ্চুরি নিয়ে আলাদা করে বলেছেন, ‘ম্যাচের মুহূর্ত, কন্ডিশন এবং পরিস্থিতি বিবেচনায় এরকম একটি সেঞ্চুরির প্রয়োজনীয়তা ছিল। কঠিন উইকেট এবং প্রতিদ্বন্দ্বীপূর্ণ আবহ, দুইয়ে মিলিয়ে পরিস্থিতি কঠিন ছিল। এজন্য বলছি আমার খেলা সবচেয়ে ফলপ্রসূ ইনিংস। সেঞ্চুরির প্রভাব স্কোরবোর্ডে চোখ বুলালেই বোঝা যাবে। এজন্য আমি খুশি। নিউ জিল্যান্ডে আমার প্রথম সেঞ্চুরি ছিল। সেটা ভিন্ন কিছু। এখানে আরেকটি হলো। নিঃসন্দেহে ভালো লাগছে।’
পুরো ইনিংসে ২৯ সুইপ শট খেলেছেন ভেরায়েন্নে। যেখানে রান পেয়েছেন ৪৯। স্লগ সুইপে পাঁচ চার ও এক ছক্কা হাঁকিয়েছেন। ভেরায়েন্নে জানিয়েছেন, বাংলাদেশের সাবেক ব্যাটিং কোচ অ্যাশলে প্রিন্স তার খেলায় বড় প্রভাব রেখেছেন। প্রিন্স দক্ষিণ আফ্রিকার ব্যাটিং কোচ হিসেবে কাজ করছেন। তাকে নিয়ে ভেরায়েন্নে বলেছেন, ‘উয়ান মুল্ডার ও আমি আজ সকালে কথা বলছিলাম। আমরা প্রিন্সের সঙ্গে কথা বলছিলাম, এখানে সফল হওয়ার জন্য কি করা যেতে পারে। সে আমাদেরকে কিছু বলেছে যা ব্যাটিংয়ে সাহায্য করেছে। তবে সুইপ নিয়ে বাড়তি কিছু বলেনি বা সেদিকে জোর দিতে বলেনি।’
টপ অর্ডার ও মিডল অর্ডার যেখানে ব্যর্থ হয়েছে সেখানে লেট অর্ডারে ভেরায়েন্নে দারুণ দৃঢ়তা দেখিয়েছেন। নিজের ব্যাটিং পরিকল্পনা নিয়ে সেঞ্চুরিয়ান বলেছেন, ‘দুটি পথ খোলা ছিল, রান তুলতে চেষ্টা করে যাওয়া। দুই কেবল লড়াই করা। আমরা ইতিবাচক মানসিকতায় সেই কাজটাই করেছি। এজন্য ভালো অবস্থানে আছি। লেট অর্ডারের ব্যাটসম্যানদের থেকেও ভালো সাড়া পেয়েছি।’
উইকেটে সামনে ব্যাটিং করা কঠিন হবে জানিয়েছে প্রোটিয়া ব্যাটসম্যান বলেছেন, ‘উইকেট গতকালের চেয়ে আজ ভালো ছিল। বল সহজে ব্যাটে আসছিল। কিন্তু দিন যত যাবে উইকেট ব্যবহার কঠিন হবে। দেখা যাক আগামীকাল কি অপেক্ষা করছে। কঠিন থেকে কঠিনতরও হতে পারে।’
হাতে ৭ উইকেট রেখে বাংলাদেশ এখনও ১০১ রানে পিছিয়ে আছে। এই ম্যাচ বাঁচাতে কঠিন লড়াই চালাতে হবে ব্যাটসম্যানদের। মুশফিক, জয়, লিটন, মিরাজ, জাকেররা সেই কাজটা করতে পারেন কিনা দেখার।