চট্টগ্রাম বিভাগীয় ক্রিকেট সংস্থার কার্যালয়, সব সুনসান; কর্মব্যস্ততা যেন টুটে গেছে এখানে। কমিটি দেওয়া হয়েছে ভেঙে। নতুন কমিটি এখনও হয়নি। সব মিলিয়ে চট্টগ্রাম আঞ্চলিক ক্রিকেট সংস্থায় বিরাজ করছে স্থবিরতা; হতাশায় দিন কাটছে কর্মকর্তা-কর্মচারী ও উদীয়মান তরুণ ক্রিকেটারদের।
চট্টগ্রাম বিভাগের ১১ জেলা থেকে ‘আগামীর ক্রিকেটারের খোঁজে’ কর্মসূচির মাধ্যমে বাছাই করা ৭০ জন উঠতি ক্রিকেটার তাদের খেলোয়াড়ি জীবন নিয়ে যে স্বপ্ন বোনা শুরু করেছিলেন, তাও এখন ম্লান।
সোমবার (২৮ অক্টোবর) কথা হচ্ছিল চট্টগ্রাম আঞ্চলিক ক্রিকেট সংস্থার সদস্য সচিব সিরাজ উদ্দিন মোহাম্মদ আলমগীরের সঙ্গে, যার কাছ থেকে শোনা যায় এই হতাশার কথা।
অবশ্য বিসিবির পরিচালক নাজমুল আবেদীন ফাহিম জানিয়েছেন, আগের কোনকিছুই এখন বিদ্যমান নেই।
ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) আঞ্চলিক ক্রিকেট সংস্থা গঠনের পর সবচেয়ে সরব ছিল চট্টগ্রাম আঞ্চলিক ক্রিকেট সংস্থা। বিভাগীয় ক্রীড়া সংস্থার মাধ্যমে বছরের শুরুতে ‘আগামীর ক্রিকেটারের খোঁজে’ একটি প্রকল্প হাতে নিয়ে কার্যক্রম এগিয়ে নেয় তারা, কিন্তু সবকিছু এখন থমকে আছে।
প্রকল্পের প্রথম ধাপে চট্টগ্রাম বিভাগের ১১টি জেলা থেকে ট্রায়ালের মাধ্যমে ৭০ জন ক্রিকেটার বাছাই করা হয়। এই ৭০ জন ক্রিকেটারকে নিয়ে দুই দিনের ও একদিনের দুটি টুর্নামেন্ট আয়োজন করার কথা ছিল। এই টুর্নামেন্ট থেকে প্রতিশ্রুতিবান ও প্রতিভাবান ৩০ ক্রিকেটারকে নিয়ে শুরু হতো মূল কার্যক্রম। এজন্য একটি আঞ্চলিক ক্রিকেট একাডেমি গঠনের সিদ্ধান্তও নেয় তারা। যেখানে এই ৩০ ক্রিকেটারকে রেখে দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছিল।
চট্টগ্রাম আঞ্চলিক ক্রিকেট সংস্থার আহ্বায়ক ছিলেন আ জ ম নাসির। আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর থেকে তিনি পলাতক। সক্রিয় আছেন সদস্য সচিব সিরাজ উদ্দিন মোহাম্মদ আলমগীর। ভেঙে দেওয়া বিভাগীয় ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক ছিলেন তিনি। এছাড়া দুই মেয়াদে বিসিবির পরিচালক হিসেবে কাজ করেছেন চট্টগ্রামের এই বরেণ্য সংগঠক।
সোমবার (২৮ অক্টোবর) সন্ধ্যায় বিভাগীয় ক্রীড়া সংস্থার অফিস কক্ষে দেখা মিললো সিরাজের। ‘আগামীর ক্রিকেটারের খোঁজে’ প্রকল্প নিয়ে এই সংগঠক বলেন, ‘চট্টগ্রাম বিভাগীয় ক্রীড়া সংস্থা থেকে আমরা আঞ্চলিক ক্রিকেট সংস্থার কার্যক্রম শুরু করেছিলাম। চট্টগ্রাম বিভাগের ১১টি জেলা থেকে আমরা বিভিন্ন বয়সের ৭০ জন ক্রিকেটার বাছাই করেছিলাম। আমাদের রিজিওনাল ক্রিকেট অ্যাকাডেমি গঠনের পরিকল্পনা ছিল।
সিরাজ উদ্দিন মোহাম্মদ আলমগীর
‘জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামকে ঘিরে একাডেমি করার পরিকল্পনা ছিল। এখানে যে মহিলা কমপ্লেক্স আছে, ওখানে আমাদের আবাসন ব্যবস্থা আছে, ডাইনিং আছে, সব সুযোগ-সুবিধা আমাদের স্টেডিয়ামে এবং মহিলা কমপ্লেক্সে আছে। এখন আমাদের প্রয়োজন দিক-নির্দেশনা প্রয়োজন।’
শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর বিসিবিতে ব্যাপক রদবদল ঘটে। নাজমুল হাসান পাপনের বোর্ডের তৈরি আঞ্চলিক ক্রিকেট সংস্থা থাকবে কি না, সেটাও অজানা। নির্দেশনা চেয়েও বিসিবি থেকে তারা কোনো নির্দেশনা পাচ্ছেন না। অপেক্ষায় আছেন বিসিবির সিদ্ধান্তের।
সিরাজ উদ্দিন বলেন, ‘এখন আমাদের ক্রিকেট বোর্ড থেকে একটা নির্দেশনার প্রয়োজন আছে, যে সংস্থাগুলো হয়েছে সেগুলো থাকবে কি না, এগুলো পরিষ্কার না। সেই নির্দেশনা পেলে আমরা আমাদের পরবর্তী কার্যক্রম শুরু করবো। এরপর যাদের বাছাই করেছি, তাদের মধ্যে টুর্নামেন্ট আয়োজন করে যাদের প্রতিশ্রুতিবান মনে করবো, তাদের থেকে ৩০ জনের স্কোয়াড করবো। ৩০ জনকে রিজিওনাল ক্রিকেট একাডেমিতে রেখে দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা করবো।’
ক্রিকেট বোর্ডের কাছে আমরা নির্দেশনা চেয়েছি, কিন্তু আজ অবধি কোনো নির্দেশনা পাইনি। নির্দেশনা পেলে আমরা আমাদের পরবর্তী কর্মপরিকল্পনা শুরু করবো। আমরা জানতে চেয়েছি, সংস্থাগুলো থাকবে কি না। পরিবর্তিত ক্রিকেট বোর্ডের পরিকল্পনা কী? আমাদের কাজ অনেক দূর এগিয়ে গিয়েছে। ৩-৪টি সভা করেছি, বোর্ডের যে সাধারণ সভা হয়েছিল সেখানে সিদ্ধান্ত হয়েছিল প্রত্যেক অ্যাসোসিয়েশনকে ২০ লাখ টাকা করে দেবে। সেটি এখনো বাস্তবায়ন হয়নি- যোগ করেন সিরাজ।
পাপন বিসিবি সভাপতি থাকাকালীন বার্ষিক সাধারণ সভায় (এজিএমে) সিদ্ধান্ত হয়, প্রতিটি আঞ্চলিক ক্রিকেট সংস্থাকে দেওয়া হবে ২০ লাখ টাকা করে। সেটি এখন পর্যন্ত কোনো সংস্থা পায়নি। পৃষ্ঠপোষক প্রতিষ্ঠানের অর্থের মাধ্যমে কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছিল চট্টগ্রাম আঞ্চলিক ক্রিকেট সংস্থা। কিন্তু এখন সবই থমকে আছে। সবচেয়ে বেশি হতাশায় উঠতি ক্রিকেটাররা। যারা বড় স্বপ্ন নিয়ে অংশ নিয়েছিলেন ট্রায়ালে। এই ক্রিকেটাররা নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন কিন্তু কোনো সুখবর পাচ্ছেন না।
সিরাজের ভাষ্য, তারা যোগাযোগ রাখছে। কিছুটা হতাশ। তারা চায় যে এই কর্মকাণ্ডটা এগিয়ে যাক। ক্রিকেট বোর্ডের যে বয়সভিত্তিক পরিকল্পনাগুলো আছে, এর বাইরে কিন্তু আর কিছু নেই। বিশেষ করে লংগার ভার্সনে আর কোনো পরিকল্পনা নেই। বিশেষ করে আমরা ৭০ জন বাছাই করেছি তাদের মধ্যে দুই দিনের ও একদিনের ক্রিকেট আয়োজন করবো। যাতে শুরু থেকেই তারা লংগার ভার্সনের খেলে বেড়ে ওঠে।
বয়সভিত্তিক কিংবা উঠতি ক্রিকেটারদের নিয়ে বোর্ডের দীর্ঘমেয়াদী প্রকল্পগুলো ঢাকাকেন্দ্রিক। সেটি সারা দেশে ছড়িয়ে দিতে গঠিত হয়েছিল আঞ্চলিক সংস্থা। এর মাধ্যমে দারুণ উদ্যোগ নিয়েছিল চট্টগ্রাম। কিন্তু এখন সব দিশাহীন।
বিসিবি পরিচালক নাজমুল আবেদীন ফাহিম রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘আমি যতটুক জানি এখন তো কোনো সংস্থাই নেই। স্বাভাবিকভাবে ওদের কার্যক্রম থাকবে না। এখন কে কার কাছে কী চাইবে (বিসিবির কাছে নির্দেশনা চাওয়া নিয়ে)? এখন তো কেউ নেই। আগের বলে এখন কিছু নেই। এখন এগুলো (সংস্থা) কোনো কিছু বিদ্যমান নেই। সব তো বাদ দেওয়া হয়েছে।’