খেলাধুলা

তামিম কি বিসিবিতে আসছেন, কী বলছেন চট্টগ্রামের সংগঠকরা?

অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার কয়েক দিন পার হয়েছে মাত্র তখন। যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ মিরপুর শের-ই-বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়াম পরিদর্শন করবেন। সংবাদকর্মীরাসহ বিভিন্ন অঙ্গনের মানুষ অবস্থান করছে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) কার্যালয় ঘিরে। হঠাৎ সাঁই করে একটি গাড়ি ঢুকল, যার পেছনে ছুটে যায় সংবাদমাধ্যমের সব ক্যামেরা। সবাইকে চমকে দিয়ে গাড়ি থেকে নামলেন তামিম ইকবাল খান; দেশের ক্রিকেট ইতিহাসের অন্যতম সফল ওপেনিং ব্যাটার।

তখনই বলাবলি হচ্ছিল তামিম কি তাহলে ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদকে সঙ্গ দিতে আসছেন? পরের ঘটনা সবারই জানা। আসিফকে ‘হোম অব ক্রিকেট’ ঘুরে দেখান তামিম। বৈঠক করেন, বিসিবির বিভিন্ন বিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নানা আশ্বাসও দেন। তখন থেকে প্রশ্নটি উঁকি দেয়- তামিম কি তাহলে আসছেন বিসিবিতে? 

দলে না থাকা সত্ত্বেও জাতীয় দলের ক্রিকেটারদের নিয়ে বিসিবি প্রেসিডেন্ট ফারুক আহমেদের সঙ্গে একটি বৈঠকে তাকে দেখা যাওয়ার পর সম্ভাবনা আরও জোরালো হয়।

বিসিবিতে আসা, না-আসা নিয়ে তামিম এখনও গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলেননি। তবে নিজের জেলা চট্টগ্রাম ও চট্টগ্রাম বিভাগীয় ক্রীড়া সংগঠকদের সঙ্গে বিবিসিতে আসার ইচ্ছার কথা জানিয়ে রেখেছেন।

চট্টগ্রামের ক্রিকেট সংগঠকদের সঙ্গে কথা বলে তাদের কাছ থেকে তামিমের ইচ্ছার কথা জানা গেছে। তবে এ নিয়ে স্থানীয় সংগঠকদের রয়েছে ভিন্ন চিন্তা।

দীর্ঘদিন যারা স্থানীয় সংগঠক হিসেবে কাজ করছেন, তারা চান না চট্টগ্রাম বিভাগ কিংবা জেলা ক্রীড়া সংস্থার প্রতিনিধি হিসেবে তামিম বিসিবিতে যাক। তাদের মতে, এমন হলে সত্যিকারের সংগঠকরা বঞ্চিত হবেন।

রাইজিংবিডি ডটকম চট্টগ্রামের অন্তত তিনজন ক্রীড়া সংগঠকের সঙ্গে কথা বলেছে; যাদের কেউ পূর্বে বিসিবির পরিচালক ছিলেন, কেউবা দীর্ঘদিন ধরে স্থানীয় সংগঠক হিসেবে কাজ করে যাচ্ছেন।

হাফিজুর রহমান, যিনি সবশেষ চট্টগ্রাম জেলা ক্রীড়া সংস্থার সহ-সভাপতিও ছিলেন। তাদের এই কমিটি অন্তর্বর্তী সরকার ভেঙে দিয়েছে।

যারা দীর্ঘদিন সংগঠক হিসেবে কাজ করছেন তারাই যেন বিবিসিতে জায়গা পান, যেতে পারেন- এমনটি চান হাফিজুর রহমান।

‘চট্টগ্রাম বিভাগে যারা দীর্ঘদিন ধরে ক্রিকেটের উন্নয়নে কাজ করছেন, তাদের মধ্য থেকে যাচাই-বাছাই করে কাউকে বোর্ডে দিলে সেটাই হবে যৌক্তিক। এটা করলে ন্যায়সঙ্গতও হবে; যারা ২০-৩০ বছর কোনো কিছুর বিনিময় ছাড়া সময় দিয়েছেন, কাজ করতেছে তারা।’

হাফিজুরের ভাষ্য- প্রাপ্য অনুযায়ী একজন সংগঠকেরই যাওয়া উচিত বোর্ডে, যার প্রাপ্য তার পাওয়া উচিত। যদি আরও সিনিয়র ও আরও দক্ষ লোক থাকে তারা বিবিসিতে যাক। 

‘চট্টগ্রামের যারা সংগঠক আছেন, তাদের অনেক দুঃখ আছে, সারা জীবন কাজ করলেন কিন্তু যেতে পারলেন না। ওদের শক্তি নাই, ম্যাকানিজম নাই। নিয়মতান্ত্রিক হিসেবে আমার যা প্রাপ্য, আমাকে সমাজ, দেশ যেন তা দেয়। তাহলেই সবকিছু ভালো হবে।’

সিরাজ উদ্দিন খান আলমগীর। যিনি দুই মেয়াদে বিসিবির পরিচালক ছিলেন। প্রথম বিপিএল আয়োজনে তার ছিল অগ্রণী ভূমিকা। সবশেষ তিনি বিভাগীয় ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদকও ছিলেন। সিরাজ উদ্দিনও চান না যোগ্য সংগঠকদের জায়গায় তামিম বিসিবিতে চট্টগ্রামের প্রতিনিধিত্ব করুক।

‘আমরা দীর্ঘদিন চট্টগ্রাম বিভাগে, জেলায় কাজ করছি। বিভিন্ন টুর্নামেন্ট আয়োজন করা, বয়সভিত্তিক ক্রিকেট পরিচালনা, স্কুল ক্রিকেট পরিচালনা, বিভিন্ন প্রতিযোগিতা আয়োজন করা, খেলোয়াড় বাছাই করে ঢাকায় পাঠানো, ঢাকার বিভিন্ন লিগে তাদের সেট করে দেওয়া, এই কাজগুলো করার সময় যাদের আছে, যাদের অভিজ্ঞতা আছে; তারাই যেন জেলা বা বিভাগ থেকে প্রতিনিধিত্ব করতে পারেন।’

শাহাবুদ্দিন শামিম; সবশেষ চট্টগ্রাম জেলা ক্রীড়া সংস্থার অতিরিক্ত সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। আগের দুজনের মতো তারও একই সুর,  ‘যারা দীর্ঘদিন ধরে সংগঠক হিসেবে কাজ করছেন তাদের ক্রেকেট বোর্ডে যাওয়া উচিত।’

‘আমি তামিম ইকবালকে নিয়ে বলছি না, যারা অনেক পরিচিত, দীর্ঘদিন ক্রিকেটের সঙ্গে জড়িত আছেন, আমি অনেকের নাম জানি কিন্তু বলতে চাচ্ছি না।

শাহাবুদ্দিন শামীম বলছন, ‘জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ থেকে খেলোয়াড় কোটায় তামিম ইকবাল ‘ওকে’ (ঠিক আছে), কিন্তু সংগঠক কোটায় একজন ভালো ক্রীড়া সংগঠক, ক্রিকেট সংগঠক তার নামই যাওয়া উচিত।’

তবে তিনজনই তামিমের বোর্ডে আসার ইচ্ছাকে স্বাগত জানিয়েছেন। তারা চান- তামিম যেন জেলা বা বিভাগ থেকে না গিয়ে অন্য দুই ক্যাটাগরি (অধিনায়ক ও এনএসএসি) থেকে বিসিবিতে প্রতিনিধি হিসেবে নাম লেখান।

সিরাজ বলেন, ‘তামিম অবশ্যই আসুক- আমি আন্তরিকভাবে সেটা চাই। তবে অন্য ক্যাটাগরি যেগুলো আছে, যেখানে ফ্রি স্পেছ আছে, সেগুলো থেকে তামিমদের মতো সুপারস্টাররা যাদের বোর্ডে থাকার প্রয়োজন আছে, তারা আসুক। কোনো প্রকৃত সংগঠককে বাদ দিয়ে, ডিপ্রাইভ করে (নয়)’…’। 

শামীমের মতে, তামিমের মতো খেলোয়াড় যদি ক্রিকেট বোর্ডে আসতে চান তাহলে এটা অবশ্যই পজিটিভ দিক। তাদের বোর্ডে অবদান রাখার সুযোগ আছে। তাদের যে অভিজ্ঞতা এটা ভাগাভাগি করতে পারলে বাংলাদেশ ক্রিকেট উপকৃত হবে। তবে আমি আবারও বলছি, সেটা কোনোভাবে প্রকৃত সংগঠকদের বাদ দিয়ে যেন না হয়।’

হাফিজ বলছেন, ‘ক্রীড়া সংগঠকরা খেলোয়াড় সৃষ্টি করেন। যারা ক্রীড়া সংগঠক তারা সাবেক খেলোয়াড় হতে পারেন আবার নাও পারেন। এটা হলো আগ্রহের ব্যাপার। খেলোয়াড় হতে হবে এটা ম্যান্ডাটরি না। তামিম আন্তর্জাতিক ক্রিকেটার, এটা তার অতিরিক্ত গুণ। তিনি যদি ক্রীড়া সংগঠক হিসেবে আসতে চান, এটা খেলাধুলার জন্য মঙ্গলজনক। তবে সেটা হতে হবে যৌক্তিক (তার যোগ্যতা অনুযায়ী)।’

তামিমের মতামত জানার জন্য রাইজিংবিডি ডটকম বুধবার থেকে যোগাযোগের চেষ্টা করেছে; হোয়াটসঅ্যাপে বার্তা দেওয়া হয়েছে, তবে মেলেনি তার কোনো সাড়া। 

চট্টগ্রাম বিভাগ থেকে বর্তমান বোর্ডে পরিচালক আছেন দুজন। সাবেক ক্রিকেটার আকরাম খান সক্রিয় থাকলেও আরেক পরিচালক আ জ ম নাসির শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর থেকে পলাতক।

চট্টগ্রামের স্থানীয় সংগঠকদের চাওয়া যৌক্তিক কি না, এমন প্রশ্ন করে আকরাম খানের মন্তব্য জানতে চাওয়া হয়েছিল। তাতে তিনিও সাড়া দেননি।