বাংলাদেশের তখন ১ উইকেট বাকি। দিনের খেলারও এক-দুই ওভার বাকি ছিল। ড্রেসিংরুমের পাশে তখন চলছিল পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানের প্রস্তুতি। তারাও ধরে নিয়েছে এই ম্যাচ আরও একদিন যাবে তা কল্পনাতীত। হয়েছেও তাই।
শেষ ব্যাটার হিসেবে নাহিদ রানা আউট হতেই শুরু হয় প্রোটিয়া শিবিরের উল্লাস। সাগরিকার পাড়ে সাদাপোশাকে টেস্ট ইতিহাসে নিজেদের সবচেয়ে বড় জয়ের পর যেন ডানা মেলে উড়ছিল অ্যাইডেন মার্করামের দল।
একদিনে দুইবার করে আউট হয়ে বাংলাদেশ এই ম্যাচে হেরেছে ইনিংস ও ২৭৩ রানের ব্যবধানে। দুই ইনিংস মিলিয়েও বাংলাদেশ ফলোঅন এড়াতে পারেনি। বাকি ছিল ৭৪ রান।
প্রোটিয়ারা এমন ব্যবধানে এর আগে কখনো না জিতলেও বাংলাদেশের এর চেয়ে বড় ব্যবধানে হারের রেকর্ড রয়েছে। ২২ বছর আগে ঢাকায় ইনিংস ও ৩১০ রানের ব্যবধানে হারের রেকর্ড আছে স্বাগতিক শিবিরের। এমন ফল নিশ্চয় ভুলে যেতে চাইবে বাংলাদেশ।
জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে টস জিতে ব্যাটিং করতে নেমে ৬ উইকেটে ৫৭৫ রান করে দক্ষিণ আফ্রিকা। বাংলাদেশ দ্বিতীয় দিন শেষ বিকেলে খেলতে নেমে মাত্র ৩৮ রানে হারিয়ে ফেলে ৪ উইকেট। দ্বিতীয় দিন উইকেটের মিছিলে ১৫৯ রানে থামে নাজমুল হোসেন শান্তদের প্রথম ইনিংস।
দ্বিতীয় সেশনের শুরুতে ফলোঅন করে বাংলাদেশকে আবার ব্যাটিংয়ে পাঠায় প্রোটিয়ারা। বাকি দুই সেশনে বাংলাদেশ হারিয়ে ফেলে ১০ উইকেট। সাদমান ইসলাম, মাহমুদুল হাসান জয়, জাকির হাসান ও হাসান মাহমুদ ছাড়া বাকি ব্যাটাররা একদিনে আউট হয়েছে দু’বার করে।
দ্বিতীয় ইনিংসে ৪৭ রানে বাংলাদেশ হারিয়ে ফেলে ৫ উইকেট। তখনই তৃতীয় দিনেই হার এক প্রকার নিশ্চিত হয়ে যায় । দুই ওপেনার মাহমুদুল হাসান জয় (১১) দুই অঙ্কের ঘর পেরোলেও সাদমান ইসলাম আউট হয়েছেন ৬ রানে। তিনে নামা জাকির হাসান ফেরেন ৭ রানে।
চারে নামা মুমিনুল হক ফেরেন ০ রানে। একই সেশনে তিনি প্রথম ইনিংসে আউট হয়েছিলেন ৮২ রানে। এদিন মোহাম্মদ আশরাফুলের সঙ্গে যৌথভাবে সর্বোচ্চ ষোলো শূন্যের বাজে রেকর্ড গড়েন। ২ রান আসে মুশফিকুর রহিমের ব্যাট থেকে। প্রথম ইনিংসে করেছিলেন শূন্য।
মুশফিক ফেরার পর মেহেদী হাসান মিরাজকে নিয়ে এগোনোর চেষ্টা করছিলেন শান্ত। মিরাজের ৬ রানের আউটে ভাঙে সেই প্রতিরোধ। তার আউটের পর দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৩৬ রান করা শান্তও পথ ধরেন সাজঘরের। তাইজুলের ব্যাট থেকে আসে ১ রান।
এরপর মাহিদুল ইসলাম অঙ্কন-হাসান মাহমুদরা জয়ের ব্যবধান কমান। অঙ্কন ২৯ ও হাসান ৩০ বলে ৩৮ রান করে অপরাজিত থাকেন। শেষ ব্যাটার হিসেবে শূন্যরানে ফেরেন নাহিদ। কেশব মহারাজ ৫ ও সেনুরান মুত্তুসামি ৪ উইকেট নেন।
অথচ যে উইকেটে সর্ষেফুল দেখেছে বাংলাদেশের বোলাররা এবং দক্ষিণ আফ্রিকার ব্যা্টাররা পেয়েছিল ব্যাটিং স্বর্গ, সেখানে খাবি খেয়েছে লাল-সবুজের দল। তিন প্রোটিয়া ব্যাটার টনি ডি জর্জি, ট্রিস্টান স্টাবস ও ভিয়ান মালডার পেয়েছেন সেঞ্চুরির দেখা। বাংলাদেশের একমাত্র পাওয়া তাইজুলের ফাইফার।
ম্যাচ শেষে বাংলাদেশ অধিনায়ক বলেন, ‘এটা তো অবশ্যই খুবই হতাশাজনক। এগুলো থেকে বোঝা যায় আমাদের কত উন্নতির জায়গা আছে। পাকিস্তানে ভালো ক্রিকেট খেলেই জিতেছি। মাঠে, মাঠের বাইরে অনেকগুলো জায়গা আছে যেখানে আমাদের উন্নতি করতে হবে।’