নাজমুল হোসেন শান্ত থেকে শুরু করে মেহেদী হাসান মিরাজ, ক্রিকেট বোদ্ধা থেকে ভক্ত—মনেপ্রাণে সকলেই চেয়েছিলেন একটি জয়। অবশেষে আফগানিস্তানের বিপক্ষে ঐতিহাসিক শারজায় কাঙ্ক্ষিত সেই জয় ধরা দিয়েছে। ভারত ও দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে টেস্ট আর টি-টোয়েন্টিতে ধরাশয়ী হওয়ার পর আফগানদের বিপক্ষে এই জয় যেন একদম ‘সোনায় সোহাগা।’
জয় চাওয়ার একটাই কারণ, মোমেন্টাম ফিরে পাওয়া। মাঠের পারফরম্যান্সের সঙ্গে বাইরের নানা ইস্যুতে বাংলাদেশ ক্রিকেট যেন চলছিল উদ্ভট উটের পিঠে। এক জয় আপাতত দৃষ্টি ফিরিয়ে নিয়েছে বাইশ গজে। এবার অলিখিত ফাইনালে সেটি আরও পাকাপোক্ত করার পালা।
শারজাহ ক্রিকেট স্টেডিয়ামে সোমবার (১১ নভেম্বর) বিকেল ৪টায় সিরিজ নির্ধারণী ম্যাচে মুখোমুখি হবে বাংলাদেশ-আফগানিস্তান। ১-১ সমতা থাকায় শেষ ম্যাচটি দুই দলের জন্য কার্যত অলিখিত ফাইনাল। প্রথম ম্যাচে বলে-ব্যাটে ভালো শুরুর পরও ৯২ রানের বড় হার। দ্বিতীয় ম্যাচে ৬৮ রানের দাপুটে জয়ে সিরিজে আসে সমতা।
বাংলাদেশের এখন সেই মোমেন্টাম ধরে রাখার পালা। অধিনায়ক শান্তও সতীর্থদের কাছে তাই চাইছেন। বিশেষ করে মুশফিকুর রহিমের বদলি অভিষিক্ত জাকের আলী আর বছরজুড়ে ব্রাত্য থাকা নাসুম আহমেদ যেভাবে খেলেছেন, সেটি যেন তারা ধরে রাখেন তাই চাইছেন শান্ত। দ্বিতীয় ম্যাচে জয়ের পর বাংলাদেশ অধিনায়ক দুজনের প্রশংসার সঙ্গে এমন পারফরম্যান্স ধরে রাখার আহ্বান জানিয়েছেন।
‘ওরা যেভাবে শেষ করেছে, সেটার পর আমরা মোমেন্টামটা পেয়ে গিয়েছি। আমরা জাকের এবং লোয়ার মিডল অর্ডারে যারা ব্যাটিং করে, যেমন নাসুম, ওদের কাছে এটাই চাইব। ওরা আজ যেভাবে খেলেছে, আমি খুবই খুশি। আশা করছি, ওরা এভাবেই খেলে যাবে।’
সিরিজের তৃতীয় ও শেষ ম্যাচে বাংলাদেশ একাদশে পরিবর্তন আসার সম্ভাবনা খুবই ক্ষীণ। তিন পেসার তাসকিন আহমেদ, মোস্তাফিজুর রহমান আর শরিফুল ইসলামের সঙ্গে স্পিনে নাসুম আহমেদের সঙ্গে মেহেদী হাসান মিরাজেই ভরসা রাখবে টিম ম্যানেজমেন্ট।
দ্বিতীয় ম্যাচে ওপেনিংয়ে ঝড়ো শুরুর পর তানজীদ হাসান তামিম মোমেন্টাম ধরে রাখতে পারেননি। আরেক ওপেনার সৌম্য সরকার থিতু হয়েও দ্বিতীয়বারের মতো লম্বা করতে পারেননি ইনিংস। এই দুজনের কাছে লম্বা ইনিংসের চাওয়া থাকবে টিম ম্যানেজমেন্টের এটা নিশ্চিত। রানের দেখা পাচ্ছেন শান্ত, এটাও স্বস্তির। টপ অর্ডার রানের দেখা পেলেও মিডল অর্ডার দিচ্ছে অস্বস্তি।
বিশেষ করে তাওহীদ হৃদয়-মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ টানা দুই ম্যাচে ব্যর্থ হওয়ার ভুগতে হয়েছে ব্যাটিংয়ে। প্রথম ম্যাচে কেউ হাল ধরতে পারেননি; দ্বিতীয় ম্যাচে জাকের-নাসুমের দৃঢ়তায় এসেছে সাফল্য। ব্যাটিং অর্ডারে উপরে উঠে এলেও মিরাজ ফেলতে পারছেন না প্রভাব। আউট হয়ে যাচ্ছেন গুরুত্বপূর্ণ সময়ে। বোলিং বিভাগ তাদের সেরাটাই দিয়ে যাচ্ছে, প্রয়োজন এখন ব্যাটিংয়ে দৃঢ়তা।
দুই ম্যাচেই টস ভাগ্য গড়ে দিয়েছে ম্যাচের। শারজাহর মন্থর উইকেটে দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাটিং করা কার্যত যুদ্ধের সমান। দুই ম্যাচেই আগে ব্যাটিং করা দল শেষ হাসি হেসেছে। তৃতীয় ম্যাচেও টস রাখবে গুরত্বপূর্ণ ভূমিকা। বাংলাদেশ অধিনায়কও নিশ্চয় চাইবেন ম্যাচের আধঘণ্টা আগেই জয়ের চিত্রনাট্য লিখে রাখতে। আগে কিংবা পরে ব্যাটিং, টসের ভাগ্য বদলে দিতে পারে মাঠের পারফরম্যান্স। তবে টস তো আর কারো হাতে থাকছে না!
তবে শঙ্কার জায়গা বাংলাদেশ অধিনায়ককে ঘিরে। দ্বিতীয় ম্যাচে পাওয়া চোট নিয়ে শেষে বলেছিলন, ‘একটু ভালো অনুভব করছি। তবে একটু সমস্যাও আছে। আমাকে পরের ম্যাচ পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে।’
সিরিজের আগে চোটে ছিটকে যান লিটন দাস, মাঝে মুশফিকুর রহিম আর এখন শঙ্কায় শান্ত। এখন পর্যন্ত টিম ম্যানেজমেন্ট শান্তর চোট নিয়ে নিশ্চুপ। ধরে নেয়া যেতে পারে শান্ত ফিট। টস পর্যন্ত অপেক্ষা করা ছাড়া উপায় নেই। শান্ত যদি ছিটকে যান শেষ মুহুর্তে বাংলাদেশ মাঠে নামার আগেই খাবে ভীষণ ধাক্কা।