খেলাধুলা

মাহমুদউল্লাহর আক্ষেপ মাখা ইনিংসে স্বস্তির পরশ

সেঞ্চুরির খুব কাছে ছিলেন। ইনিংসের শেষ বলে ৩ রানের সমীকরণ মেলাতে পারলেই তিন অঙ্ক ছোঁয়া হয়ে যেত মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের। অন্যদিকে আজমতউল্লাহ ওমারজাই অপেক্ষা ছিলেন ওয়ানডে ক্রিকেটে প্রথম ৫ উইকেটের। শেষ বলে কার মুখে হাসি ফুঁটবে সেটা দেখার অপেক্ষায় ছিল গোটা শারজাহ।

ভাগ্যদেবী কারও পাশেই থাকলেন না। কারও মুখেই ফুঁটল না হাসি। মাহমুদউল্লাহ সেঞ্চুরির খুব কাছে গিয়েও সেঞ্চুরির ফুল ফোঁটাতে পারলেন না। আজমতউল্লাহও পেলেন না ফাইফার। ৯৮ রানের অনবদ্য, দৃষ্টিনন্দন এক ইনিংস খেলে মাহমুদউল্লাহ নিজের মান রাখলেন। অভিজ্ঞতার শোধ মিটিয়ে দলকে নিয়ে গেলেন নিরাপদ স্থানে।

টস জিতে আগে ব্যাটিং করতে নেমে বাংলাদেশের স্কোর ৮ উইকেটে ২৪৪। ৭২ রানে ৪ উইকেট হারিয়ে বিপদে পড়া বাংলাদেশ উদ্ধার হয় মাহমুদউল্লাহ ও মিরাজের ব্যাটে। দুজন ১৮৮ বলে ১৪৫ রানের জুটি গড়েন যা শারজাহতে যেকোনো উইকেটে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ রান। উইকেটে ব্যাটিং সহজ ছিল না। আফগানিস্তানের বোলিংও ছিল আঁটসাঁট। দুয়ে মিলিয়ে কঠিন পরীক্ষা দিতে হয় মিরাজ ও মাহমুদউল্লাহকে।  মাহমুদউল্লাহ তা-ও মিরাজের চেয়ে একটু এগিয়ে ছিলেন। ফিফটি পেয়েছেন ৬৩ বলে। যেখানে পৌঁছতে মিরাজের লেগেছিল ১০৬ বল। ফিফটির পর আক্রমণের ধার বাড়িয়ে মাহমুদউল্লাহ সেঞ্চুরির দিকে এগিয়ে যান। কিন্তু বাড়তি ডট বল খেলার কারণে শেষ পর্যন্ত কঠিন লড়াই করতে হয় তাকে।

সঙ্গে যোগ হয় তার হ্যামস্ট্রিং চোট। ইনিংসের শুরুতে ৪ রানে থাকা অবস্থায় মাহমুদউল্লাহর কোমড়ে ব্যথা শুরু হয়। ব্যাকফুটে গিয়ে একটি শট খেলতে গিয়ে কোমড়ে টান পড়ে। মাঠেই পেইনকিলার নিয়ে আবার ব্যাটিং শুরু করেন। কিন্তু জড়তা কাটছিল না। ফিফটির পর হ্যামস্ট্রিং চোটে রানিং বিটিউন দ্য উইকেটে সমস্যা বাড়তে থাকে। তবুও চেষ্টার কমতি রাখেননি অভিজ্ঞ ব্যাটসম্যান। নিবেদনে রাখেননি ঘাটতি। প্রাণান্তকর চেষ্টায় নিজের রান বাড়িয়েছেন, দলের পুঁজি বাড়িয়েছেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত ২ রানের আক্ষেপে থাকতে হয়। ক্যারিয়ারের চতুর্থ ওয়ানডে সেঞ্চুরি থেকে মাত্র ২ রান দূরে থাকতে রান আউট হয়ে সাজঘরে ফেরেন।

তার অসামান্য ইনিংসকে মূল্যায়ন করে আফগানিস্তানের ক্রিকেটাররাও তাকে দিয়েছেন বাহবা। সাজঘরে ফেরার পথে নবী, রহমত শাহ, রহমানউল্লাহরা তাকে অভিনন্দন জানিয়েছেন। কিন্তু সেঞ্চুরির অক্ষেপ, না পাওয়ার কষ্ট, মাইলফলক ছুঁতে না পারার যন্ত্রণা স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছিল। তাতে কি নিজেকে ফর্মে ফেরানোর মিশনে মাহমুদউল্লাহ সফল তা বলাই যায়।

শেষ চার ওয়ানডে ইনিংসে রান ছিল যথাক্রমে ০, ১, ২ ও ৩। মাহমুদউল্লাহ ছিলেন প্রবল চাপে। ঊনচল্লিশ ছোঁয়ার অপেক্ষায় থাকা মাহমুদউল্লাহকে রান না পেলেই কড়া সমালোচনায় বিদ্ধ হতে হয়। এবারও তার ব্যতিক্রম হলো না। আফগানিস্তানের বিপক্ষে সিরিজ নির্ধারণী ম্যাচে মাহমুদউল্লাহ দল থেকে বাদ পড়তে পারেন তেমন শোরগোলও শুরু হয়ে গিয়েছিল। খাদের কিনারায় দাঁড়িয়ে মাহমুদউল্লাহ ঘুরে দাঁড়ালেন। তৃতীয় ওয়ানডেতে খেললেন ৯৮ রানের ঝকঝকে ইনিংস।

এই ইনিংস দিয়ে শুধু সমালোচকদের মুখই বন্ধ করলেন না, নিজেকে ফিরে পাওয়ার আনন্দও পেয়েছেন নিশ্চয়ই।