রীতিমতো চোখ ধাঁধিয়ে দেওয়া এক ম্যাচ। রানের উৎসব। চার-ছক্কার বৃষ্টি। ব্যাটসম্যানদের ব্যাটে রানের ফুলঝুরিসহ কতো কী!
টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে সব সম্ভব, কথাটার প্রচলন আছে। তাই বলে ব্যাটসম্যানরা যেভাবে চাইবে সেভাবেই রান করবে, বোলাররা কেবল চেয়ে চেয়ে দেখবে তা কী হয়?
এমন কিছুই তো হলো দক্ষিণ আফ্রিকার জোহানেসবার্গে। যেখানে ভারত স্রেফ উড়ল। দক্ষিণ আফ্রিকা চেয়ে চেয়ে দেখল। সিরিজ নির্ধারণী ম্যাচ। উত্তেজনা ছড়াবে, রোমাঞ্চ তৈরি করবে, নখ কামড়ানো মুহূর্ত থাকবে এমনটাই প্রত্যাশিত ছিল। হ্যাঁ, হলো ঠিকই। কিন্তু সবটাই ভারতের ব্যাটিং ইনিংসে। দক্ষিণ আফ্রিকার ব্যাটিং ইনিংসটা তো নিরামিষ!
টস জিতে ব্যাটিংয়ে নেমে ভারত যা করলো তা রীতিমত বলিউডের বক্স অফিস হিট কালেকশন। দুই ব্যাটসম্যানের সেঞ্চুরি, রেকর্ড দুই’শ রানের জুটি, ১৭ চার ও ২৩ ছক্কার ইনিংস। তাতে ভারতের রানটা হলো, ১ উইকেটে ২৮৩।
পাওয়ার প্লে’র ৬ ওভারে রান ৭৩। ১০ ওভারে ১২৯। আর শেষ ১০ ওভারে হলো ১৫৪। ওভার প্রতি গড় রান ১৪.১৫, যা টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে সর্বোচ্চ। যদিও ভারতের ইনিংসে বিশ রান ছোঁয়া ওভার হয়েছে পাঁচটি। আবার দশের নিচে রান হয়েছে চারটি ওভারে।
দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে এটাই সর্বোচ্চ রানের দলীয় ইনিংস। ২০০৭ সালে শ্রীলঙ্কা কেনিয়ার বিপক্ষে ২৬০ রান করেছিল। ভারতের এটি টি-টোয়েন্টিতে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ দলীয় রান। কিছুদিন আগে বাংলাদেশের বিপক্ষে ৬ উইকেটে ২৯৭ রান করেছিল তারা। আইসিসির পূর্ণ সদস্য দুই দেশের লড়াইয়ে সর্বোচ্চ দলীয় রানের দুটিই ভারতের দখলে।
স্যামসন চাপে ছিলেন কিনা বলা মুশকিল। এই সিরিজের আগে বাংলাদেশের বিপক্ষে সেঞ্চুরি পেয়েছিলেন। দক্ষিণ আফ্রিকা গিয়েই প্রথম টি-টোয়েন্টিতে হাঁকিয়েছিলেন ১০৭ রানের ইনিংস। পরের দুই ইনিংসে ডাক। আজ আবার মনে হয় দেয়ালে পিঠ ঠেকেছিল। নয়তো ৫৬ বলে ১০৯ রানের ইনিংস কি আর আসে? ৬ চার ও ৯ ছক্কায় ১৯৪.৯৪ স্ট্রাইক রেটে সাজানো ইনিংসটি স্রেফ অনবদ্য।
তার চেয়েও এগিয়ে ছিলেন তৃতীয় ম্যাচের নায়ক তিলক ভার্মা। ৪৭ বলে ১২০ রান। ৯ চারের সঙ্গে ১০ ছক্কা। স্ট্রাইক রেট ২৫৫.৩১। নিজ থেকে তিনে খেলতে চাওয়া তিলক টানা দুই ম্যাচে সেঞ্চুরি তুলে বুঝিয়ে দিয়েছেন মনের জোর আর নিজের ওপর বিশ্বাস থাকা কতটা জরুরি।
প্রোটিয়া বোলারদের পরপর দুই ম্যাচে তুলোধুনো করেছেন, ক্ষত মনে রাখবে অনেক দিন। দুই সেঞ্চুরিয়ান ২১০ রানের অবিচ্ছিন্ন জুটি গড়েছিলেন যা ভারতের যেকোনো উইকেটে সর্বোচ্চ, দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে সর্বোচ্চ এবং দ্বিতীয় উইকেট জুটিতে টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটেই সর্বোচ্চ।
আউট হওয়া ব্যাটসম্যান অভিষেক শর্মার ইনিংস ভুলে গেলে চলবে না। ১৮ বলে ৩৬ রান করেন ২ চার ও ৪ ছক্কায়।
ব্যাটসম্যানদের এমন দাপুটে দিনে বোলাররা বেহিসেবি হবে সেটাই স্বাভাবিক। প্রোটিয়া অধিনায়ক সাত বোলার ব্যবহার করেছিলেন। সর্বনিম্ন ১ ওভার করা স্টাবসও নিজের বোলিংয়ে দিয়েছেন ২১ রান। এছাড়া সবচেয়ে বড় ঝড়টা গেছে সিম্পালার উপর। ৪ ওভারে ৫৮ রান দিয়েছেন। এছাড়া জানসেন, কোর্টেজা, সিমেলেনে ও মহারাজ ৪০ এর ওপর রান দিয়েছেন।
লক্ষ্য তাড়ায় ১৪৮ রানে থেমে যায় দক্ষিণ আফ্রিকা। ১৩৫ রানের জয়ে ৩-১ ব্যবধানে সিরিজ নিশ্চিত করে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন ভারত। টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে দক্ষিণ আফ্রিকার যা সবচেয়ে বড় পরাজয়। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের পর এবারই দুই দল মুখোমুখি হয়েছিল। ভারত সেখানে নিজেদের শ্রেষ্ঠত্ব বেশ ভালোভাবেই দেখাল।
দক্ষিণ আফ্রিকা প্রথম ৩ ওভারেই ম্যাচ হেরে যায়। ১০ রান তুলতেই তারা ৪ ব্যাটসম্যানকে হারায়। সেখান থেকে আর ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি। স্টাবসের ২৯ বলে ৪৩, মিলারের ২৭ বলে ৩৬ ও জানসেনের ১২ বলে ২৯ রান পরাজয়ের ব্যবধান কমায় মাত্র।
আরশদীপ ২০ রানে ৩ উইকেট নিয়ে ছিলেন ভারতের সেরা বোলার। ২টি করে উইকেট নেন বরুণ চক্রবর্তী ও অক্ষর পাটেল।
ম্যাচসেরার পুরস্কার পেয়েছেন তিলক ভার্মা। ১২ উইকেট নিয়ে সিরিজ সেরা বরুণ চক্রবর্তী।